Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪

নেতা খুন ব্যক্তিগত আক্রোশে, ইনসান হত্যাকাণ্ডে দাবি পুলিশের

ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন হতে হয়েছে কালনার তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিককে, তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

কেদারনাথ ভট্টাচার্য
কালনা শেষ আপডেট: ১৯ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৩:১০
Share: Save:

ব্যক্তিগত আক্রোশে খুন হতে হয়েছে কালনার তৃণমূল নেতা ইনসান মল্লিককে, তদন্তে নেমে এমনই তথ্য পেয়েছে পুলিশ। তবে ব্যক্তিগত আক্রোশের সঙ্গে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বও রয়েছে কি না, উঠেছে সে প্রশ্ন।

সম্প্রতি কাটোয়া থানা এলাকা থেকে তরল মাদক-সহ গ্রেফতার করা হয় খোকন শেখ ও অশোক বাগ ওরফে গ্যাঁড়াকে। পুলিশের দাবি, ইনসান খুনেরও মূল চক্রী কাঁকুরিয়া পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা খোকন। পুলিশের দাবি, জেরায় খোকন তাদের জানিয়েছেন, খুনে গ্যাঁড়াকে ‘সুপারি কিলার’ হিসাবে নিয়োগ করেছিলেন তিনি। ঘটনার রাতে খোকনের বাইকের পিছনে বসেই গ্যাঁড়া গুলি চালিয়েছিল, দাবি পুলিশের।

বুধবার ধৃতদের কালনা আদালতে তোলা হলে ১৪ দিন পুলিশ হেফাজত হয়। পূর্বস্থলী থেকে একটি অন্য মামলায় ধৃত সামাদ শেখ ও হাফিজুল ইনসানকেও এই মামলায় গ্রেফতারের অনুমতি চায় পুলিশ। সে আবেদন মঞ্জুর হয়। পুলিশের দাবি, ঘটনার রাতে বেগপুরের বাসিন্দা সামাদ ও হাফিজুল নানা তথ্য দিয়ে সাহায্য করেছিলেন খোকনকে।

সপ্তাহ দুয়েক আগে দলীয় কার্যালয় থেকে মোটরবাইকে ফেরার পথে গুলিতে খুন হন কালনা ১ পঞ্চায়েত সমিতির কৃষি কর্মাধ্যক্ষ ইনসান মল্লিক। দুটি গুলি ছোড়া হয়েছিল। একটি তাঁকে ছুঁয়ে বেরিয়ে গেলেও অন্যটি উরুতে গেঁথে যায়। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে মারা যান তিনি। পুলিশের দাবি, জেরায় ধৃতেরা তাদের কাছে স্বীকার করেছে ওই নেতা কোন রাস্তা দিয়ে কার্যালয়ে আসতেন, কতক্ষণ থাকতেন, কখন বেরোতেন, সবই দীর্ঘ দিন ধরে নজরে রাখা হয়েছিল।

কোন আক্রোশে এই নজরদারি?

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে সুলতানপুর পঞ্চায়েতের প্রধান সুকুর শেখ খুন হন। অভিযোগের তালিকায় নাম ছিল খোকনের। ইনসানের অনুগামীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরেই বিরোধী গোষ্ঠীর লোক ছিলেন খোকন। সুকুর শেখ খুনে তাঁকে ইচ্ছাকৃত ভাবে ফাঁসানো হয়েছে বলেও দলের স্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করেছিলেন তিনি।

খোকনের দাদা গগন শেখও ইনসান খুনের মামলায় অভিযুক্ত। আগে তৃণমূলে থাকলেও লোকসভা ভোটের পরে বিজেপিতে যোগ দেন তিনি। তৃণমূলের দাবি, ইনসানের সঙ্গে ‘টক্কর’ দিতে না পেরেই দল ছাড়েন তিনি। পুলিশের দাবি, প্রধান খুনে নাম জড়ানোর পর থেকেই পলাতক ছিলেন খোকন। তখন থেকে ইনসান মল্লিককে খুনের ছক কষা হয় বলেও পুলিশের দাবি। তদন্তকারীদের দাবি, জেরায় খোকন তাঁদের জানিয়েছেন, ইনসান তাঁর ‘ক্ষতি’ করেছিলেন।

পুলিশের দাবি, সাধারণত সন্ধ্যার পরে দলীয় কার্যালয়ে এসে মিনিট ২০ কাটিয়ে সাড়ে ৬টা নাগাদ ফিরে যেতেন ইনসান মল্লিক। তবে খুনের রাতে দলীয় কার্যালয়ের পাশের জমিতে চাষ চলায় দেরি হয় তাঁর। ৮টার পরে বেরোন তিনি। অভিযোগ, পাকা রাস্তা থেকে মোরাম রাস্তায় নামার পরেই একটি মোটরবাইক তাঁর পিছু নেয়। একটি কাঠগোলার আগে পাশাপাশি এসে গুলি করা হয় তাঁকে। তদন্তকারীদের দাবি, নেতার রুটিন না জানলে ওই দিনই যে তিনি একা ফিরছেন তা জানা সম্ভব ছিল না।

পুলিশ জানায়, ধৃত অশোকের নামে বিভিন্ন জেলায় বহু সমাজবিরোধী কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে। মেমারি মাঠপাড়ার ওই বাসিন্দা হুগলিতেই বেশি থাকতেন। খুনের রাতে তিনি ট্রেনে করে ধাত্রীগ্রাম স্টেশনে আসেন। সেখান থেকে খোকন তাঁকে বাইকে নিয়ে যান বলেও জেনেছে পুলিশ। কর্মাধ্যক্ষকে খুনে গগন শেখ-সহ আরও দুই বিজেপি নেতার নাম রয়েছে। তিন জনেই পলাতক। ভাইয়ের কাণ্ডে দাদারও মদত ছিল কি না, উঠছে সেই প্রশ্নও।

বিজেপির জেলা সম্পাদক ধনঞ্জয় হালদার অবশ্য দাবি করেন, ‘‘আমাদের দলের যাঁরা জড়িত তাঁদের পুলিশ মিথ্যা মামলায় ফাঁসিয়েছে। তবে খোকন আমাদের কেউ নয়।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kalna TMC Leader Murder Police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy