Advertisement
১৩ নভেম্বর ২০২৪

তৃণমূলের দ্বন্দ্বে লাভ দেখছে সিপিএম

কারও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কারও ক্রমাগত জমি হারানো — কাঁটা অনেকই। তবে ভাতারে বিধানসভা কেন্দ্রে দলের কাঁটা সামলেঅ ভোটের অঙ্ক কষছে শাসক, বিরোধী সব পক্ষ।

সৌমেন দত্ত
শেষ আপডেট: ২৬ মার্চ ২০১৬ ০২:১২
Share: Save:

কারও গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব, কারও ক্রমাগত জমি হারানো — কাঁটা অনেকই। তবে ভাতারে বিধানসভা কেন্দ্রে দলের কাঁটা সামলেঅ ভোটের অঙ্ক কষছে শাসক, বিরোধী সব পক্ষ।

গত বিধানসভা ভোটে প্রায় কান ঘেঁষে জিতেছিলেন তৃণমূল প্রার্থী। তবে দু’বছর পার হতে না হতে পঞ্চায়েত ভোটে জয়ের ফারাক বেড়ে দাঁড়ায় বহু গুন। আবার পরের বছর লোকসভা ভোটে ব্যবধান কমে বেশ খানিকটা। তার মধ্যে জুড়ে যায় প্রার্থী নিয়ে কোন্দল, অন্তর্দ্বন্দ্ব। এককথায়, তৃণমূলের দ্বন্দ্বের ফাঁক গলেই ভাতার বিধানসভা কেন্দ্রে এ বার জয়ের স্বপ্ন দেখছে সিপিএম।

আবার তৃণমূলের পাল্টা চাল, পাঁচ বছরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকারের উন্নয়ন দেখেছেন মানুষ। এ বারেও কোনও প্রার্থী নয়, তাঁকেই ভোট দেবেন। এ ছাড়া লোকসভা ভোটে মোদী হাওয়ায় বিজেপির ঘরে যে ভোট গিয়েছিল, তার বেশির ভাগই এ বার ঘাসফুলে পড়বে। ফলে জয় নিশ্চিত বলেই তাঁদের দাবি।

২০১১ সালের পরিবর্তনে রাজনৈতিক রং বদলে গিয়েছিল ভাতারের। ২৯৮ ভোটে জিতে বিধায়ক হন তৃণমূলের বনমালী হাজরা। বছর খানেক পরে পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাতার থেকে জেলা পরিষদের তিনটি আসনে প্রায় ষাট হাজারের লিড পায় তৃণমূল। আবার ২০১৪ সালের লোকসভা ভোটে ৪৫ হাজার ভোট কমে জয়ের ব্যবধান দাঁড়ায় ১৪ হাজার ২১৭। ওঠাপড়ার কারণ জানতে চাইলে অবশ্য স্পষ্ট উত্তর মেলে না। তবে পাঁচ বছরে ভাতারে শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব যে ভাবে ফুটে উঠেছে তাতেই উত্তর মেলে অনেকটা। অন্তত বিরোধীদের দাবি তেমনটাই।

তৃণমূল সূত্রের খবর, অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই বিদায়ী বিধায়ক বনমালীবাবুকে প্রার্থী করা হয়নি এ বার। তা নিয়ে তাঁর অনুগামীরা কলকাতায় তৃণমূল অফিসে গিয়ে বিক্ষোভও দেখান। আবার বনমালীবাবুর বিরোধী বলে পরিচিত ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীকে প্রার্থী করার জন্যও তাঁর অনুগামীরা বিস্তর চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু তাঁর কপালেও শিকে ছেঁড়েনি। ফাঁক গলে টিকিট পাওয়া প্রার্থী সুভাষ মণ্ডল অবশ্য দু’তরফকেই ভোটের ময়দানে নামাতে উঠেপড়ে লেগেছেন। প্রচারে নামার আগে বর্ষীয়ান বিধায়কের বাড়ি গিয়েছেন। আবার মানগোবিন্দবাবুর সঙ্গেও বারবার কথা বলেছেন। যদিও দু’তরফকে এখনও একসঙ্গে দেখা যায়নি প্রচারে। আবার এর মধ্যেই বনমালীর ঘনিষ্ঠ এক নেতা নির্দল প্রার্থী হয়ে তৃণমূলের বাড়া ভাতে ছাই ফেলতে উঠেপড়ে লেগেছে বলে খবর। তবে সরাসরি প্রচারে না নামার কোনও উত্তর দিচ্ছেন না বনমালীবাবু। ঘনিষ্ঠ মহলে তাঁর ক্ষোভ, “আমি চোর না ডাকাত! কী কারণে দল আমাকে প্রার্থী করল না, সেটা তো জানা দরকার। তা না হলে দলের কাছে এক ‘অভিযুক্ত’ নেতা হয়ে কী করে মানুষের কাছে ভোট চাইতে যাবে? অভিযুক্তকে পাশে নিয়ে ঘুরলে তো প্রার্থীর ভাবমূর্তিই খারাপ হবে।” আবার মানগোবিন্দবাবু বা তাঁর অনুগামীরা ভোট-প্রচারে নামলেও আন্তরিকতা নিয়ে দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে।

ভাতার থানার ১৪টি পঞ্চায়েত ও বর্ধমান থানার দুটি মিলিয়ে মোট ১৬টি পঞ্চায়েত নিয়ে ভাতার বিধানসভা। ১৯৭২ এই বিধানসভা থেকে জিতে কংগ্রেস সরকারের পূর্তমন্ত্রী হয়েছিলেন ভোলানাথ সেন। ১৯৭৭ সালেও জেতেন তিনি। তবে ১৯৮২ সালে সিপিএমের প্রার্থী সৈয়দ মহম্মদ মসীহের কাছে হেরে যান। ২০০৬ সালে এই কেন্দ্র থেকে জিতে বামফ্রন্টের মুখ্য সচেতক হন তিনি। গত বিধানসভা ভোটে সিপিএমের প্রার্থী শ্রীজিৎ কোনারকে ২৯৮ ভোটে হারিয়ে বিধানসভায় যান বনমালীবাবু। দু’বছর পরে, ২০১৩ সালের ত্রিস্তর পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভাতার থানার তিনটে জেলা পরিষদ আসনে তৃণমূলের জয়ের ব্যবধান ছিল ৫২ হাজার ৮২৫। বর্ধমানের দুটি পঞ্চায়েত যোগ করলে ভাতার বিধানসভা থেকে ৬০ হাজারের বেশি ভোটে তৃণমূল জেতে। কয়েক মাস পরে লোকসভা নির্বাচনে শুধুমাত্র ভাতার থানাতেই তৃণমূলের ভোট কমে ৪২ হাজার ৮২৫। পাশাপাশি গত লোকসভায় বিজেপি ভোট পায় ১৯ হাজার ৭৩৬। এ বারে অবশ্য গেরুয়া রং ফিকে হয়ে গিয়েছে বলে বাম, তৃণমূল দুই শিবিরেরই দাবি।

কোন্দল ছাড়াও তৃণমূলের আরেক কাঁটা এ বার প্রার্থীর বহিরাগত তকমা। সৈয়দ মহম্মদ মসিহ তো বলেই ফেললেন, “খুব পরিচিত মুখ বাদ দিলে বিধানসভা নির্বাচনে স্থানীয় প্রার্থী থাকলে সেই দল সুবিধা পায়। সাধারণ মানুষ মনে করেন, তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা স্থানীয় প্রতিনিধিই বিধানসভাতে বেশি করে তুলে ধরতে পারবেন।” সিপিএমের প্রার্থী বামাচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধারণা, “পঞ্চায়েত ও লোকসভায় মানুষের ভোটের প্রতিফলন হয়নি। এ বার মানুষের ভোটের প্রতিফলন হলে হিসেব পাল্টে যাবে।” সত্যিই কি পাল্টে যাবে? তৃণমূল প্রার্থী সুভাষ মণ্ডল আবার বলেন, “সে তো মানুষ বলবে। এই লড়াইতে আমি কে? মানুষ তো ভোট দেবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আর তাঁর উন্নয়নকে। আমার কাজ মানুষের কাছে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দেওয়া। সেটাই করছি।” আবার বহিরাগত প্রশ্নে তৃণমূলের জেলা পরিষদের সদস্য শান্তনু কোনারের কটাক্ষ, “সিপিএমের প্রার্থী তো ভাতার ছেড়ে বর্ধমানে থাকেন। আর সুভাষদা বাড়ি ছেড়ে ভাতারে। তাহলে আপন কে?”

অন্য বিষয়গুলি:

Assembly election 2016 cpm tmc
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE