স্বামীর সঙ্গে সৌমি। ফাইল চিত্র
১০ সেপ্টেম্বর রাত থেকে ১১ সেপ্টেম্বর সকাল পর্যন্ত নানা হাসপাতাল, নার্সিংহোমে ঘুরেও ঠাঁই হয়নি। শেষে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি নেওয়ার খানিক পরেই মৃত্যু হয় প্রায় সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা সৌমি ঘোষের। এমনই অভিযোগ তাঁর পরিবারের। এনডিআরএফে কর্মরত থাকায় মৃতার স্বামী, বর্ধমানের কুড়মুনের বাসিন্দা তখন ছিলেন ভিন্ রাজ্যে। বুধবার তিনি কথা বললেন আনন্দবাজারের সঙ্গে।
আমার স্ত্রী সৌমি অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় প্রায় ছ’মাস অন্ধ্রপ্রদেশের গুণ্টুরে আমার কাছেই ছিল। তবে এখানে দিনের অনেকটা সময় ওর একা থাকা ঝুঁকির হয়ে যাচ্ছিল। তাই জুলাই মাসে ওকে বাপের বাড়ি, মেমারির শঙ্করপুরে রেখে আসি। ১৭ অগস্ট থেকে আমি হায়দরাবাদ থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দূরে গোদাবরী-কৃষ্ণা নদীতে বানভাসি দু’টি গ্রামে উদ্ধারকাজে গিয়েছিলাম। কয়েকজন অন্তঃসত্ত্বাকে কাঁধে করে সুরক্ষিত জায়গায় রেখেও এসেছিলাম। সেখানে আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে অবহেলা, গাফিলতির শিকার হয়ে মারা যেতে হল! গর্ভস্থ সন্তানকে বাঁচানোর কোনও চেষ্টাই হল না! তা হলে আমরা কাদের ভরসায় পরিজনকে রেখে দেশের সেবা করতে যাচ্ছি? ভাবতেই পারছি না।
রাতভর একের পরে এক নার্সিংহোম, হাসপাতাল ঘুরেও সৌমির চিকিৎসার ব্যবস্থা করা যায়নি। আমার বাড়ি বর্ধমানের কুড়মুনে। আমাদের কাছে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালই ছিল ভরসার জায়গা। তার চেয়েও যে ‘ভাল জায়গা’ রয়েছে, তা প্রথম জানা গেল হাসপাতালেরই এক জুনিয়র ডাক্তারের কাছে। হাসপাতালে দেড় ঘণ্টা ধরে বিনা চিকিৎসায় সৌমিকে ফেলে রাখা হয়েছিল। সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করলেই দেখা যাবে, সব জায়গাতেই কী ভাবে অবহেলার শিকার হয়েছে সৌমি। সে নাকি ডায়াবিটিসজনিত কারণে মারা গিয়েছে। কিন্তু সে কথার পক্ষে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কোনও রিপোর্ট আমাদের দিতে পারেনি।
২০১৬ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি আমাদের বিয়ে হয়। পরিকল্পনা করেই সন্তান নেওয়ার সিদ্ধান্ত। আমার কাছে থাকাকালীন প্রতিদিন রাতে ডিউটি থেকে ফিরে গর্ভস্থ সন্তানের অনুভূতি নিতাম। শঙ্করপুর থেকে ফিরে সোজা বানভাসি এলাকায় চলে যাই। সারা দিন জলে থেকে মানুষকে রক্ষা করেছি। আমাদের কাছে দেশ আগে, তার পরে পরিবার। সে জন্য ওই ক’দিন অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর সঙ্গে ভাল ভাবে কথা হয়নি। যখন কথা হত, তখন গর্ভের সন্তান পা ছুঁড়ল কি না, নড়াচড়া করছে কি না খোঁজ নিতাম। সে ভূমিষ্ঠ হবে বলে ২২ অক্টোবর থেকে পিতৃত্বকালীন ছুটি নেওয়ার পরিকল্পনাও করেছিলাম। কিন্তু এ ভাবে অবহেলায় মারা যাবে, ভাবতেই পারছি না।
গ্রামে উদ্ধারকাজ করে ‘হোম আইসোলেশনে’ চলে যাই। টানা জলে থেকে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম। সে জন্য ১০ সেপ্টেম্বর রাতে বাড়ি থেকে কেউ ফোন করেনি। রাতভর কোনও নার্সিংহোম-হাসপাতাল ভর্তি নেয়নি। তখন শ্বশুরমশাই আমাকে ফোন করেন। সঙ্গে-সঙ্গে আমি এনডিআরএফের কর্তাদের জানাই। তাঁরাই কলকাতা অফিসে যোগাযোগ করেন। সেখান থেকে জেলাশাসককে (পূর্ব বর্ধমান) জানানো হয়। তিনি ভর্তির ব্যবস্থা করে দেন। আমি এক জন জওয়ান বলে জেলাশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারলাম। কিন্তু কোনও সাধারণ মানুষের পক্ষে তো সব সময় তা সম্ভব নয়। তা হলে মানুষ কী বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত পৌঁছতে পারবেন না? বিনা চিকিৎসায় চোখের সামনে পরিজন মারা যাবেন? আর আমরা অসহায় হয়ে বসে থাকব!
(বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ওই অন্তঃসত্ত্বাকে ভর্তি না নেওয়ার অভিযোগের তদন্ত চলছে। তবে অন্য ‘ভাল হাসপাতালে’ নিয়ে যাওয়ার পরামর্শ হাসপাতালের কেউ দিয়েছিলেন বলে তাঁরা মানেননি।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy