Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪

সাত দিনে ‘অন্তর্দ্বন্দ্বে’ নিহত দুই তৃণমূল নেতা-কর্মী, খুনের রিপোর্ট চাইল রাজ্য

বুধবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী অনিল মাঝি। রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সৈয়দ কলিমুদ্দিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ছিলেন।

ইনসান মল্লিক খুনে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মোমবাতি মিছিল, কালনার বুলবুলিতলায় । নিজস্ব চিত্র

ইনসান মল্লিক খুনে দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে মোমবাতি মিছিল, কালনার বুলবুলিতলায় । নিজস্ব চিত্র

সৌমেন দত্ত ও কেদারনাথ ভট্টাচার্য
বর্ধমান ও কালনা শেষ আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

জেলার তৃণমূল নেতাদের নিয়ে বৈঠকে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে খুনের মতো ঘটনা থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিয়েছিলেন ভোট-কুশলী প্রশান্ত কিশোর (পিকে)। তার পরেও এক নেতা ও এক কর্মী খুনের অভিযোগ উঠেছে গত সপ্তাহে। বিষয়টি নিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলা নেতৃত্বের কাছে রিপোর্ট চেয়েছেন তৃণমূলের রাজ্য নেতৃত্ব।

বুধবার রাতে পূর্ব বর্ধমানের মাধবডিহিতে খুন হন তৃণমূল কর্মী অনিল মাঝি। রায়না ২ পঞ্চায়েত সমিতির সৈয়দ কলিমুদ্দিনের ‘ঘনিষ্ঠ’ বলে এলাকায় পরিচিত ছিলেন ছিলেন। আর শুক্রবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তৃণমূলে জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের ‘ডান হাত’ বলে পরিচিত কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিক। এই খুনে নাম জড়িয়েছে স্বপনবাবুরই আর এক ‘ঘনিষ্ঠ’ নেতার। পুলিশ নিজাম মল্লিক নামে এক জনকে গ্রেফতার করলেও চার দিন পরেও খুনের কিনারা করতে পারেনি বলেই মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্ব।

বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়ার ফাঁকে সোমবার তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “খুনের ঘটনা প্রশাসন দেখছে। তবে দলও রিপোর্ট চেয়েছে।’’ এ দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই অনুষ্ঠানে বারবার জেলা সভাপতি স্বপন দেবনাথের সঙ্গে একান্তে কথাও বলতে দেখা গিয়েছে পার্থবাবুকে। অনুষ্ঠান শেষে স্বপনবাবু বলেন, “দলকে বিষয়টি জানানো হয়েছে। পুলিশকেও বলা হয়েছে, খুনের কিনারা করতেই হবে।’’

ইনসান মল্লিক খুনে ধৃতকে এ দিন কালনা আদালতে তোলা হলে ১০ দিন পুলিশ হেফাজত হয়। আদালত চত্বরে ধৃত নিজাম দাবি করেন, ‘‘মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হচ্ছে আমাকে।’’ নান্দাই পঞ্চায়েতের পারদুপসা গ্রামের বাসিন্দা ধৃতের ছেলে নায়েব মল্লিক দাবি করেন, ‘‘বাবা অপরাধ করেননি। সে জন্য বাড়িতেই ছিলেন।’’ পুলিশের যদিও দাবি, বাড়ি থেকে গ্রেফতার করার আগে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন ধৃত। তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার দিন এক বার বাড়ি ফিরে আবার বেরিয়েছিলেন নিহত নেতা। তাঁকে কেউ ফোন করে ডেকে পাঠিয়েছিল কি না, তার সঙ্গে খুনের কোনও যোগ আছে কি না, তার খোঁজ চলছে। রাজনীতির পাশাপাশি, ব্যক্তিগত কোনও শত্রুতা ছিল কি না, তা-ও খতিয়ে দেখছে পুলিশ।

তৃণমূল সূত্রের খবর, গত মঙ্গলবার কলকাতার রবীন্দ্র সদনের কাছে একটি জায়গায় দলের জেলার নেতাদের নিয়ে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন পিকে। সেখানে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচির পরে সাধারণ মানুষ কী চাইছেন, আর কী করলে সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছনো যাবে, তা নিয়ে আলোচনা হয়। দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে দলের ক্ষতি, যে কোনও রাজনৈতিক খুন মানুষের মনে বিরূপ প্রভাব ফেলে জানিয়ে এ সব থেকে দূরে থাকার বার্তা দেন পিকে। তার পরেও পরপর খুনে দলের নিচুতলায় ক্ষোভ দেখা গিয়েছে। শুক্রবার রাতে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে তাঁর আঁচও পেয়েছিলেন স্বপনবাবু। এ দিন পার্থবাবুর প্রতিক্রিয়া, “কেউ যাতে কোনও প্ররোচনায় পা না দেন, দলের সব স্তরে সেই বার্তা দেওয়া হয়েছে।’’

কটাক্ষ করতে ছাড়েননি বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সাংগঠনিক সভাপতি (বর্ধমান সদর) সন্দীপ নন্দীর কথায়, “গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব ছাড়া তৃণমূলও বাঁচবে না।’’ সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য উদয় সরকারের প্রশ্ন, “টাকার ভাগ নিয়ে লড়াই, সেখানে দলীয় অনুশাসন থাকবে কী ভাবে!”

ইনসান মল্লিকের খুনে অভিযুক্তদের গ্রেফতারের দাবিতে রবিবার সন্ধ্যা থেকে বেগপুর-সহ আশেপাশের এলাকায় শুরু হয়েছে মোমবাতি মিছিল। সোমবার বিকেলে প্রায় হাজার তিনেক মানুষের একটি মিছিল বুলবুলিতলা এলাকায় দেখা যায়। মন্তেশ্বরের একটি ইংরেজি মাধ্যম শিশুদের স্কুলের ডিরেক্টর সৈয়দ টফি বলেন, ‘‘শুধু রাজনৈতিক নেতা বললে ওঁকে ভুল ব্যাখ্যা করা হবে। আমাদের স্কুলের ৭০ জনেরও বেশি ছাত্রছাত্রীর পড়াশোনার জন্য টানা তিন বছর ধরে খরচ জোগাতেন তিনি। এই সব শিশুদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়ল।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy