Advertisement
২৪ ডিসেম্বর ২০২৪
Bardhaman

‘প্যাড’ কিনতে নাজেহাল, দাবি ট্রাক মালিকদের

একটি রসিদ বা চালান, রাস্তায় যা দেখালে কেউ ‘বিরক্ত’ করে না বা নিয়ে যাওয়া সামগ্রী নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, সেটাই চলতি ভাবে ‘প্যাড’ নামে পরিচিত বলে ট্রাক-ডাম্পার চালকদের সূত্রে জানা যায়।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

নীলোৎপল রায়চৌধুরী ও সুব্রত সীট
রানিগঞ্জ ও দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১১ জুন ২০২০ ০৭:৩৭
Share: Save:

এ যেন চোরাচালানের ‘পারানির কড়ি’।

আসানসোল-রানিগঞ্জ খনি এলাকা থেকে কয়লা নিয়ে কলকাতা যাওয়ার পথে ‘ঝুটঝামেলা’ এড়াতে চালু ‘প্যাড’-পদ্ধতি নিয়ে এমনটাই দাবি করে থাকেন ট্রাক-ডাম্পারের চালকদের অনেকে। এ বার কয়লার পাশাপাশি, বালি সরবরাহের ক্ষেত্রেও ‘প্যাড’ চালুর অভিযোগ উঠেছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রাক অ্যাসোসিয়েশন’-এর এক সদস্যের দাবি, বিষয়টি জানিয়ে প্রশাসনের নানা স্তরে ই-মেলও পাঠিয়েছেন তিনি।

একটি রসিদ বা চালান, রাস্তায় যা দেখালে কেউ ‘বিরক্ত’ করে না বা নিয়ে যাওয়া সামগ্রী নিয়ে প্রশ্ন তোলে না, সেটাই চলতি ভাবে ‘প্যাড’ নামে পরিচিত বলে ট্রাক-ডাম্পার চালকদের সূত্রে জানা যায়। স্থানীয় নানা সূত্রের দাবি, বর্তমানে ‘হলুদ’ ও ‘সবুজ’—এই দুই রঙের ‘প্যাড’ চলছে বালিঘাটে। ওই কাগজে ক্রেতা বা ট্রাক মালিকের নাম, ঘাট থেকে ট্রাক বেরনোর দিন ও সময়, ট্রাকের নম্বর লেখা থাকে। এই কাগজের কোনও সরকারি অনুমোদন নেই। তবে সরকারি নানা দফতরের কিছু ‘অসাধু’ কর্মীর এই পদ্ধতিতে মদত রয়েছে বলে অভিযোগ। সে কারণেই রাস্তায় ‘হয়রানি’ এড়াতে নির্দিষ্ট দাম দিয়ে অনেকে ‘প্যাড’ কিনে নেন বলেও দাবি ট্রাক মালিকদের।

পশ্চিম বধর্মান জেলার দু’দিক দিয়ে বয়ে গিয়েছে অজয় ও দামোদর। সরকার অনুমোদিত ২৪টি বালিঘাট আছে সেগুলিতে। এ ছাড়া, ইসিএলের বেশ কিছু ঘাট আছে। শিল্পাঞ্চলের বিজেপি নেতা সন্তোষ সিংহ, রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তদের অভিযোগ, বৈধ ঘাটে যতটা বালি কাটার অনুমোদন থাকে, অনেক ঘাট মালিক তার চেয়ে বেশি কাটেন। এ ছাড়া, প্রচুর অবৈধ বালিঘাটও চলছে বলে তাঁদের দাবি।

ট্রাক মালিকদের একাংশের অভিযোগ, পশ্চিম বর্ধমানের ঘাট থেকে বালি তুলে এই জেলারই কোনও জায়গায় পৌঁছতে হলে ট্রাক বা ডাম্পার পিছু ২,৬০০ টাকা দিয়ে ‘প্যাড’ কিনতে হচ্ছে। বালি নিয়ে অন্য জেলায় যেতে হলে নেওয়া হচ্ছে ৬,১০০ টাকা করে। তাঁদের দাবি, বালিঘাটের মালিকেরাই এই ‘প্যাড’ দিচ্ছেন। পশ্চিম বর্ধমানে রানিগঞ্জের পঞ্জাবি মোড়ের কাছে একটি কার্যালয় থেকে এই ‘প্যাড’ ঘাট মালিকদের কাছে পৌঁছে যায়। সেটাই প্রধান কার্যালয়। এ ছাড়া, অণ্ডালের চিতাডাঙা, দুর্গাপুর ও আসানসোলেও কার্যালয় রয়েছে বলে অভিযোগ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন ট্রাক মালিকের দাবি, এখন এমনিতেই বাজার মন্দা। তার উপরে ‘প্যাড’-এর জন্য ট্রাক পিছু মোটা টাকা গুণতে হচ্ছে। ফলে, ব্যবসা লাটে ওঠার জোগাড়। তাঁদের অভিযোগ, ‘‘আগে রাস্তায় কিছু কিছু পুলিশকর্মী বা সিভিক ভলান্টিয়ারকে একশো-দু’শো টাকা করে দিতে হত। কলকাতা পর্যন্ত যেতে সে বাবদ হয়তো হাজার দু’য়েক টাকা খরচ হত। এখন প্যাডের দরুণ তিন গুণ খরচ হচ্ছে।’’

অণ্ডালের মদনপুর, রানিগঞ্জের তিরাট, নূপুর, পাণ্ডবেশ্বরের কেন্দ্রা, ডিভিসি মোড় থেকে কাঁকসা, পানাগড়ের স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের অনেকের অভিযোগ, অতিরিক্ত বালি বোঝাই করে যাতায়াত করে ট্রাক-ডাম্পারগুলি। তার জেরে রাস্তা ভেঙে যাচ্ছে। বালি পড়ে থাকায় অনেক সময়ে রাস্তা যান চলাচলের পক্ষে বিপজ্জনক

হয়ে উঠেছে বলেও অভিযোগ। পুলিশ-প্রশাসন বিশেষ ব্যবস্থা নেয় না বলে তাঁদের দাবি। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পশ্চিম বর্ধমানের কিছু আধিকারিক অভিযোগ করেন, ইচ্ছেমতো বালি তোলার জেরে জেলায় ১৯টি জলপ্রকল্প ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।

ব্যবস্থা না নেওয়ার কথা অবশ্য মানতে নারাজ পুলিশ-প্রশাসন। আসানসোল মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক সমরেন্দ্র নন্দ জানান, ২০১৯-২০২০ অর্থবর্ষে জেলা জুড়ে প্রায় ৩ কোটি ৮১ লক্ষ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে। এ ছাড়া, বেআইনি ভাবে যাতায়াত করা বালির গাড়ি আটকে প্রায় ২ কোটি ২২ লক্ষ টাকা এবং বর্ষায় অবৈধ ভাবে বালি মজুত করায় আরও প্রায় ৩ কোটি ৪৭ লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বুধবার বিকেলে জানান, ‘প্যাড’ চলার বিষয়ে কোনও অভিযোগ পাননি তিনি। জেলাশাসক (পশ্চিম বর্ধমান) পূর্ণেন্দু মাজির আশ্বাস, কারা ‘প্যাড’ চালাচ্ছে, তাদের নামে নির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Truck Owners Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy