বাজেট খুশি করতে পারেনি কোনও পক্ষকেই। ছবি: পিটিআই।
প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু চাষি থেকে অর্থনীতিবিদ কেন্দ্র সরকারের বাজেট নিয়ে খুশি নন কোনও পক্ষই। আয়করের ছাড়ের নতুন হিসাব নিয়েও অনেক ধোঁয়াশা রয়েছে, বলছেন সরকারি, বেসরকারি কর্মীরা।
যদিও শিল্পোদ্যোগীদের একাংশ বাজেটে উল্লিখিত ‘জিইএম’-এর (গভর্নমেন্ট ই-মার্কেট প্লেস) মানোন্নয়ন, রফতানিকারীদের জন্য ‘নির্ভীক’ প্রকল্প প্রভৃতিকে স্বাগত জানিয়েছেন।
কর্মসংস্থান, জীবনবিমার বেসরকারিকরণে এক ধাপ পা বাড়ানো নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি। তাদের বক্তব্য, সম্পূর্ণ ‘দিশাহীন’ বাজেট। যদিও বিজেপি নেতাদের দাবি, আর্থিক বৃদ্ধির লক্ষ্য নিয়েই বাজেট পেশ করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ছোট উদ্যোগপতিদেরও দাবি, তাঁদের জন্য চিন্তাভাবনা করা হয়েছে।
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক ভাস্কর গোস্বামীর প্রতিক্রিয়া, “এই বাজেটকে ভয়ঙ্কর বললেও কম বলা হবে। আয়কর ছাড় নিয়ে সম্পূর্ণ ভাঁওতা দেওয়া হয়েছে। সরকারের ইচ্ছাটা ঠিক কি, সেটা বোঝা যায়নি।’’ অন্য অর্থনীতিবিদদের আশঙ্কা, প্রভিডেন্ট ফান্ড, জীবনবিমার মতো ৭০টি জায়গায় বিনিয়োগ করে দেড় লক্ষ টাকা পর্যন্ত আয়করে ছাড় মিলত। শনিবার কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী ওই ছাড় তুলে দিয়ে নতুন করে করের হার ঘোষণা করেছেন। এর ফলে সাধারণ মানুষ বিনিয়োগে উৎসাহী হবেন না বলে আশঙ্কা তাঁদের। যদিও এক প্রাক্তন বিমানকর্মী রামব্রত ভট্টাচার্যের দাবি, ‘‘আয়কর ছাড় অনেকটাই বাড়ানো হয়েছে। কে, কোন ছাড়ের সুবিধা নেবে তার সুযোগ করে দিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।’’
জীবনবিমার মালিকানা সম্পূর্ণ ভাবে সরকারের হাতে থাকবে না, এই ঘোষণা নিয়েও দ্বিমত দেখা দিয়েছে। লগ্নিকারীদের একাংশের দাবি, আচমকা মালিকানা বদলে বেসরকারি হাতে গেলে ভরসা হারাবেন গ্রাহকেরা। যে সমস্ত ‘স্কিম’ চলছে সেগুলির কী হবে, সে প্রশ্নও তুলেছেন অনেকে। যদিও বেসরকারি মালিকানায় লাভ বেশি হওয়ারও সম্ভাবনা দেখছেন অনেকে। তাঁদের দাবি, এর জেরে স্টক মার্কেটে সংস্থাটি নথিভূক্ত হবে। ফলে, পরিচালনা, লগ্নি বা বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা আসবে। লগ্নিকারীরা বাজার দেখে এগোতে পারবেন। পাশাপাশি, তাঁদের আশা, সংস্থার মুনাফা বৃদ্ধির ফলে লগ্নিকারীদের উপকৃত হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।
তবে হতাশা, ক্ষোভ প্রকাশ করেছে চাকুরিজীবী থেকে শ্রমিক মহল। বর্ধমানের সমাজকল্যাণ দফতরের কর্মী তাপসী মণ্ডলের কথায়, “সরকার জিনিসপত্রের দাম কমাতে আগ্রহী, এমন উদ্যোগ বাজেটে দেখা যায়নি। সরকারি সুযোগ-সুবিধার দিক থেকেও আমাদের বঞ্চিত করার ছক করা হয়েছে।’’ বর্ধমানের ব্যবসায়ী শুভাশিস কংসবণিক, কালনার ব্যবসায়ী সুশীল মিশ্রদের কথাতেও একই সুর। তাঁরা বলেন, “বাজেটের পুরোটাই চমক। নগদ টাকার সংস্থান না হলে বাজারের ঝিমুনি কাটবে না। অথচ তা নিয়ে কোনও কথা নেই বাজেটে।’’ কাটোয়া মহকুমা ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক সুশীল সরকারেরও দাবি, ‘‘এমনিতেই জিএসটি-সহ নানা কারণে ছোট ব্যবসায়ীদের অবস্থা খারাপ। অনেক ছোট সংস্থা লোকসানের মুখে পড়ে উঠে গিয়েছে। এই বাজেট বাঁচানো তো দূর আরও ডুবিয়ে দিল।’’
যদিও বর্ধমানের এক ব্যবসায়ী চন্দ্রবিজয় যাদবের দাবি, ‘‘ছোট উদ্যোগপতিদের জন্যে চিন্তাভাবনা করা হয়েছে। তাতে আমরা খুশি।’’
বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির আর এক অধ্যাপক অরূপ চট্টোপাধ্যায়ের মত, কর্মসংস্থান নিয়ে বাজেটে এক লাইনও খরচ করা হয়নি। অথচ, জীবনবিমা নিগমকে বেসরকারিকরণের দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।
কৃষির দিকে সরকার নজর দেয়নি মনে করছেন জেলার বেশির ভাগ চাষি। আবার কৃষি ক্ষেত্রের উন্নয়ন, রেললাইনের পাশের জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরি, যোগাযোগে বিশেষ নজরকে স্বাগত জানিয়েছেন অনেকে। কালনার চাষি আকবর শেখ, বর্ধমানের চাষি সুকুমার পালেরা বলেন, ‘‘সার, কীটনাশক, চাষের সরঞ্জামের উপরে কোনও ভর্তুকির কথা বলা হয়নি বাজেটে। অথচ সরকার পাশে না দাঁড়ালে চাষির খরচ সামাল দেওয়া মুশকিল।’’ তাঁরা জানান, চাষিদের সৌরবিদ্যুৎ চালিত পাম্প দেওয়ার কথা বলা হয়েছে বাজেটে। কিন্তু কী ভাবে সৌরশক্তির উৎপাদন হবে, চাষিরা কী ভাবে তা পাবেন, তার স্পষ্ট কোনও দিশা নেই। বর্ধমানের একটি চালকলের কর্মী জয়ন্ত যশ বলেন, “কারখানার যন্ত্রের দাম কমানো, শিল্প তৈরিতে উৎসাহ দেওয়ার কথাও বাজেটে বলা হয়নি। কিন্তু শিল্প না বাড়লে কর্মসংস্থানই বা হবে কী করে?”
কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “এই বাজেট সরকারি সংস্থাগুলিকে বিক্রি করার জন্য করা হয়েছে। বেসরকারিকরণের পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাধারণ মানুষের সমস্যার সুরাহা এই বাজেটে নেই।’’
বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য, পেশায় আইনজীবী ভীষ্মদেব ভট্টাচার্যের কথায়, “আর্থিক দিশা, আয়কর ছাড়ের সুযোগ, সাধারণ মানুষকে আরও সুবিধা-সহ দেশকে সুস্থির জায়গায় পৌঁছনোর জন্য এই বাজেট পেশ করেছেন আমাদের কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy