Advertisement
০৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Terror suspect arrested

লাজুক স্বভাবের মেধাবী ছাত্র হাবিবুল্লাহই নাকি জঙ্গি নেতা! বিশ্বাসই হচ্ছে না কাঁকসার প্রতিবেশীদের

স্বভাবলাজুক হাবিবুল্লাহ যে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা হয়ে উঠেছিলেন, তা জেনে ঘুম উড়েছে পাড়া-প্রতিবেশীর। তাঁরা বিশ্বাস করতে পারছেন না, ভাল ছেলে বলে যাঁকে চিনতেন, তিনি আসলে জঙ্গি নেতা!

১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত কলেজপড়ুয়া।

১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতে জঙ্গি সন্দেহে ধৃত কলেজপড়ুয়া। গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ২৩ জুন ২০২৪ ১৭:৫৮
Share: Save:

পূর্ব বর্ধমানের মানকর কলেজে কম্পিউটার সায়েন্স নিয়ে পড়াশোনা করত যে স্বভাবলাজুক ছেলেটি, সে-ই কিনা জঙ্গি সংগঠনের নেতা! বিশ্বাসই হচ্ছে না কাঁকসার মীরেপাড়ার। সেই অবিশ্বাসের উপর থেকে আস্তে আস্তে পর্দা ওঠার শুরু শনিবার। যখন কাঁকসা থানার পুলিশের সঙ্গে রাজ্য পুলিশের ‘স্পেশাল টাস্ক ফোর্স’ (এসটিএফ)-এর আধিকারিকেরা দল বেঁধে পৌঁছলেন মীরেপাড়ায় মহম্মদ হাবিবুল্লাহের বাড়িতে। জানা গেল, কম কথা বলা মেধাবী ছাত্র হাবিবুল্লাহ নাকি বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের ভারতীয় মডিউলের ‘দায়িত্বে’। রবিবার হাবিবুল্লাহকে আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত তাঁকে ১৪ দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছে। পুলিশ আশাবাদী, এই সময়ের মধ্যে ধৃত ছাত্রকে জেরা করে মিলবে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য।

মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিকে দুর্দান্ত রেজাল্ট। মীরেপাড়ার ‘ভাল ছেলে’ হিসাবে লোকে চিনতেন হাবিবুল্লাহকে। বাড়িতে বাবা, মা এবং বোনের সঙ্গেই থাকতেন। মানকর কলেজের কম্পিউটার সায়েন্স বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া হাবিবুল্লাহকে চেনেন কলেজের সকলেই। এমনিতে, তাঁর মেধা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন না কেউ, কিন্তু কলেজে খুব বেশি ক্লাস করতেও দেখা যেত না তাঁকে, এমনই বলছেন কলেজের লোকজন, বন্ধুবান্ধবেরা। এসটিএফ মনে করছে, হাবিবুল্লাহ আসলে বাংলাদেশে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের মডিউল ‘শাহদাত’-এর পশ্চিমবঙ্গের দায়িত্বপ্রাপ্ত। শনিবার এসটিএফকে সঙ্গে নিয়ে হাবিবুল্লাহর মীরেপাড়ার বাড়িতে যায় কাঁকসা থানার পুলিশ। তাঁকে গ্রেফতারের পাশাপাশি উদ্ধার হয় একাধিক নথি, হাবিবুল্লাহের ল্যাপটপ এবং মোবাইল ফোন। ইউএপিএ-সহ একাধিক কঠোর ধারায় তাঁর বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হয়। পুলিশ সূত্রে খবর, হাবিবুল্লাহ বাড়িতে বসে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনটির সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করতেন। জঙ্গি সংগঠন নিজেদের মতাদর্শ ছড়ানোর জন্য যে সমস্ত তথ্য হাবিবুল্লাহকে দিত, সেই তথ্য এ পার বাংলায় ছড়িয়ে দেওয়ার কাজ চলত মীরেপাড়ার বাড়িতে বসেই।

সূত্রের খবর, আল কায়দার মতাদর্শে বিশ্বাসী বাংলাদেশের নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ করতেই ‘শাহদাত’ মডিউল খুলে সদস্য সংগ্রহ এবং অন্যান্য কাজকর্ম শুরু করে তারা। এসটিএফ সূত্রের খবর, এই সংগঠনের মূল কাজ ছিল, বিভিন্ন দেশের মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতনের তথ্য সংগ্রহ করে ধর্মীয় অপব্যাখ্যার মাধ্যমে দেশের আইন ও বিচারব্যবস্থার প্রতি মানুষের মধ্যে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি করা। বিশেষ মোবাইল অ্যাপ ‘বিআইপি’এবং সমাজমাধ্যমকে কাজে লাগিয়ে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের বকলমে সেই কাজই নাকি করতেন কলেজপড়ুয়া হাবিবুল্লাহ। রবিবার তাঁকে নিজেদের হেফাজতে চেয়ে দুর্গাপুর মহকুমা আদালতে তোলে পুলিশ। আদালত হাবিবুল্লাহকে ১৪ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দিয়েছে।

এ দিকে, স্বভাবলাজুক হাবিবুল্লাহ যে তলায় তলায় নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠনের নেতা হয়ে উঠেছিলেন, সেই সংবাদ জানতে পেরে ঘুম উড়েছে পাড়া-প্রতিবেশীর। শ্যামল বাগ নামে এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘‘আগে কোনও দিন বুঝতেই পারিনি! তবে, শনিবার তিনটি গাড়ি নিয়ে এসে হাবিবুল্লাহকে তুলে নিয়ে যায় এসটিএফ। তার পরেই ওর জঙ্গিযোগ আছে বলে জানতে পারি। এ বার ভয় লাগছে।’’

বিষয়টিতে লেগেছে রাজনীতির রংও। জঙ্গি সন্দেহে রাজ্য পুলিশের এসটিএফের হাতে যুবকের গ্রেফতারির খবর পেয়ে রাজ্য সরকারকেই পাল্টা বিঁধেছেন বিজেপি বিধায়ক অগ্নিমিত্রা পাল। রবিবার অগ্নিমিত্রা বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ জঙ্গিদের জন্য শান্তির জায়গা। সমাজবিরোধীরা জানে, পশ্চিমবঙ্গে থাকলে পুলিশ তাদের বিরক্ত করবে না। কারণ পশ্চিমবঙ্গের পুলিশ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অধীনে। প্রশাসন মদত না দিলে এই ধরনের ঘটনা হয় না। আর এরই নাম এগিয়ে বাংলা!’’

পাল্টা কটাক্ষ করতে দেরি করেনি তৃণমূল। তৃণমূলের পশ্চিম বর্ধমানের সভাপতি তথা বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ওঁর মনে হয় জানা নেই যে, হাবিবুল্লাহকে ধরেছে রাজ্য পুলিশেরই এসটিএফ। এতে কেন্দ্রের নামজাদা গোয়েন্দাদের কোনও ভূমিকাই নেই। বিজেপি বিধায়ক শিরোনামে থাকতে চাইছেন, তাই রাজ্য পুলিশের সাফল্য দেখেও স্রেফ রাজনীতির খাতিরে বদনাম করে যাচ্ছেন। মানুষ জানেন, কাদের হাতে জঙ্গি গ্রেফতার হয়েছে। ভোটের বাক্সেই বিজেপি এই অপপ্রচারের জবাব পেয়ে গিয়েছে। তবুও লজ্জা নেই!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE