অবহেলায় গ্রামের শহিদ বেদি। ছবি: অসিত বন্দ্যোপাধ্যায়
অজয়ের পাড়ের গ্রামটিতে ঢুকে কিছুটা এগোতেই রাস্তার ধারে দেখা যায় জীর্ণ দু’টি শহিদ বেদি। পাশে ভেঙে পড়ে রয়েছে মরচে ধরা লোহার পাইপ। বেদির ফলকে লেখা পূর্ণিমা মাঝি ও দিলীপ ঘোষের নাম এখনও বোঝা যাচ্ছে। বাম জমানার শেষ দিকে, ‘পরিবর্তনের’ ভোটের আগে খুন হয়েছিলেন মঙ্গলকোটের এই দুই তৃণমূল কর্মী। তার পরে অনেক ভোট এসেছে-গিয়েছে। কিন্তু খুনের পরে যে সব প্রতিশ্রুতি মিলেছিল, তার কিছুই মেলেনি, আক্ষেপ নিহতদের পরিবারের।
বাম জমানার শেষ দিকে মঙ্গলকোটে একের পর এক রাজনৈতিক খুনের ঘটনা ঘটে। প্রথম খুন হন তৃণমূল কর্মী আলাউদ্দিন শেখ। দুষ্কৃতীরা তাঁকে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে হাত- পায়ের শিরা কেটে ও কুপিয়ে খুন করে বলে অভিযোগ। এর পরে খুন হন হাসমত আলি শেখ নামে আর এক তৃণমূল কর্মী। তার কিছু দিন পরে খেড়ুয়া গ্রামে তৃণমূল কর্মী মাখন মাঝির বাড়িতে হামলা হয় বলে অভিযোগ। ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর রাতে মাখনের বাড়ির দিকে বোমা ছোড়া হয়। তার আঘাতেই খুন হন মাখনের মা, সক্রিয় তৃণমূল কর্মী পূর্ণিমা মাঝি।
এলাকাবাসীর অনেকের অভিযোগ, সে সময়ে বহিরাগতদের নিয়ে এসে গ্রাম দখলের লড়াই লেগেই থাকত। ২০১১ সালের ৫ জানুয়ারি উত্তর ব্রহ্মপুরে তেমনই গোলমাল বাধে। সে দিনই সন্ধ্যায় এলাকার তৃণমূল কর্মী দিলীপ ঘোষকে গ্রাম থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। রাতে তাঁর কোনও খোঁজ মেলেনি। পর দিন সকালে গ্রামে একটি পুকুরের ধারে বছর পঞ্চান্নর দিলীপের ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার হয়। ঘটনার পরে কলকাতা থেকে ছুটে এসেছিলেন তৃণমূলের রাজ্য নেতারা। দিলীপের দেহ কলকাতায় নিয়ে গিয়ে মিছিলও করা হয়।
পূর্ণিমার ছেলে মাখন মাঝি বলেন, ‘‘আমার মা খুন হয়ে যাওয়ার পরে দলের নেতা মদন মিত্র বাড়িতে এসে ২৫ হাজার টাকা তুলে দিয়েছিলেন। নেতারা আশ্বাস দিয়েছিলেন, দল ক্ষমতায় এলে চাকরি দেওয়া হবে। তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পরে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে অনেক বার কলকাতায় গিয়ে দেখা করেছি। কিন্তু আর কিছুই জোটেনি।’’ তিনি জানান, খুব কষ্টে সংসার চলে এখন। অনেক দিনই দলের নেতারা খোঁজ নেন না অভিযোগ করে তাঁর বক্তব্য, ‘‘দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভালবেসে সভা-মিছিলে গেলেও, সক্রিয় ভাবে আর দল করা হয় না।’’
একই কথা বলেন দিলীপ ঘোষের ছেলে বিশ্বরূপও। তাঁর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীদের হাতে খুন হওয়া বাবার ক্ষতবিক্ষত দেহ নিয়ে দলনেত্রী মিছিল করেছিলেন। তাতে হয়তো তৃণমূল রাজনৈতিক ভাবে সুবিধা পেয়েছিল। দল ক্ষমতায় এলে আমাদের পাশে থাকবে বলে আশ্বাসও দিয়েছিল। কিন্তু সেই ২৫ হাজার টাকা ছাড়া আর কিছু মেলেনি। তখন অনেক ছোটাছুটি করেছি কোনও কাজ পাওয়ার আশায়। এখন নিরাশ হয়ে গিয়েছি।’’
খেড়ুয়া গ্রামের এক সময়ের তৃণমূল কর্মী দেবু ধারা জানান, দল ক্ষমতায় আসার পিছনে অনেকের রক্ত ঝরেছে। গ্রামে পূর্ণিমা মাঝি, দিলীপ ঘোষের শহিদ বেদি তৈরি হয়েছে। গোড়ায় নিহতের স্মরণে নেতারা আসতেন। কিন্তু অনেক বছর আর আসেন না। তাঁর খেদ, ‘‘নিহতদের পরিবারগুলিকে দল পুরোপুরি ভুলে গেল। কিছুই করল না। এটাই আমাদের আক্ষেপ। তবে দিদিকে (মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়) ভালবাসি। নিষ্ক্রিয় হয়ে গেলেও তাই দলের পাশে থাকি।’’
মঙ্গলকোটের তৃণমূল বিধায়ক অপূর্ব চৌধুরী যদিও বলেন, ‘‘নিহতদের পরিবারগুলির অবদান কোনও দিনই ভোলার নয়। দল সে সময়ে ওঁদের সাহায্য করেছিল। শিক্ষাগত যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়তো চাকরি দেওয়া যায়নি। তবে এখনও ওঁদের যে কোনও সমস্যায় দল ছাতার মতো পাশে থাকবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy