Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

কেতুগ্রামে তৃণমূলের নেতা খুন, অভিযোগ গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের

খাসতালুক ছেড়ে বেরোলেই খুন হয়ে যেতে পারেন, তাই আপাতত আদালতে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়— মাসখানেক আগে আইনজীবীদের কাছে এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা আপেল শেখ। সেই আশঙ্কায় সত্যি হল। তবে এলাকার বাইরে নয়, কার্যত ঘরে বসেই খুন হয়ে গেলেন কেতুগ্রামের খলিপুর গ্রামের বাসিন্দা আপেল শেখ (৩২)।

আপেল শেখ।

আপেল শেখ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাটোয়া শেষ আপডেট: ২৩ এপ্রিল ২০১৫ ০০:৫২
Share: Save:

খাসতালুক ছেড়ে বেরোলেই খুন হয়ে যেতে পারেন, তাই আপাতত আদালতে হাজিরা দেওয়া সম্ভব নয়— মাসখানেক আগে আইনজীবীদের কাছে এমনই আশঙ্কার কথা জানিয়েছিলেন কেতুগ্রামের তৃণমূল নেতা আপেল শেখ। সেই আশঙ্কায় সত্যি হল। তবে এলাকার বাইরে নয়, কার্যত ঘরে বসেই খুন হয়ে গেলেন কেতুগ্রামের খলিপুর গ্রামের বাসিন্দা আপেল শেখ (৩২)।

এই ঘটনায় কেতুগ্রামে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বও ফের প্রকাশ্যে চলে এল। এ বছরের ২৭ জানুয়ারি কেতুগ্রামের বেরুগ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান তৃণমূলের বাদশা শেখ খুন হন। তৃণমূল সূত্রের খবর, বাদশা ও আপেল দু’জনেই কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখের গোষ্ঠীর বিরোধী ছিলেন। বাদশাকে খুনের ঘটনায় ওই দিন জাহের শেখ-সহ কয়েকজনের নামে অভিযোগও হয়েছিল। বাদশার বাবা দাবি করেছিলেন, দলের অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে গিয়েই এমন হল। এ দিন আপেল শেখ খুনের পরেও তৃণমূলের কিছু নেতা জাহের শেখের নামে অভিযোগ তোলেন। নিহতের মা মুস্থুরা বিবি কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে অভিযোগ করেন, “আমার ছেলে এলাকায় তৃণমূলের নেতা ছিল। অন্যায়ের প্রতিবাদ করার জন্যই বিরোধী গোষ্ঠীর লোকেরা খুন করে দিল।” জাহের গোষ্ঠী বিরোধী নেতা সাউদ মিঞার অভিযোগ, “অন্যায়ের প্রতিবাদ করত আপেল। দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরব হত। সে কারণে তাঁকে খুন করা হল।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এই তৃণমূল নেতার খুনের পিছনে দলের নেতা, কেতুগ্রাম ১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জাহের শেখ যুক্ত রয়েছে।”

যদিও অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে জাহের শেখ পাল্টা দাবি করেন, “সাউদের সঙ্গে সাড়ে তিন বছর ধরে আপেলের গোলমাল চলছে, এটা সবাই জানে। ইদানিং মুরগ্রাম গোপালপুর পঞ্চায়েতের বিভিন্ন কাজের টাকার ভাগ নিয়ে অশান্তি আরও বেড়েছিল। আমার ধারণা, আপেলের খুনের পিছনে সাউদ গোষ্ঠী যুক্ত রয়েছে।” আর কেতুগ্রামের বিধায়ক শেখ সাহানেওয়াজের দাবি, “আমাদের দলে কোনও গোষ্ঠী নেই। আমার ধারণা, গ্রাম্য বিবাদের জেরে এই ঘটনা। তবে যে কোনও মৃত্যুই দুঃখজনক। পুলিশ তদন্ত করুক।”

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার সকালে সাড়ে ন’টা নাগাদ কোমরপুর-হাটতলা পেরিয়ে বেণীনগর মোড়ের কাছে নিজের সাবমার্সিবল পাম্পের ঘর থেকেই গুলিবিদ্ধ দেহ মেলে আপেল শেখের। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে চিকিৎসকেরা জানান, তাঁর মৃত্যু হয়েছে। সম্প্রতি এলাকায় নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবসা শুরু করেছিলেন তিনি। দুই স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে রয়েছে তাঁর। জেলা পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল বলেন, ‘‘পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। তিন জন দুষ্কৃতী ঘটনাস্থলে ছিল। তার মধ্যে এক জন গুলি চালিয়েছে। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।” পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার সময় আপেলের সঙ্গে আরও দু-তিন জন যুবক ওই পাম্পের ঘরে বসেছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা পুলিশকে জানিয়েছেন, তাঁরা একটা চৌকির উপর বসেছিলেন। আপেল ঘরে আসার পাঁচ মিনিটের মধ্যে দু’তিন জন তাঁর নাম করে ডাকে। আপেল দরজার কাছে আসতেই দোনলা বন্দুক দিয়ে গুলি করা হয়। ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন আপেল। স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে এলে চিকিৎসকরা মৃত বলে জানান। এ দিনই তাঁর দেহের ময়না-তদন্ত হয়। কাটোয়া মহকুমা হাসপাতালে দাঁড়িয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, “ওই দুষ্কৃতীরা আমাদেরও তাড়া করেছিল। আমরা কোনও রকমে মাঠ দিয়ে ছুটে পালাই।’’

পুলিশ জানিয়েছে, ২০০৯ সাল থেকে কেতুগ্রামের একের পর এক ঘটনায় আপেলের নাম জড়িয়েছে। সিপিএমের তিন কর্মী খুন, খলিপুর গ্রামের তৃণমূলের দুই যুবক ‘নিখোঁজ’ ঘটনা, পুলিশকে আক্রমণ সহ ১৯টি মামলায় অভিযুক্ত ছিল আপেল। বেশ কয়েকবার জেলও খেটেছেন ওই তৃণমূল নেতা। গত ২৭ মার্চ মাজিনা গ্রামের তৃণমূল নেতা সেন্টু শেখ খুন হয়েছিলেন। এই ঘটনাতেও অভিযুক্ত ছিলেন আপেল শেখ। সিপিএমের কেতুগ্রাম জোনাল কমিটির সদস্য তপন কাজির অভিযোগ, “কেতুগ্রামের বুকে ত্রাস ছিল আপেল।”

তৃণমূলের একটি সূত্রের দাবি, স্থানীয় মুড়গ্রাম গোপালপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের সদস্য না হয়েও, ওই পঞ্চায়েত আপেল শেখই পরিচালনা করতেন। তাছাড়া পঞ্চায়েত নির্বাচনের পর থেকে খলিপুর ও বামুনডিহি গ্রামের বেশ কিছু তৃণমূল কর্মী গ্রাম ছাড়া ছিলেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন আপেলকে ‘জরিমানা’ দিয়ে গ্রামে ঢুকেছিলেন বলেও অভিযোগ তৃণমূলের একাংশের। পুলিশও এই খুনের পিছনে সে রকম কেউ জড়িত রয়েছেন কি না, তা খোঁজ নিয়ে দেখছে। প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, দুষ্কৃতীরা গাড়ি করে এসেছিল, ঘটনার পর কোমরপুরের দিকে তারা চলে যায়।

—নিজস্ব চিত্র।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy