Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

জ্বালা কিছুটা জুড়োল, বলছেন নিহতের স্ত্রী

২০১৭ সালে গণপিটুনির ওই ঘটনায় নিহত হন তারামণিদেবীর স্বামী নদিয়ার নারায়ণ দাস। মারা যান নদিয়ারই অনিল বিশ্বাস। গুরুতর আহত হন আরও তিন জন।

আদালতে রায়ের অপেক্ষায় নিহত ও আহতদের পরিজনেরা। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

আদালতে রায়ের অপেক্ষায় নিহত ও আহতদের পরিজনেরা। ছবি: জাভেদ আরফিন মণ্ডল

কেদারনাথ ভট্টাচার্য 
কালনা শেষ আপডেট: ১২ নভেম্বর ২০১৯ ০০:০১
Share: Save:

তখনও সাজা ঘোষণা হয়নি। আদালতের বাইরে অস্থির ভাবে পায়চারি করছেন চল্লিশ ছুঁই ছুঁই এক মহিলা। হাতে বাঁধানো ছবি। মাঝেমধ্যে উঁকি মারার চেষ্টা করছেন এজলাসে। রায় বেরোতেই তারামণি দাস বললেন, ‘‘২০১৭ থেকে এই দিনটার জন্য অপেক্ষা করছি। নিষ্ঠুর ভাবে পিটিয়ে মেরেছিল আমার স্বামীকে। আজ কিছুটা হলেও জ্বালা জুড়োল।’’

২০১৭ সালে গণপিটুনির ওই ঘটনায় নিহত হন তারামণিদেবীর স্বামী নদিয়ার নারায়ণ দাস। মারা যান নদিয়ারই অনিল বিশ্বাস। গুরুতর আহত হন আরও তিন জন। সোমবার পুলিশের নিরাপত্তায় নদিয়ার হবিবপুর থেকে কালনা আদালতে পৌঁছন মৃত ও আহতদের পরিজনেরা। রায়দান শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোথাও নড়েননি কেউ। তারামণি বলেন, ‘‘সে দিন আমগাছে কীটনাশক দিতে কালনা গিয়েছিল ওরা। কোনও কথা না শুনে ছেলেধরা সন্দেহে ওঁদের পেটানো হয়। ন’দিন মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ে মারা যান আমার স্বামী। সরকারি সাহায্যে টাকা চিকিৎসাতেই শেষ হয়ে গেল। ছেলেটার লেখাপড়ার খরচও ঠিক ভাবে জোগাড় করতে পারি না।’’ মৃতের বৃদ্ধ বাবা শিবু দাসও বলেন, ‘‘ছেলেটাকে পুলিশের হাতে তুলে দিতে পারত। তা হলেও হয়তো প্রাণটা বেঁচে যেত।’’ গণপিটুনির আর এক শিকার অনিল বিশ্বাসের ছেলে বাবুল বিশ্বাসও বলেন, ‘‘এমন সাজা চেয়েছিলাম, যাতে দোষীরা সারা জীবন মনে রাখে।’’

এখনও হাঁটলে পায়ে ব্যথা পান ঘটনায় আহত মানিক সরকার। বাঁ পায়ের গোড়ালির নীচের অংশে আঘাতের চিহ্নটাও দগদগে। মানিকবাবু বলেন, ‘‘পা, কান, নাক ও বুকের হাড় ভেঙে গিয়েছে। নিজের কিছুই করার ক্ষমতা নেই। বাড়ির সামনে চায়ের দোকান খুলে স্ত্রী সীমা কোনও রকমে সংসার টানে।’’ পুরনো কথা উঠতেই ওই দিনের স্মৃতি ভিড় করে আসে তাঁর। মাঝবয়েসী মানিকবাবু বলে চলেন, ‘‘সকাল সকাল ভাগীরথী পেরিয়ে কালনা স্টেশনে এসেছিলাম। চা খেয়ে যাই বারুইপাড়ার দিকে। প্রথমে দু’জন আমাদের আটকে পরিচয় জানতে চান। তাঁদের বলি, আমের মুকুলে কীটনাশক ‘স্প্রে’ করতে এসেছি। ব্যাগে থাকা যন্ত্রপাতি, পরিচয়পত্রও দেখাই। ভিড় জমে যায় ততক্ষণে। আচমকা কেউ ‘জঙ্গি’, কেউ ‘ছেলেধরা’ বলে ঝাঁপিয়ে পড়েন। পরিচয়পত্র ছিঁড়ে, রড-লাঠি, হাতের কাছে যা ছিল দিয়ে মার শুরু হয়। কোনও কথা শুনতে রাজি ছিল না কেউ।’’

বাকি দুই আহত ব্যঞ্জন বিশ্বাস এবং মধু তরফদার কার্যত পঙ্গু। শারীরিক অসুস্থতার কারণে এ দিন কালনা আদালতেও যেতে পারেননি তাঁরা। তাঁদের পরিজনেরা জানান, আগে এলাকার অনেকেই নানা জায়গায় ঘুরে গাছে কীটনাশক ছড়ানো, চাষের ছোটখাট যন্ত্রপাতি বিক্রির কাজ করতেন। ওই ঘটনার পরে অনেকেই পেশা বদলে ফেলেছেন।

মানিকবাবুর কথায়, ‘‘আমাদের তো সব গিয়েছে। আর যেন এমনটা না হয়, তাই এই রায় দরকার ছিল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Lynching Court Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy