বাঁ দিকে, খোকন দাসের নেতৃত্বে ও ডান দিকে, রাসবিহারী হালদারের নেত্ৃত্বে মিছিল। নিজস্ব চিত্র
বিজেপির বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে একই সময়ে শহরে দু’টি মিছিল করল তৃণমূল। বর্ধমানের নীলপুরে শনিবার রাতে গোলমালের ঘটনা নিয়ে বিজেপি-তৃণমূল চাপান-উতোর চলল সোমবারও। তারই মধ্যে পৃথক মিছিলের জেরে ফের সামনে এল শহরে শাসক দলের ‘দ্বন্দ্ব’।
এ দিন বিকেলে বর্ধমান স্টেশন থেকে কার্জন গেট পর্যন্ত তৃণমূলের যে মিছিল হয়, সেটির নেতৃত্বে ছিলেন বিধায়ক রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়, খোকন দাস, জেলা আইএনটিটিইউসি-র সভাপতি ইফতিকার আহমেদরা (পাপ্পু)। মিছিলের জেরে কার্জন গেট চত্বর প্রায় আধ ঘণ্টা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে বলে অভিযোগ পথচারী ও যাত্রীদের অনেকের। প্রায় সেই সময়েই নীলপুরে জেলা যুব তৃণমূল সভাপতি রাসবিহারী হালদারের নেতৃত্বে আর একটি মিছিল হয়। দু’টি মিছিলের শেষ সভা থেকে তৃণমূল নেতারা বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হন। বিজেপির জেলা অফিস ভাঙার ‘হুঁশিয়ারি’ও দেওয়া হয় একটি সভায়। তবে তা গুরুত্ব দিতে নারাজ বিজেপি।
লোকসভা ভোটে বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভা এলাকায় তৃণমূল মাত্র ১,২৬৭ ভোটে এগিয়েছিল। তৃণমূলের ভরাডুবি হয় মূলত নীলপুরের ৫৩টি বুথে। সেখানে বেশ কয়েক হাজার ভোটে পিছিয়ে পড়েন দলের প্রার্থী। তার পর থেকেই মাঝেমধ্যে গোলমাল পাকছে এলাকায়। তৃণমূল সূত্রের দাবি, ওই এলাকায় দলের কর্মীদের মধ্যেই ‘বিভাজন’ রয়েছে। এক পক্ষ খোকন দাসের এবং অপর পক্ষ জেলা যুব সভাপতি রাসবিহারীর অনুগামী। এই ‘দ্বন্দ্বের’ সুযোগে বিজেপি ‘মাথাচাড়া’ দিচ্ছে বলে মনে করছে শহর তৃণমূলের একাংশ। শনিবার রাতে এলাকায় দু’দলের গোলমাল বাধে। পরস্পরের বিরুদ্ধে হামলা ও কার্যালয় ভাঙচুরের অভিযোগ করে বিজেপি ও তৃণমূল। পুলিশ ও র্যাফ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ দিন মিছিল শেষে জেলা তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক খোকন দাস দাবি করেন, ‘‘আমরা বারবার প্রশাসনকে বলছি। প্রশাসন না শুনলে আমাদেরই এগিয়ে যেতে হবে। বিজেপি আমাদের উপরে আক্রমণ করবে, এটা কত দিন বরদাস্ত করব!’’ আইএনটিটিউসি-র জেলা সভাপতি ইফতিকার আহমেদের হুঁশিয়ারি, ‘‘বিজেপি আমাদের অফিস দখলে চেষ্টা করছে। দল নির্দেশ দিলে, আমরা বিজেপির জেলা অফিসে যাব। একটা ইটও আস্ত থাকবে না।’’ সেই সময়েই নীলপুরে মিছিল করেন রাসবিহারী হালদার, আইনুল হকেরা। রাসবিহারীর দাবি, ‘‘বিজেপি ছেড়ে পদাধিকারীরা তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন। বিজেপির ভাঙন শুরু হয়েছে নীলপুরে। তাই ওরা গোলমাল পাকাতে চাইছে। এর পরে, গোলমাল করলে আমরাও ছেড়ে কথা বলব না।’’
কার্জন গেটের সভায় নাম না করে দলের একাংশের বিরুদ্ধেও সরব হন খোকন দাস। তাঁর দাবি, ‘‘মাত্র ছ’ঘণ্টার নোটিসে শহরের একাংশের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ে বিশাল মিছিল করা গিয়েছে। অনেকেরই আমাকে দল থেকে সরিয়ে দেওয়ার ইচ্ছা রয়েছে। দুর্দিনে দল করেছি। যাঁরা ৩৪ বছর আমাদের অত্যাচার করে এখন মাথায় চাপতে চাইছে, তা হতে দেব না। আজকের মিছিলই বলছে, তৃণমূলের কর্মীরা কার সঙ্গে আছেন।” রাসবিহারীর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ সব জানি না। দল যা বলছে, সেটাই করছি।’’
বিজেপির বর্ধমান দক্ষিণ বিধানসভার আহ্বায়ক কল্লোল নন্দনের পাল্টা দাবি, ‘‘যতটা গর্জাচ্ছে, ততটা বর্ষানোর ক্ষমতা তৃণমূলের নেই। আমরাও বুধবার নীলপুরে মিছিল করব। সেখানেই নেতারা জবাব দেবেন।’’ তাঁর আরও দাবি, ‘‘এ দিন শহরে দু’টি মিছিল থেকেই তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের বিষয়টি বোঝা গেল। তৃণমূলের অফিস ভাঙার পিছনেও সেটারই ছায়া রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy