শনিবার ১১ দিনে পড়ল অবস্থান কর্মসূচি। নিজস্ব চিত্র।
স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে দুর্গাপুরের সগড়ভাঙার গ্রাফাইটের ইলেকট্রোড ও কার্বনের নানা সামগ্রী উৎপাদনকারী একটি বেসরকারি কারখানায় টানা অবস্থান-বিক্ষোভ করছে তৃণমূল। শনিবার এই অবস্থান ১১ দিনে পড়েছে। এলাকার রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের প্রশ্ন, টানা আন্দোলনের নেপথ্যে আগামী বিধানসভার দিকে তাকিয়ে ভোটে শ্রমিক-মন ফিরে পাওয়ার কৌশল নেই তো? যদিও তৃণমূল ও তৃণমূল প্রভাবিত শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি নেতৃত্ব এই তত্ত্বে আমল দিতে চাননি।
কিন্তু কেন ‘জরুরি’ হয়ে পড়ল
এই আন্দোলন? রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের ব্যাখ্যা, প্রথমত, এই এলাকাটি দুর্গাপুর পশ্চিম বিধানসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত। এখানে ভোটের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ‘ফ্যাক্টর’, শ্রমিক-ভোট। কারণ, সগড়ভাঙা শিল্পতালুকে রয়েছে বেশ কিছু বেসরকারি বড় কারখানা। বিধানসভা এলাকার মধ্যে রয়েছে রাষ্ট্রায়ত্ত শিল্পক্ষেত্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পতালুক। গত বিধানসভা নির্বাচনে বাম-কংগ্রেস আসন-সমঝোতায় কংগ্রেসের টিকিটে জিতেছিলেন বর্তমানে আইএনটিটিইউসি-র জেলা সভাপতি বিশ্বনাথ পাড়িয়াল। সে বার তৃণমূলের প্রাপ্ত ভোট ছিল শতাংশের বিচারে ৩৩ শতাংশ। কিন্তু তার পরে ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে নিরিখে, প্রাপ্ত ভোটের নিরিখে বিজেপির (৫৪.২৯ শতাংশ ভোট পায়) কাছে অনেকটাই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল (২৯.৬৬ শতাংশ ভোট পায়)। এই পরিস্থিতিতে ‘শ্রমিক-স্বার্থে’ আন্দোলন করে শ্রমিক-মন পাওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল, দাবি বিরোধীদের একাংশের।
দ্বিতীয়ত, শিল্পাঞ্চল হওয়ায় স্বাভাবিক ভাবেই এই এলাকায় শ্রমিক সংগঠনের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ২০১৬-র বিধানসভা ভোটে বিরোধীদের এই আসনে জয়ের নেপথ্যে সিটু-সহ অন্য শ্রমিক সংগঠনগুলির ধারাবাহিক আন্দোলন যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়, তা স্বীকার করেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা। এ দিকে, ২০১৬-র পরেও এ পর্যন্ত টানা এলাকার শিল্পক্ষেত্রের বিষয়কে সামনে রেখে সিটু-কে পথে নামতে দেখা যাচ্ছে। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, বিএমএস-ও এলাকার সরকারি শিল্পক্ষেত্রে নানা আন্দোলন কর্মসূচি নিচ্ছে।
উল্টো দিকে, আইএনটিটিইউসি-র অন্তর্কলহ বারবার সামনে আসছে বলে দাবি রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের। এই কারখানাতেই আইএনটিটিইউসি-র শ্রমিক সংগঠনের দু’টি গোষ্ঠীকে পরস্পর মারামারি করতে দেখা যায় ১২ জুন। ৩০ সেপ্টেম্বর বিশ্বনাথবাবুর অনুগামী বলে পরিচিতেরা স্থানীয়দের নিয়োগের দাবিতে কারখানার প্রায় ২৫০ জনকে কাজ থেকে বার করে দেন বলে অভিযোগ ওঠে। এই ঘটনায় পরস্পরবিরোধী প্রতিক্রিয়া জানান বিশ্বনাথবাবু এবং সংগঠনের প্রাক্তন জেলা সভাপতি প্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর অনুগামী হিসেবে পরিচিত শেখ রমজান। ঘটনাচক্রে, এই ১১ দিনের অবস্থান চলার সময়েও অবস্থান মঞ্চের কাছেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টার ছেঁড়া এবং ২৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের একটি কার্যালয়ে গোবর লেপে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে।
এলাকার বিধায়ক বিশ্বনাথবাবুর দাবি, ‘‘দুষ্কৃতীদের মতো আচরণ করে দলের সুনাম নষ্ট করছে এরা।’’ ‘এরা’ কারা? বিশ্বনাথবাবু বলেন, ‘‘স্থানীয়দের বঞ্চিত করে অর্থের বিনিময়ে বাইরে থেকে লোক এনে কাজে লাগানো হচ্ছে। লুট চলছে। দুর্গাপুরের মানুষ জানেন, কারা এর নেপথ্যে রয়েছেন।’’ ভেঙে না বললেও বিশ্বনাথবাবুর তির যে সংগঠনে তাঁর বিরোধী বলে পরিচিত নেতৃত্বের দিকেই, তা ঘরোয়া আলোচনায় বলাবলি করছেন স্থানীয় তৃণমূলকর্মীদের একাংশ।
এই পরিস্থিতিতে আইএনটিটিইউসি-র এই টানা অন্তর্কলহ থেকে ‘ভাবমূর্তি’ পুনরুদ্ধারেই এই আন্দোলন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরাও। সিটু নেতা পঙ্কজ রায়সরকারের দাবি, ‘‘শাসক দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জেরে অশান্তি, মারামারি নিত্য দিনের ঘটনা। এই পরিস্থিতিতে শিল্প হয় না।’’ বিজেপি-র জেলা সভাপতি লক্ষ্মণ ঘোড়ুইয়ের দাবি, ‘‘দিনের পর দিন তৃণমূল আর আইএনটিটিইউসির গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব দেখে দুর্গাপুরের মানুষ তাঁদের থেকে মুখ ফিরিয়েছেন। এখন ওঁরা লোক দেখানো আন্দোলন করছেন।’’ যদিও, আন্দোলনে যোগ দেওয়া তৃণমূলের দুর্গাপুর ৩ ব্লক সভাপতি শিপুল সাহা বলেন, ‘‘এই আন্দোলনের সঙ্গে ভোটের কোনও যোগ নেই। এলাকাবাসীর দাবিপূরণের জন্যই আমাদের আন্দোলন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy