Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪

গ্রামরক্ষায় শুক্লা সপ্তমীতে অরন্ধন

স্বপ্নাদেশ ছিল, গ্রাম রক্ষা করতে হলে ফি বছর মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমীতে গোটা গ্রামে অরন্ধন থাকবে। গ্রামের বাইরে মাঠে রান্না করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। অর্ধশতাব্দী পরেও সেই রীতিই চলছে খণ্ডঘোষের কৈয়র পঞ্চায়েতের তোরকোনা গ্রামে।

জমিতে একসঙ্গে রান্না। খণ্ডঘোষের তোরকোনায় নিজস্ব চিত্র।

জমিতে একসঙ্গে রান্না। খণ্ডঘোষের তোরকোনায় নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ ০১:৪১
Share: Save:

স্বপ্নাদেশ ছিল, গ্রাম রক্ষা করতে হলে ফি বছর মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমীতে গোটা গ্রামে অরন্ধন থাকবে। গ্রামের বাইরে মাঠে রান্না করে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়া করতে হবে। অর্ধশতাব্দী পরেও সেই রীতিই চলছে খণ্ডঘোষের কৈয়র পঞ্চায়েতের তোরকোনা গ্রামে।

শুক্রবার সেই রীতি মেনেই বর্ধিষ্ণু ওই গ্রামের প্রায় সতেরোশো পরিবার খেতজমিতে রান্নবান্না করে। চড়ুইভাতির আমেজে চলে সবাই মিলে খাওয়াদাওয়া। গ্রামবাসীরা জানান, বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে জমিতে জায়গা ‘দখল’ করার লড়াই শুরু হয়ে যায়। কেউ বাঁশ দিয়ে বা কেউ ত্রিপল টাঙিয়ে রান্না করার জায়গা ‘দখল’ করেন। রাতেই অনেকে জমিতে মাটির উনুন তৈরি করে রাখেন। আর দুপুরে খাবার পাতে মাছ একেবারে বাধ্যতামূলক। বধূ সুতপা দত্ত, কলেজ ছাত্রী মৌপ্রিয়া দত্তের কথায়, ‘‘অনেকটা পিকনিক করার মতো ব্যাপার। এখন তো সেভাবে গ্রামের সবাই মিলে একসঙ্গে খাওয়াদাওয়ার চল নেই। সেখানে গ্রামেরই এক জনের স্বপ্নে দেখা নির্দেশ গোটা গ্রাম বহন করে চলছে। এই দিনটা আমাদের মিলন মেলা।’’

গ্রামের বাসিন্দা শ্যামাপদ সাহাও বলেন, ‘‘আমরা তখন পঞ্চম কি ষষ্ঠ শ্রেণিতে। বাংলার ১৩৭২ সালের ১৬ বৈশাখের দুপুরে শ্যামসুন্দর মাথুরের বাড়ি থেকে উঠে আসা লেলিহান শিখা গ্রামের একাংশ ছাড়খার করে দিয়েছিল।’’ শ্যামসুন্দরবাবুর কথায়, “কী ভাবে ওই আগুন লেগেছিল, ৫১ বছর পরেও বুঝতে পারি না।” গ্রামবাসীদের দাবি, ওই আগুনে প্রায় ২০০ পরিবার সর্বস্বান্ত হয়ে গিয়েছিল। তার কিছুদিন পরেই প্রবীণ বাসিন্দা ভূপেন্দ্রনাথ সরকার স্বপ্নাদেশ পান, গ্রামকে রক্ষা রাখতে হলে মাঘ মাসের শুক্লা সপ্তমীর দিন বাড়িতে রান্না করা যাবে না। তার বদলে গ্রামের বাইরে রান্না করে খেতে হবে। ভূপেন্দ্রনাথবাবু সেই কথা গ্রামের বারোয়ারি তলায় জানান। স্বপ্নাদেশ শিরোধার্য করে সরস্বতীর পুজো থেকে তিন দিনের মাথায় খেত জমিতে রান্না করে খাওয়ার রীতি চালু হয়ে যায়।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, ওই রীতিকে সামনে রেখে ধীরে ধীরে গ্রামে সরস্বতী পুজোর জাঁক বেড়েছে। রাতে গ্রামে বিভিন্ন জায়গায় যাত্রা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। শ্যামল দত্ত, মেঘা ঘোষালরা জানান, এই দিন আত্মীয়স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও আমন্ত্রণ জানান তাঁরা। কিন্তু স্বপ্নাদেশে কী বিপদ সত্যিই টলেছে? শ্যামাপদবাবু বলেন, ‘‘পড়েনি বললে ভুল হবে। তবে বড় বিপদ আসেনি।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Custom
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE