বাঁ দিকে, শোকার্ত পরিজনেরা। ডান দিকে, নিহত রফিক শেখ। নিজস্ব চিত্র
তৃণমূল কর্মী খুনে দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ দিকে আঙুল তুলল নিহতের পরিবার। কাটোয়ার সিঙ্গি পঞ্চায়েতের লোহাপোতা গ্রামে বুধবার সন্ধ্যায় রফিক শেখকে (৩৪) কুপিয়ে, গুলি চালিয়ে পালিয়ে যায় এক দল দুষ্কৃতী। রাতে কাটোয়া মহকুমা হাসপাতাল থেকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময়ে রাস্তাতেই মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার নিহতের স্ত্রী ডালিয়া বিবি কাটোয়া থানায় ১৩ জনের নামে স্বামীকে খুনের অভিযোগ করেছেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, অভিযুক্তেরা এলাকায় তৃণমূলের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
পরিবারের দাবি, কয়েকবছর আগে এলাকায় সিপিএম থেকে তৃণমূলে আসা কিছু লোকজনই খুনের পিছনে রয়েছে। শাসক দলের নেতারা অবশ্য ঘটনার পিছনে দলের ‘দ্বন্দ্বের’ কথা নারাজ। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ২০১৮ সালের ১৭ মার্চ পেকুয়া গ্রামে সরিফুল শেখ নামে এক ব্যক্তিকে খুনের ঘটনায় নাম জড়িয়েছিল রফিকের। গ্রেফতার হয়ে প্রায় ১৩ মাস জেল হাজতেও ছিলেন। পরে মাদক ও আগ্নেয়াস্ত্র মামলাতেও ফের গ্রেফতার হন। মাস দেড়েক আগে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছিলেন। তৃণমূল সূত্রের দাবি, খুনের ঘটনার পাল্টা হিসেবেই রফিকের উপরে হামলা চালানো হয়েছে। কাটোয়ার তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের বক্তব্য, ‘‘এই ঘটনায় দলের কোনও যোগ নেই। পুরনো বিবাদের জেরেই খুন বলে জেনেছি। পরিজনেরা হয়তো কারও দ্বারা প্রভাবিত হয়ে অভিযোগ করে থাকতে পারেন। তবে তা ঠিক নয়।’’
পরিবার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বুধবার পুরনো একটি মামলায় কাটোয়া আদালতে হাজিরা দিতে গিয়েছিলেন রফিক। সেখান থেকে ফেরার পরে বিকেলে চাঁদপুর গ্রামের মাঠপাড়ায় বাড়ি থেকে বেরোন। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা নাগাদ লোহাপোতা গ্রামের হাটতলার মাঠের এক দিকে তাস খেলার আসরে বসেছিল। হাটতলায় ও মাঠে প্রচুর লোকজনও ছিলেন। অভিযোগ, তখনই এক যুবক এসে রফিককে ডেকে কিছুটা দূরত্বে নিয়ে যায়। সেখানে আচমকা কয়েকজন তাঁকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপাতে শুরু করে। গুলিও চালানো হয় বলে অভিযোগ। প্রাণ বাঁচাতে রফিক সেখান থেকে ছুটে মাঠের অন্য প্রান্তে গ্রন্থাগারের নীচে একটি চায়ের দোকানের সামনে গিয়ে লুটিয়ে পড়েন। দুষ্কৃতীরা কয়েকটি বোমা ছুড়ে, জমির আল ধরে পালিয়ে যায় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি।
বৃহস্পতিবার সকালেও ঘটনাস্থলে গিয়ে রক্তের দাগ দেখা যায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা ঘটনা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি। হাটতলার মাঠ ও লোহাপোতা গ্রামের রাস্তার দু’দিকে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কিছুটা দূরেই চাঁদপুর গ্রামের মাঠপাড়ায় নিহতের বাড়িতে আত্মীয় ও পড়শিদের ভিড়। নিহতের স্ত্রী ডালিয়া বিবি বলেন, ‘‘আমার স্বামী পুরনো তৃণমূল কর্মী। গ্রামের ঢালাই রাস্তা থেকে শুরু করে পঞ্চায়েতের নানা কাজে বেনিয়ম নিয়ে প্রতিবাদ করত। সিপিএম ছেড়ে তৃণমূলে আসা দুষ্কৃতীরা এখন প্রধানের কাছের লোক। ওরাই আমার স্বামীকে কুপিয়ে, গুলি করে খুন করেছে। ওদের শাস্তি চাই।’’
কাটোয়ার সিপিএম নেতা অঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরেই খুনের ঘটনা ঘটেছে।’’ সিঙ্গি পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের দিবেন্দ্যু চট্টোপাধ্যায় অবশ্য অভিযোগ উড়িয়ে দাবি করেন, ‘‘পুরনো গ্রামীণ বিবাদের জেরেই খুন। এর সঙ্গে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বা রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। শোকার্ত পরিজনের ভুল করে হয়তো আমার নাম তুলছেন। অভিযুক্তদের আমি চিনিও না।’’ কাটোয়া ২ ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুব্রত মজুমদার শুধু বলেন, ‘‘দলের কর্মী রফিককে কারা খুন করল, তা পুলিশ তদন্ত করে বার করুক।’’
পুলিশ জনায়, অভিযুক্তদের খোঁজ চলছে। বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত কেউ ধরা পড়েনি। এলাকায় টহল রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy