Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
West Bengal Lockdown

বাসের চাকা বন্ধই, চালু খেয়া পারাপার

বর্ধমান শহর-সহ জেলার বিভিন্ন রাস্তায় টোটো চললেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ।

কালনায় ভাগীরথীতে লঞ্চে দূরত্ব রেখে বসে যাত্রীরা (বাঁ দিকে)। কাটোয়ায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

কালনায় ভাগীরথীতে লঞ্চে দূরত্ব রেখে বসে যাত্রীরা (বাঁ দিকে)। কাটোয়ায় সার দিয়ে দাঁড়িয়ে বাস (ডান দিকে)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব প্রতিবেদন
কালনা শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

‘লকডাউন’-এর পঞ্চম পর্বের প্রথম দিনে অনুমতি থাকা সত্ত্বেও পূর্ব বর্ধমান জেলায় বেসরকারি বাসের চাকা কার্যত গড়াল না। বর্ধমান শহরের দুই প্রান্তে নবাবহাট ও উল্লাস থেকে বাসস্ট্যান্ড কোনও বাস চলাচল করেনি। তবে মেমারি, গুসকরা, নতুনহাট, মঙ্গলকোটের স্ট্যান্ড থেকে বেশ কিছু বাস রাস্তায় নামলেও যাত্রীর অভাবে এক বারের বেশি চলেনি বলে বাস মালিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে। একটি বাস মালিক সংগঠনের দাবি, সোমবার জেলায় প্রায় ৮৫টি বাস রাস্তায় নেমেছিল। তবে আর একটি সংগঠনের বক্তব্য, ভাড়া না বাড়ানো হলে বাস চালানো সম্ভব নয়।

দূরপাল্লার রুটের বাসের সঙ্গে মিনিবাস চালানো নিয়েও সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। বর্ধমান শহরের মিনিবাস মালিকদের একটি সংগঠনের প্রতিনিধি দল এ দিন দুপুরে জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিকের (আরটিও) সঙ্গে দেখা করে অভিযোগ করে, শাসক দল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠনের লোকজন মাঝরাস্তায় বাস আটকে দিচ্ছে। ফলে, ইচ্ছা থাকলেও বাস চালাতে সমস্যা হচ্ছে। মিনিবাস মালিকদের আর একটি সংগঠন আপাতত বাস চালাতে পারবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। অতিরিক্ত জেলাশাসক রজত নন্দের বক্তব্য, ‘‘দু’এক দিনের মধ্যে বাস পরিষেবা স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’’

বর্ধমান শহর-সহ জেলার বিভিন্ন রাস্তায় টোটো চললেও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না বলে অভিযোগ। দু’জনের জায়গায় অন্য সময়ের মতোই চার-পাঁচ জনকে নিয়ে টোটো চলাচল করছে বলে অভিযোগ উঠেছে। রজতবাবু জানান, মোটর ভেহিক্যালস ইন্সপেক্টর (এমভিআই) এবং পুলিশকে তল্লাশি চালাতে বলা হয়েছে।

ফেরিঘাট চালুরও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে। সকাল ৭টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঘাট খোলা থাকবে। আরটিও, বিশেষজ্ঞের দল ঘাটগুলি পরীক্ষা করার পরে নৌকা চলাচলের অনুমতি দেওয়া হবে। পুরসভা এলাকার ভিতরে থাকা ফেরিঘাটগুলির জেটির ‘স্বাস্থ্যপরীক্ষা’ করে রিপোর্ট দেওয়ার পরে চালু করা যাবে। রাজ্যের পরিবহণ দফতরের নির্দেশ অনুযায়ী, ৪০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে ফেরি পরিষেবা চালু করতে হবে। নৌকার মাঝিদের ‘মাস্ক’ ও ‘গ্লাভস’ পরা বাধ্যতামূলক। নির্দিষ্ট সময় অন্তর ‘স্যানিটাইজ়ার’ও ব্যবহার করতে হবে। ‘মাস্ক ছাড়া যাত্রীদের নৌকায় তোলা চলবে না।

‘লকডাউন’ চলাকালীন কালনায় ভাগীরথীতে সকাল ৮টা থেকে ঘণ্টা দু’য়েক একটি ভেসেল যাতায়াত করত। কালনা ও নদিয়ার নৃসিংপুরঘাটের মধ্যে জরুরি জিনিসপত্র পাঠানো হত তাতে। সোমবার থেকে শুরু হয় লঞ্চ পরিষেবা। এক-একটি লঞ্চে ২৫-৩০ জন যাত্রী দেখা গিয়েছে। খেয়াঘাটের ইজারাদারের তরফে ‘স্যানিটাইজ়ার’ রাখা হয়েছিল। ইজারাদারদের অবশ্য দাবি, বাস চলাচল সে ভাবে শুরু না হওয়ায় যাত্রী ছিল অনেক কম।

বেসরকারি বাস পথে নামছে না কেন? ‘বর্ধমান জেলা বাস মালিক সমিতি’র দাবি, একটি বাসে ৪০টি আসন থাকে। ৪০ জন যাত্রী নিয়ে পুরনো ভাড়ায় বাস চালানো সম্ভব নয়। সমিতির কর্তা তুষার ঘোষ বলেন, ‘‘জয়েন্ট কাউন্সিল কলকাতায় কী সিদ্ধান্ত নিচ্ছে দেখে জেলাতেও সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’’ কাটোয়া বাস মালিক সমিতির সভাপতি নারায়ণচন্দ্র সেন দাবি করেন, ‘‘এমনিতেই আমরা লোকসানে চলছিলাম। ভাড়া না বাড়িয়ে ৪০ জন যাত্রী নিয়ে বাস চালানো সম্ভব নয়। তা ছাড়া করোনা সংক্রমণের ভয় তো আছেই।’’

পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিভিন্ন রুটে হাজারখানেক বাস চলাচল করে। বাস মালিকদের সংগঠন ‘ফেডারেশন অফ বর্ধমান’-এর কর্তারা দাবি করছেন, বর্ধমান শহরের দু’প্রান্ত থেকে বাস না ছাড়লেও মেমারি-মালডাঙা, মেমারি-নবদ্বীপ, গুসকরা-নতুনহাট, বর্ধমান-আদ্রাহাটি-গোহগ্রাম, বর্ধমান-বড়পলাশন, বর্ধমান-জামালপুর রুটে কিছু বাস চলেছে। কালনা বাসস্ট্যান্ড থেকে দু’টি বাস সকালে ছেড়েছিল। ওই সংগঠনের জেলা সম্পাদক শরৎচন্দ্র কোনারের দাবি, “জেলায় প্রায় ৮৫টি বাস চলাচল শুরু করেছিল। যাত্রীর অভাবে এক বারের পরে আর চালানো সম্ভব হয়নি। এই পরিস্থিতিতে সকলকেই দায়িত্বশীল হতে হবে। আশা করছি, মঙ্গল-বুধবার ৫০ শতাংশ বাস রাস্তায় নামবে।’’

কালনার আইএনটিটিইউসি নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বাস মালিকদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি, সরকারি অফিস, আদালত, স্কুল-কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান না খোলায় তাঁরা এখন যাত্রী কম হওয়ার আশঙ্কা করছেন। তবে ৮ জুন থেকে অনেকেই বাস চালানোর কথা ভাবছেন।’’

জেলার আঞ্চলিক পরিবহণ আধিকারিক রানা বিশ্বাস বলেন, ‘‘বাস মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, বাসকর্মীরা যাতে স্বাস্থ্যবিধি মানেন, তা নিশ্চিত করতে হবে। যাত্রীদের ‘মাস্ক’ থাকা বাধ্যতামূলক। বাসে কোনও যাত্রী দাঁড়িয়ে যাবেন না। যাত্রীদের জন্য সাবান-জল বা ‘স্যানিটাইজ়ার’-এর বন্দোবস্ত করতে পারলে ভাল হয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

West Bengal Lockdown Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy