লক্ষ্মী হেমব্রম। নিজস্ব চিত্র
জেলা জুড়ে আবাস তালিকার কথা তুলে ধরে তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ করছে বিরোধীরা। তৃণমূল যদিও সে অভিযোগ মানছে না। এমন এক আবহে, সামনে এল এক অন্য ছবি। তৃণমূল পরিচালিত রানিগঞ্জের তিরাট পঞ্চায়েতের প্রধান লক্ষ্মী হেমব্রম এখনও সপরিবার থাকেন মাটির বাড়িতে। তবে, চলতি বছরে পাকা বাড়ি পাওয়ার জন্য প্রশাসনের কাছে আর্জি জানিয়েছেন তিনি।
তিরাট গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, এক চিলতে মাটির দেওয়াল, টালির বাড়ি দেওয়া এক কামরার বাড়ি লক্ষ্মীর। বাড়িতে রয়েছেন মা বুদনি হেমব্রম, বাবা বিশ্বনাথ হেমব্রম এবং লক্ষ্মী। বছর ৪৭-এর বুদনি এখনও রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজ করেন। বাবা অসুস্থ।
ওই বাড়িরই নিকানো দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে বুদনি সংবাদমাধ্যমের একাংশের কাছে জানান, আবাস যোজনায় তাঁদের নাম নথিভুক্ত হয়নি। চলতি বছরের বর্ষায় একটি গাছ তাঁদের বাড়িতে পড়ে যায়। বাড়ির চালার একাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। লক্ষ্মী বলেন, “মাটির বাড়ির ক্ষতি হয়েছিল। বিডিও (রানিগঞ্জ) ও পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনোদ নুনিয়ার কাছে সহায়তার জন্য লিখিত আর্জি জানিয়েছিলাম।” তবে তাতে হাল হয়েছিল কি না, সে বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেননি। তাঁর সংযোজন: পঞ্চায়েত থেকে পাওয়া মাসিক পাঁচ হাজার টাকা ও বুদনির মজুরির টাকা জমিয়ে মাটির বাড়িটি মেরামতি করেছেন। পাশেই ১০ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি ঘর এবং আট ফুট চওড়া বারান্দা-সহ একটি পাকা বাড়ি খাড়া করেছেন। কিন্তু সে বাড়ির মেঝে এখনও মাটির। বাড়ির দেওয়ালে পলেস্তরা পড়েনি এখনও। নেই দরজা ও জানলাও।
কিন্তু প্রধান হয়েও কেন এই হাল? লক্ষ্মী জানাচ্ছেন, ২০১৩-য় ‘ন্যাশনাল সোসিয়ো-ইকনমিক কাস্ট সেনসাস’-এর সমীক্ষার ভিত্তিতে আবাস যোজনার উপভোক্তাদের যে তালিকা তৈরি হয়, তাতে তাঁদের নাম ছিল না। সূত্রের খবর, ২০১৮-য় ওই তালিকায় পঞ্চায়েত যাঁদের নাম নেই, তাঁদের নাম নথিভুক্ত করিয়েছিল। সে সময়েও তাঁদের নাম ওই তালিকায় নথিভুক্ত করা হয়নি। সে সময় অবশ্য লক্ষ্মী প্রধান ছিলেন না। তবে এ জন্য পঞ্চায়েত বা স্থানীয় প্রশাসনকে দায়ী করেননি লক্ষ্মী। তাঁর কথায়, “আবাসের জন্য আবেদন করার বিষয়টিই আমরা জানতাম না।”
তবে, বিডিও (রানিগঞ্জ) অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, চলতি বছরের জুনে লক্ষ্মী যাতে বাড়ির ব্যবস্থা করা হয়, সে বিষয়ে লিখিত আবেদন জানিয়েছিলেন। রানিগঞ্জ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি বিনোদ নুনিয়া বলেন, “লক্ষ্মী হেমব্রমের অবশ্যই পাকা বাড়ি পাওয়া উচিত। কিন্তু ওঁকে তা পাইয়ে দেওয়ার এক্তিয়ার আমার নেই।” কিন্তু এখনও পর্যন্ত লক্ষ্মীর জন্য পাকাবাড়ির কী ব্যবস্থা করা হয়েছে, সে প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য করতে চাননি অভীক।
যদিও, এর পরেও, কটাক্ষ আসছে বিরোধী শিবির থেকে। সিপিএমের রাজ্য কমিটির সদস্য পার্থ মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, “তৃণমূলের লোকজনের ক্ষেত্রে এমন ঘটনা ঘটে থাকলে, তা বিস্ময়ের।” বিজেপির সহ-সভাপতি শ্রীদীপ চক্রবর্তীর প্রতিক্রিয়া, “দু’-এক জন সৎ লোক তৃণমূলে থাকতেই পারেন। কিন্তু তা দিয়ে সামগ্রিক ভাবে দলটি যে দুর্নীতিগ্রস্ত নয়, এটা প্রমাণিত হয় না।” ঘটনাচক্রে, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা ও রাজ্যে তৃণমূলের বিরুদ্ধে আবাস-দুর্নীতির অভিযোগ তুলে গলা চড়াচ্ছেন বিরোধীরা। এ বিষয়ে খোদ লক্ষ্মীর বক্তব্য, “নির্দিষ্ট সমীক্ষার ভিত্তিতে আবাস তালিকা তৈরি হচ্ছে। দলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ ভিত্তিহীন।” পাশাপাশি, তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক ভি শিবদাসন বলেন, “আমাদের দলে সবাই যে সততার পথেই চলেন, লক্ষ্মী তার প্রমাণ।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy