দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারির সামনে কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র
পাঁচ বছর কাজ করেও আয় বাড়েনি। মাসে ১৪-১৫ দিনের বেশি কাজও মেলে না। রোজগার গড়ে মাসে চার হাজার টাকা। সংসার চলে না। এমনটাই অভিযোগ সগড়ভাঙার দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারির অস্থায়ী কর্মীদের বড় অংশেরই। সোমবার প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন দফতরের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ অবশ্য বলেন, “বন্ধ হওয়া ডেয়ারিটি আমরাই চালু করেছিলাম। কর্মীদের দাবিদাওয়ার বিষয়টি নিয়ে কিছু জানতাম না। এখনই বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।” দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, রাতেই বিষয়টি নিয়ে খোঁজখবর শুরুও করেছেন স্বপন।
শিল্পাঞ্চলে দুধ ও দুগ্ধজাত সামগ্রীর জোগান দিতে ১৯৭২-এ দুর্গাপুর স্টেট ডেয়ারি চালু হয়। কর্মীদের অভিযোগ, পরিচালনাগত ত্রুটির জন্য ডেয়ারিটি রুগ্ণ হতে শুরু করে। ২০১১-র মে মাসে যান্ত্রিক গোলমালের জেরে দুধ প্রক্রিয়াকরণ পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। তার পরে শুধু হরিণঘাটা থেকে দুধ এনে সরবরাহ করা হত। ২০১২-র এপ্রিলে দুধ সরবরাহ বন্ধ করার সরকারি নির্দেশিকা জারি হয়। বন্ধ হয় ডেয়ারির কাজকর্ম। ২০১৪-য় প্রাণিসম্পদ দফতরের তৎকালীন প্রতিমন্ত্রী স্বপন ডেয়ারিটি নতুন করে চালু করতে উদ্যোগী হন। বরাদ্দ করা হয় প্রায় আট কোটি টাকা। সে টাকায় প্রয়োজনীয় যন্ত্র বসানো ও পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হয়। শেষমেশ ২০১৭-য় ডেয়ারিটি ফের চালু হয়। ২০১৮-র অক্টোবরে বাণিজ্যিক ভাবে আইসক্রিম উৎপাদন শুরু করে মাদার ডেয়ারি।
কর্মীরা জানান, মূলত অস্থায়ী কর্মীদের দিয়েই চলছে ডেয়ারিটি। আগে ৬০ জন থাকলেও এখন তা কমে ৪০ হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে তাঁরা মাসে অন্তত ২৬ দিন কাজের দাবি জানাচ্ছেন। অস্থায়ী কর্মী তোফাজ্জল হোসেন মোল্লা বলেন, “দৈনিক ৩৭৬ টাকা মজুরি পাই। গড়ে সর্বোচ্চ ১৫দিন কাজ পাওয়া যায়। কোনও মাসে এক এক জন ১২ দিনও কাজ পান। মাসে অন্তত ২৬ দিন কাজ পেলে কিছুটা সুরাহা হয়।” তিনি জানান, আগে কখনও কখনও গ্রীষ্মে আইসক্রিমের চাহিদা বাড়লে দু’পালিতে (শিফ্ট) কাজ পাওয়া যেত। তাতে রোজগার কিছুটা বাড়ত। এখন তা-ও হয় না।
ডেয়ারিটির তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের সদস্য গোপীনাথ দাস জানান, সম্প্রতি তৃণমূলের নবজোয়ার যাত্রা দুর্গাপুর থেকে বাঁকুড়া যাওয়ার পথে দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তাঁরা দেখা করে সমস্যার কথা জানাবেন বলে ভেবেছিলেন। কিন্তু পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। গোপীনাথ বলেন, “আমাদের সমস্যার কথা কাকে বলব, সেটাই বুঝতে পারছি না।” নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডেয়ারির এক আধিকারিক জানান, তাঁদের কিছু করণীয় নেই। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশ অনুযায়ী পদক্ষেপ করেন তাঁরা।
এ দিকে, রাজনৈতিক তরজাও শুরু হয়েছে। বিজেপির আসানসোল সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি চন্দ্রশেখর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “সর্বত্রই এ ভাবে শোষণ চলছে। সাধারণ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছেন আর শাসক দলের নেতাদের পকেট ভারী হচ্ছে।” সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য পঙ্কজ রায় সরকার বলেন, “ ওখানে বেছে বেছে তৃণমূলের কর্মীদেরই কাজে ঢোকানো হয়েছিল। তাঁদেরও ঠিক মতো মজুরি দেওয়া হয় না।” যদিও, অভিযোগে আমল দেননি তৃণমূলের অন্যতম জেলা সহ সভাপতি উত্তম মুখোপাধ্যায়। তাঁর সংযোজন: “সিপিএমের দুর্নীতির জন্যই ডেয়ারিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। নতুন করে চালু করেছে বর্তমান রাজ্য সরকার।” দুর্নীতির অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে সিপিএম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy