—প্রতীকী চিত্র।
দুই নারী। ছেলে-মেয়ে, স্বামী, আত্মীয়-স্বজন নিয়ে ভরা সংসার ছিল দু’জনেরই। কিন্তু জীবনটা বদলে যায় ২০১৩-র পঞ্চায়েত ভোটের দিন, ১৫ জুলাই। কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে খুন হয়ে যান দু’জনের স্বামী। — ওই দু’জন নিহত সিপিএম কর্মী শেখ হাসমত সাগার স্ত্রী মনোয়ারা বিবি (৩৫) এবং তৃণমূল কর্মী রাজেশ কোড়ার (৩১) স্ত্রী গীতা কোড়া। সে দিনের পরে, সময় গড়িয়েছে প্রায় এক দশক। ফের দুয়ারে পঞ্চায়েত ভোট। ফের রাজনৈতিক হিংসা দেখা গিয়েছে রাজ্যে। এই আবহে, দুই যুযুধান দলের দুই নারীর একটাই আর্জি, ভোট বা রাজনীতিকে কেন্দ্র করে আর যেন রক্ত না ঝরে।
কী ঘটেছিল সে দিন? সিপিএমের অভিযোগ, ভোটের দিন সকাল সাড়ে ৭টায় চুরুলিয়া পঞ্চায়েতের মধুডাঙা বুথের বাইরে তাদের প্রার্থী মনোয়ারার স্বামী হাসমতকে লক্ষ করে বোমা ছোড়ে তৃণমূল। মৃত্যু হয় হাসমতের। মিনিট ৪০-এর মধ্যেই ‘পাল্টা খুন’। তৃণমূলের অভিযোগ, সিপিএম কর্মীরা রাজেশকে মাথায় কুড়ুল মেরে খুন করেন। যদিও, দু’পক্ষই তাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করে। দু’টি খুনের মামলাই বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন।
তবে দোষী যাঁরাই হয়ে থাকুন না কেন, এক লহমায় বদলে যায় দুই নারীর জীবন। মনোয়ারা ভোটে জেতেন। জানান, স্বামী যখন খুন হন, তখন ছেলে জুলফিকরের বয়স ১০ বছর, আর মেয়ে জুলেখা সবে এক বছর। তিনি বলেন, “স্বামীর মৃত্যুর জন্য জয়ের আনন্দ ছিল না। বরং, অথৈ জলে পড়ি।” তবে দল পাশে দাঁড়িয়েছিল। মনোয়ারা জানাচ্ছেন, কয়েক লক্ষ টাকা দলের তরফে ফিক্সট ডিপোজ়িট করা হয়। সেখান থেকে পাওয়া সুদই সংসার চালাতে মূল ভরসা। হাসমত কাজ করতেন একটি বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থায়। সে সূত্রে স্বামীর পিএফ থেকে মাসে ছ’হাজার টাকা, ছেলে-মেয়ের জন্য তিন হাজার টাকা করে ছ’হাজার টাকা পেতেন মনোয়ারা। এই মুহূর্তে ছেলে বেসরকারি কারখানায় কাজ করেন। মেয়ের পেনশন তবে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। মনোয়ারা বলেন, “এই ভরসা। পাশে পেয়েছি ভাসুর, দেওরদেরও। মামলা তুলতে চাপ এসেছে। কিন্তু মাথা নোয়াব না। দলের কাজও করি। সেটাও করব।” দোষীরা শাস্তি পাক, আর্জি হাসমতের দাদা জব্বর সাগারও।
এ সবের বাইরে গিয়ে মনোয়ারার আর্জি, “খবরে দেখি ভোট এলেই লোক মরে। স্রেফ ক্ষমতা দখলের জন্য এ সব রক্তপাত বন্ধ হোক। কত মানুষের সংসার ভেসে যাচ্ছে এই করে। গণতন্ত্রও বিপন্ন হচ্ছে।”
একই পরিস্থিতি রাজেশের স্ত্রী গীতারও। পরে তিনি আসানসোল পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরও হয়েছিলেন। গীতা জানান, রাজেশের মৃত্যুর সময় তাঁর দুই ছেলে রৌণক ও মানবের বয়স ছিল যথাক্রমে পাঁচ ও তিন বছর। এখন তারা যথাক্রমে নবম ও সপ্তম শ্রেণির ছাত্র। আর্থিক অসুবিধার মুখে পড়তে হয়নি গীতাকে। পাশে রয়েছেন দুই দেওরের পরিবার, রাজেশের জেঠিমা। তবে তাঁরও আবেদন, “দোষীরা শাস্তি পাক, এটাই চাই। কিন্তু রাজনৈতিক বা অন্য কোনও কারণে খুনটা বন্ধ হোক। ভোটে হার-জয়টা শেষ কথা নয়। মানুষের জীবনের মূল্য অনেক বেশি।”
স্বামীকে হারিয়ে দুই নারীর জীবনই অনেকটা বদলে গিয়েছে। আর তাই মানুষের জীবনের মূল্যটা যাতে সব রাজনৈতিক দল বুঝতে পারে— পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে রক্তপাতের আবহে এটাই আর্জি মনোয়ারা ও গীতার।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy