Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
আজ বিশ্ব জলদিবস

হুঁশ ফেরেনি ধসেও, দেদার চলছে পাম্প

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা শিল্প জাতীয়করণের পরে ১৯৭৬-এ কয়লা মন্ত্রক একটি কমিটি তৈরি করা হয়। কমিটি বেসরকারি আমলে কয়লা তোলার ফলে খনি এলাকা কী অবস্থায় রয়েছে, তার সমীক্ষা করে।

এ ভাবেই তোলা হচ্ছে জল। নিজস্ব চিত্র

এ ভাবেই তোলা হচ্ছে জল। নিজস্ব চিত্র

নীলোৎপল রায়চৌধুরী
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৮ ০১:১০
Share: Save:

এই শহরে অতীতে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটেছে। ধসের সঙ্গে জুঝতে ভূগর্ভস্থ জল তোলা যাবে না, এমন সতর্কবার্তা প্রায় চার দশক আগে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। কিন্তু সে সব সতর্কবার্তাকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তিগত ভাবে ‘বোরহোল’ তৈরি করে সাবমার্সিবল পাম্পের সাহায্যে জল তোলা হচ্ছে বলে অভিযোগ রানিগঞ্জেরই বাসিন্দাদের একাংশের। ফলে গোটা শহর ও লাগোয়া এলাকায় দাঁড়িয়ে রয়েছে বিপদের সামনে।

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, কয়লা শিল্প জাতীয়করণের পরে ১৯৭৬-এ কয়লা মন্ত্রক একটি কমিটি তৈরি করা হয়। কমিটি বেসরকারি আমলে কয়লা তোলার ফলে খনি এলাকা কী অবস্থায় রয়েছে, তার সমীক্ষা করে। ১৯৭৯ সালে কমিটি মন্ত্রককে রিপোর্ট দিয়ে জানায়, রানিগঞ্জ ও ঝরিয়া খনি এলাকার নানা জায়গায় বেসরকারি আমলে কয়লা কাটা হলেও খনিগর্ভে বালি ভরাট করা হয়নি। এর জেরে ভূগর্ভে ছোট ছোট কয়লার খুঁটির উপরে দাড়িয়ে রয়েছে বিস্তীর্ণ এলাকা। শুধু তাই নয়, বেশ কিছু এলাকায় ভূগর্ভে জল ঢুকে যায়। ২০১০-এ বিশিষ্ট খনি বিশেষজ্ঞ এইচএন কর্মকার লেখেন, ‘রানিগঞ্জ কেন্দ্রের আট বর্গ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ভূপৃষ্ঠ জলস্তরের উপরে অবস্থিত। কোনও ভাবে ভূগর্ভ থেকে জল তুলে নেওয়া হলে ভারসাম্য হারিয়ে ধসের ঘটনা ঘটবে।’’ ইসিএলের সিএমডি–র কারিগরি সচিব নীলাদ্রি রায়ও বলেন, ‘‘রানিগঞ্জের একাংশ-সহ খনি এলাকায় মোট ১৩৯টি জায়গা ধসপ্রবণ। রানিগঞ্জের মতো বেশ কিছু জায়গায় ভূপৃষ্ঠ জলের উপরেই দাঁড়িয়ে। তাই ভূগর্ভস্থ জল তোলাটা খুবই বিপজ্জনক।’’

কিন্তু স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এমন পরিস্থিতিতেও গত কয়েক দশক ধরেই এলাকায় বোরহোল তৈরি করে জল তুলছেন বাসিন্দাদের একাংশ। কেমন তা? প্রশাসনের একটি সূত্রের মতে, রানিগঞ্জ শহরের মাঝখানে একটি উদ্যানে, রনিগঞ্জ উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে, শহরের দু’টি বড় ক্লাব, অম্তত ছ’টি নার্সিংহোমে এ ভাবে জল তোলা হয়। রামবাগান এলাকার একটি কলোনিতেই ৫০টিরও বেশি বাড়িতে ভূগর্ভস্থ জল তোলা হচ্ছে। তা ছাড়া বহুতল তৈরির কাজেও ভূগর্ভস্থ জল তুলে ব্যবহার করা হচ্ছে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে একের পর এক ধসের ঘটনা ঘটছে। যেমন, ২০০৮-এ রানিগঞ্জ শহরের মাঝখানে নেতাজি সুভাষ বসু রোডে নেতাজি মূর্তির কাছে একটি বেসরকারি হাসপাতালের লাগোয়া এলাকায় ধস নামে। ২০০৫-এ ধসের জেরে রানিগঞ্জের শিশুবাগান কালালি গলি এলাকায় একটি বেসরকারি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের কাছেই ধসের জেরে একটি বিরাট জলাশয়ের জল শুকিয়ে যায়। ফাটল ধরে স্কুলেও। রানিগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পাশেই একটি বাড়ির নীচে ধসের ঘটনা ঘটে ২০০৯-এ। এ ছাড়া রানিগঞ্জ বাসস্ট্যান্ড লাগোয়া এলাকায়, মহাবীর কোলিয়ারি লাগোয়া এলাকা-সহ বেশ কিছু জায়গায় ধস নামে। গত সোমবার রাতেও রানিগঞ্জের ৩৭ নম্বর ওয়ার্ডে ইডলি পাড়ায় ধসের জেরে একটি বাড়ি ও মন্দিরের সামনের জায়গা ধসে যায়।

রানিগঞ্জ সিটিজেন্স ফোরামের সভাপতি রামদুলাল বসু, চিকিৎসক সমরেন্দ্রকুমার বসু, বণিক সংগঠনের রাজেন্দ্রপ্রসাদ খেতান জানান, এক দশক আগেও রানিগঞ্জের নানা এলাকায় জলকষ্ট তীব্র ছিল। তাই এ ভাবে জল তোলা হতো। কিন্তু রামদুলালবাবুর ক্ষোভ, ‘‘এখন আর সেই জলকষ্ট নেই। তাই প্রশাসনের নজরদারি চালিয়ে ভূগর্ভস্থ জল তোলা বন্ধ করুক।’’

ইসিএল সূত্রে জানা গিয়েছে, শহরের মধ্যে কুমারবাজার নিচুপাড়া, অরুণ টকিজ থেকে মহাবীর কোলিয়ারি পর্যন্ত, অশোকপল্লি পশ্চিম, কালালি গলি এলাকা ধস প্রবণ। প্রায় দু’দশক আগে এই এলাকা-সহ আশেপাশে যে কোনও ধরনের নির্মাণ কাজে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। অভিযোগ, সে নিষেধাজ্ঞা না মেনেই চলছে বহুতল নির্মাণ। আসানসোলের মেয়র জিতেন্দ্র তিওয়ারি অবশ্য বলেন, “আমরা রানিগঞ্জ শহরের এই সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা নিয়েছে।”

অন্য বিষয়গুলি:

Water Water Pamp Pamp
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy