Advertisement
০৪ নভেম্বর ২০২৪
Illegal Mining

কয়লা চুরিতে হেরিটেজ বিপন্ন, দাবি বিধায়কের

পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘বিধায়ক যে অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

নারায়ণকুড়িতে সুদৃপ্ত ঠাকুর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নারায়ণকুড়িতে সুদৃপ্ত ঠাকুর। বুধবার। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
রানিগঞ্জ শেষ আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:২৫
Share: Save:

কয়লা ও বালি চুরির দাপটে বিপন্ন হচ্ছে ঐতিহ্যশালী স্থাপত্য, অভিযোগ তুললেন তৃণমূল বিধায়ক। রানিগঞ্জে দামোদর লাগোয়া নারায়ণকুড়ি গ্রামে প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত নানা স্থাপত্য এ সবের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে বুধবার দাবি করেন আসানসোল দক্ষিণের বিধায়ক তথা এডিডিএ-র চেয়ারম্যান তাপস বন্দ্যোপাধ্যায়। বিষয়টি পুলিশ-প্রশাসনকেও জানিয়েছেন বলে তাঁর দাবি। পুলিশ কমিশনার সুকেশ জৈন বলেন, ‘‘বিধায়ক যে অভিযোগ করেছেন, তা খতিয়ে দেখা হবে।’’

দামোদরের ধারে নারায়ণকুড়ির মথুরাচণ্ডী মন্দির প্রাঙ্গণে মকরস্নান উপলক্ষে আয়োজিত মেলায় এ দিন গিয়েছিলেন তাপসবাবু। উইলিয়াম কারের সঙ্গে যৌথ মালিকানায় দ্বারকানাথ সেখানে খনি চালু করেছিলেন। মন্দির লাগোয়া দামোদরে নির্মিত জেটি, খনিমুখ, কয়লা তোলার ঘর, প্রশাসনিক ভবন, বাংলো এখন ভগ্নস্তূপে পরিণত হয়েছে। তাপসবাবু জানান, রাজ্য সরকার এ সবকে ‘হেরিটেজ’ ঘোষণা করেছে। এডিডিএ কর্তৃপক্ষ মন্দিরের সৌন্দর্যায়নে দেড় কোটি টাকা বরাদ্দ করে কাজ শুরু করেছে। ধ্বংসস্তূপগুলি সংরক্ষণের পরিকল্পনাও আছে সংশ্লিষ্ট দফতরের।

এর পরেই তাপসবাবুর অভিযোগ, ‘‘চোরেরা হেরিটেজ এলাকায় কয়লা কাটছে। এমন চলতে থাকলে ধ্বংস্তূপগুলিও হারিয়ে যাবে। বালির দুষ্কৃতীদের দৌরাত্ম্যে দামোদরের গতি বিপন্ন হচ্ছে। এলাকার দশ শতাংশ মানুষের এ ধরনের কাজকর্মের জেরে ৯০ শতাংশ মানুষ বিপন্ন হতে বসেছেন। এর বিরুদ্ধে স্থানীয় বাসিন্দাদের সরব হতে হবে। আমিও পুলিশ-প্রশাসনকে জানিয়েছি।”

তাঁর এই বক্তব্য নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাপান-উতোর শুরু হয়েছে। তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারি এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি। রানিগঞ্জের সিপিএম বিধায়ক রুনু দত্তের প্রতিক্রিয়া, ‘‘এতেই প্রমাণ, বারবার কয়লা, বালির অবৈধ কারবার নিয়ে আমাদের তোলা অভিযোগ সত্য।’’ বিজেপি নেতা সন্দীপ গোপের পাল্টা অভিযোগ, ‘‘শাসকগোষ্ঠীর মদত ছাড়া, অবৈধ কারবার চলতে পারে না। তাই ওঁদের দলের তরফেও প্রতিরোধে নামা উচিত। আসলে তাপসবাবুরা বুঝতে পারছেন, এ সবের জন্য স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হয়ে রয়েছেন। তাই এ সব বলে মুখরক্ষার চেষ্টা করছেন।’’

এ দিনই হেরিটেজ এলাকা ঘুরে যান ঠাকুর পরিবারের সদস্য সুদৃপ্ত ঠাকুর। তাঁর সঙ্গে ছিলেন দ্বারকানাথকে নিয়ে গবেষণারত কাজী নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, আসানসোল রামকৃষ্ণ মিশনের শিক্ষক শুভজিৎ সরকারেরা। তাঁরা স্কটল্যান্ডের এডিনবরা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলেজ অব আটর্সের অধ্যাপক এডওয়ার্ড হলিসের সঙ্গে যৌথ ভাবে এ নিয়ে গবেষণা করছেন। সুদৃপ্তবাবু মেলা প্রাঙ্গণে দ্বারকানাথের মূর্তিতে মালা দেন। তিনি বলেন, ‘‘প্রায় দু’শো বছরের স্মৃতিবিজড়িত স্থাপত্য সংরক্ষণে নারায়ণকুড়ির মানুষের আগ্রহ দেখে আমি অভিভূত। দ্বারকানাথের বাংলোয় অবশিষ্ট বলতে তিনটি দেওয়ালের ভগ্নাংশ টিকে রয়েছে। তা আগলে রাখতে মথুরাচণ্ডী মন্দির হেরিটেজ কমিটি চেষ্টা চালাচ্ছে। সরকার আগ্রহ দেখানোতেও আমি খুশি।” ওই কমিটির সদস্য গৌতম চৌধুরী, বিশ্বজিৎ পালদের দাবি, দীর্ঘ আন্দোলনের পরে, এই এলাকা ‘হেরিটেজ’ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। তা সংরক্ষণে দ্রুত ব্যবস্থা প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Illegal Mining Heritage Building Rani Gunj
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE