ভাতারের বাড়িতে রবির মা। নিজস্ব চিত্র ।
বাবা তাঁকে বলেছিলেন খেলা চালিয়ে যেতে, টাকা যা দরকার তা তিনি জোগাড় করে পাঠাবেন। খেতমজুরির সঙ্গে মাঝে মাঝে টোটো চালাতেন বাবা। মাস ছয়েক আগে হৃদরোগে মৃত্যু হয় তাঁর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হায়দরাবাদের মাঠে যখন রবি হাঁসদাকে নিয়ে উল্লাসে মেতেছেন বাংলা দলের ফুটবলারেরা, পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের মুশারু গ্রামে তখন তাঁর মা তুলসী হাঁসদা আক্ষেপ করছেন, এই দিনটা দেখে যেতে পারলেন না তাঁর স্বামীসুলতান হাঁসদা।
মঙ্গলবার সন্তোষ ট্রফির ফাইনালে রবির একমাত্র গোলে কেরলকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলা। ভাতার ঘেঁষা মুশারু গ্রামের আদিবাসী পাড়ায় দোতলা মাটির বাড়ি রবিদের। আপাতত বাড়িতে একাই রয়েছেন রবির মা তুলসী। তিনি জানান, ছোট থেকেই ফুটবল খেলতে ভালবাসেন রবি। বছর দশেক বয়সে বাড়ি থেকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে ভাতারের বলগোনা হাই স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয় ছেলেকে। সেখানে পড়তে গিয়েই রবি জানতে পারেন, ভাতারে ফুটবলের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। বছর বারো বয়স থেকে ভাতার একাদশ অ্যাথলেটিক্স ক্লাবের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ নেওয়া শুরু করেন। প্রশিক্ষক মুদরাজ সেডেনের নজরে পড়ে রবির খেলা।মুদরাজ জানান, ২০১৭ সালে তিনি অনূর্ধ্ব ১৯ বাংলা দলের শিবিরে নিয়ে যান রবিকে। সেখানে রবি শুধু যে নির্বাচিত হন, তা নয়। তাঁকে অধিনায়কও করা হয়।
মুদরাজ বলেন, ‘‘রোদ, ঝড়, বৃষ্টি কোনও কিছুর জন্যই খেলতে আসা কামাই করেনি রবি। ২০২২ সালের ন্যাশনাল গেমসে বাংলার হয়ে রবি দারুণ খেলে। পাঁচটি গোলও করেছিল।’’ পরিবারের আক্ষেপ, এ সবের পরেও আর্থিক প্রতিকূলতা এখনও সঙ্গী। অভাবের মধ্যে কত দিন রবি খেলা চালাতে পারবেন, সে নিয়েই চিন্তায় তাঁরা। তবে মুদরাজ বলেন, ‘‘এখন কলকাতার কিছু বড় দল ওর বিষয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে।’’
বর্তমানে রবি কলকাতার কাস্টমস ক্লাবের সঙ্গে যুক্ত। বিয়ে করেছেন হুগলির চন্দননগরের মেয়েকে। বছর দেড়েকের এক মেয়েও রয়েছে তাঁদের। গ্রামে রবির বন্ধু সুরেশ হেমব্রম, সুধীর হেমব্রম, বাবুলাল হেমব্রমেরা বলেন, ‘‘ওর কোনও অহঙ্কার নেই। বাড়ি এলেই আমাদের সঙ্গে মাঠে নেমে পড়ে। গর্ব হয়। তবে খারাপ লাগে, এত ভাল খেলা সত্ত্বেও ওর কোনও আর্থিক সুরাহা হচ্ছে না।’’ তাঁরা জানান, রবিরা মা এখনও মাঠে কাজ করেন। স্থানীয় বাসিন্দা তাম্বর মুর্মু বলেন, ‘‘বেশির ভাগ সময় রবিকে বাইরেই থাকতে হয়। আমরা ওর মায়ের খেয়াল রাখার চেষ্টা করি।’’
বুধবার ফোনে রবি বলেন, ‘‘এর পরে তিনটি লক্ষ্য: মা, স্ত্রী ও মেয়েকে নিয়ে ভাল ভাবে বাঁচার জন্য একটা চাকরি, কোনও বড় দলের হয়ে খেলতে পারলে নিজেকে প্রমাণ করা , জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy