প্রতীকী ছবি।
আয় বাড়ানোর লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাকে কয়লা-খনি ও রেল-সহ বিভিন্ন জাতীয় সম্পদ ব্যবহারের অনুমতি দিতে চলেছে কেন্দ্রীয় সরকার। সোমবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের এই ঘোষণায় ‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন কয়লা খনি শিল্পের সঙ্গে যুক্ত শ্রমিক ও শ্রমিক সংগঠনের নেতৃত্ব। তাঁদের অভিযোগ, এই ভাবে পিছনের দরজা দিয়ে খনি শিল্পকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা শুরু হয়েছে। ‘শঙ্কিত’ রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা ইসিএল-এর কর্মীদের একাংশও। তাঁদের বক্তব্য, এই ঘোষণা কার্যকর হলে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থাগুলিকে কঠিন প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে।
কয়লা খনির সঙ্গে যুক্ত সবক’টি শ্রমিক সংগঠনের অনুমান, এর ফলে, কোল ইন্ডিয়াকে অসম প্রতিযোগিতার মধ্যে পড়তে হবে। শ্রমিক স্বার্থ সম্পূর্ণ ‘উপেক্ষিত’ থাকবে। কয়লা শিল্পে বেতনচুক্তির যে আইন আছে, তার সুযোগ শ্রমিকেরা আর পাবেন না। বেতন কাঠামো বদলে যাবে। শ্রমিক ছাঁটাইয়ে কোনও বাধা থাকবে না। স্থায়ী শ্রমিকদের ভবিষ্যৎ ‘অনিশ্চিত’ হয়ে পড়বে। কারণ, বেতন কাঠামো সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকবে না। সংস্থার মালিকই তা ঠিক করে দেবেন।
এ নিয়ে কোনও মন্তব্যে রাজি নন ইসিএল-কর্তৃপক্ষ। সংস্থার সিএমডি-এর কারিগরি সচিব নিলাদ্রী রায় বলেন, “এখনও পর্যন্ত ইসিএল-এর অধীন কোন এলাকায় নতুন করে খনি প্রকল্প তৈরি হবে, তা জানা নেই।”
‘অ্যাসেট মনিটাইজ়েশন’ প্রকল্পে জাতীয় সম্পত্তি ব্যবহারে বেসরকারি সংস্থাকে ছাড়পত্র দিতে চায় কেন্দ্র। এই প্রক্রিয়ায় চার বছরে ছ’লক্ষ কোটি টাকা উপার্জনের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য করেছে নীতি আয়োগ। যদিও কেন্দ্রের তরফে দাবি করা হয়েছে, এই প্রক্রিয়াকে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার ‘বেসরকারিকরণ’ বলা যাবে না। কারণ, নির্দিষ্ট সময়ের পরে ,ফের রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পত্তি সরকারের কাছেই হস্তান্তরিত হবে।
শ্রমিক নেতৃত্ব অবশ্য এ প্রশ্নে কেন্দ্রের সরকারকে ‘ভরসা’ করতে পারছেন না। সিটু নেতা গৌরাঙ্গ চট্টোপাধ্যায়ের মনে করেন, ‘‘এর ফলে, রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থাগুলি অসম প্রতিযোগিতায় পড়বে। অস্তিত্বের সঙ্কট তৈরি হবে। সঙ্কটে পড়বেন কর্মীরা।’’ এআইটিইউসি-র রাজ্য সম্পাদক তথা প্রাক্তন সাংসদ রামচন্দ্র সিংহ, আইএনটিইউসি অনুমোদিত ‘কোলিয়ারি মজদুর ইউনিয়ন’-এর সাধারণ সম্পাদক চণ্ডীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়, এইচএমএস-এর সাধারণ সম্পাদক শিবকান্ত পাণ্ডের মতে, খনি বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেওয়ার অর্থ—কয়লা শিল্পের ‘বেসরকারিকরণের’ পথ চওড়া করা। তেমন হলে বেসরকারি সংস্থার উপরে কোল ইন্ডিয়ার কোনও ‘নিয়ন্ত্রণ’ থাকবে না। বেসরকারি সংস্থাগুলি ফুলে ফেঁপে উঠবে। উত্তোলনের হিসেব তারা তাদের ইচ্ছামতো দেখাবে। তার ভিত্তিতেই কোল ইন্ডিয়া দাম বা রাজস্ব পাবে।
খনিকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়াকে ‘শ্রমিক-বিরোধী কাজ’ বলে মনে করেন বিএমএস-এর ইসিএল শাখার সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় পাণ্ডে। বেসরকারিকরণের চেষ্টার বিরুদ্ধে তাঁরা লড়াই করছেন বলে জানান ধনঞ্জয়বাবু। একই মন্তব্য আইএনটিটিইউসি অনুমোদিত ‘কেকেএসসি’-এর সাধারণ সম্পাদক হরেরাম সিংহের।
কেন্দ্রের ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে ইসিএল-এর কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশের মধ্যেও। তাঁরা মনে করছেন, এমন হলে আখেরে ক্ষতি-ই হবে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থাগুলির।
কী ভাবে?
এক আধিকারিক জানান, বর্তমানে ইসিএল-এ ৫৪ হাজার স্থায়ী এবং ৬০ হাজার অস্থায়ী কর্মী রয়েছেন। ইসিএল-এর অধীনে ৮৪টি খনিতে কয়লা উত্তোলন হচ্ছে। এই খনিগুলি বাদ দিয়ে নতুন এলাকায় খনি চিহ্নিত করে সেগুলি বেসরকারি সংস্থাকে ব্যবহার করতে দেওয়া হবে বলে কেন্দ্রের তরফে জানানো হয়েছে। ইসিএল-এর বেতন কাঠামোর সঙ্গে বেসরকারি সংস্থার বেতন কাঠামোর ‘আকাশ-পাতাল’ পার্থক্য রয়েছে। বেসরকারি সংস্থার কয়লা উত্তোলন খরচ অনেক কম হবে। তারা ইসিএল বা কোল ইন্ডিয়ার থেকে কম দামে বাজারে কয়লা বিক্রি করতে পারবে। এর জেরে অসম প্রতিযোগিতায় পড়তে হবে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা
উত্তোলক সংস্থাকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy