প্রতীকী ছবি।
বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না তৃণমূলের। মেমারিতে দলীয় কার্যালয় থেকে কোভিড টিকার কুপন, রেশন সামগ্রী বিলির অভিযোগ উঠেছে আগেই। এ বার চাকরি দেওয়ার নামে দলের কর্মীদের কাছ থেকে মেমারি ২ পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী মামনি মুর্মু টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। বিধায়ক (মন্তেশ্বর), ব্লক তৃণমূলের কাছে অভিযোগ করেছেন তাঁরা। অভিযোগ জানানোর একটি ভিডিয়ো (সত্যতা যাচাই করেনি আনন্দবাজার) ‘সোশ্যাল মিডিয়া’য় ‘ভাইরাল’ হয়েছে। মামনিদেবীর অবশ্য দাবি, ‘‘আমাকে ফাঁসানোর জন্য মিথ্যা অভিযোগ করে ভিডিয়ো ভাইরাল করা হয়েছে। পরিকল্পিত ভাবে প্রতিহিংসা নেওয়ার জন্য চক্রান্ত করা হয়েছে।’’ তবে কে, কেন ‘চক্রান্ত’ করেছে, ভাঙেননি তিনি।
ভিডিয়োয় দেখা যাচ্ছে, মেমারির রুকাশপুরের রাজকুমার মণ্ডল ও কাপাশিট গ্রামের আর এক যুবক নিজেদের তৃণমূল কর্মী পরিচয় দিয়ে মামনিদেবীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন। রাজকুমারের দাবি, ছেলে যাতে সরকারি চাকরি পান তাই তাঁর বাবা-মা ওই নেত্রীর বাড়ি গিয়ে টাকা দিয়ে এসেছেন। কিন্তু সরকারি কাজ পাওয়ার আশায় টাকা দেওয়াও অপরাধ? রাজকুমারের দাবি, ‘‘আমরা খুব গরিব। চাকরি পাওয়ার আশায় এ রকম করেছি।’’
অন্য জন অবশ্য সরাসরি নেত্রীকে নন, মেমারি ২ ব্লকের তফশিলি ও জনজাতি শাখার সভাপতি বাপি মান্ডিকে টাকা দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন। তাঁর অভিযোগ, চাকরি না হওয়ায় টাকা ফেরত চান তিনি। তখন বাপি তাঁকে জানান, টাকার বেশির ভাগ মামনিদেবীর কাছে ও কিছুটা যে বেসরকারি সংস্থায় চাকরির কথা হয়েছিল, সেখানে দেওয়া হয়েছে। পরে, বাপি নিজেও ব্লক তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে সভানেত্রীর নামে অভিযোগ করেছেন। তবে অভিযোগে তাঁর নাম জড়ানো নিয়ে কিছু বলতে চাননি তিনি।
তৃণমূল সূত্রে জানা যায়, ভিডিয়োটি ছড়ানোর পরে, সপ্তাহখানেক আগে রাজ্যের মন্ত্রী তথা ওই এলাকার বিধায়ক সিদ্দিকুল্লা চৌধুরী ওই সভানেত্রী ও অভিযোগকারী দুই কর্মীকে ডেকে পাঠান। বছর তিরিশের রাজকুমার অভিযোগ জানিয়ে চিঠিও দেন তাঁকে। রাজকুমার বলেন, ‘‘ওই চিঠির ‘রিসিভড্ কপি’ বিধায়ক আমাকে দেননি। তবে চিঠিতে পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রীর কার্যকলাপ তুলে ধরেছি। উনি আমাকে গ্রুপ-ডি পদে চাকরি দেওয়ার নাম করে এক লক্ষ ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন। দু’কাঠা জমি বিক্রি করে ৬ অগস্ট বাড়িতে গিয়ে ওই টাকা দেওয়া হয়েছে। তার পরে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মাধ্যমে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে সাত দিনের প্রশিক্ষণ হয়। মামনিদি গাড়ি করে আমাদের পাঠান। সেখানে গিয়ে দেখি, অক্সিজেন সিলিন্ডার বইতে হচ্ছে। মিথ্যা প্রতিশ্রুতির পরে, দেড় মাস পার হয়ে গেল। কাজ ও টাকা, কোনওটাই পেলাম না।’’
কাপাশিট গ্রামের যুবকেরও অভিযোগ, ‘‘বাপি মান্ডিকে তিন দফায় দু’লক্ষ ৪০ হাজার টাকা দিয়েছি। এখন টাকা ফেরত চাইতে গেলে বাপি জানাচ্ছেন, ওই টাকার মধ্যে মামনিদিকে দেড় লাখ আর ওই স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাকে ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হয়েছে।’’ বাপির অবশ্য দাবি, “বিভিন্ন জনের কাছে চাকরি দেওয়ার নাম করে পঞ্চায়েত সমিতির সভানেত্রী টাকা নিয়েছেন, সেটাই ব্লক কার্যালয়ে চিঠি দিয়ে জানানো হয়েছে।’’
মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লা অবশ্য অভিযোগের কথা মানেননি। তিনি বলেন, “এলাকার বাসিন্দা হিসাবে মামনি যোগাযোগ করে দিয়েছে। কিন্তু ভিডিয়োয় যে অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা ঠিক নয়।’’ ব্লক তৃণমূল সভাপতি (মেমারি ২) মহম্মদ ইসমাইলের দাবি, “অভিযোগ পেলে, দলকে জানাব। আমরাও খতিয়ে দেখব।’’
ওই এলাকার বাসিন্দা, সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অশেষ কোনারের কটাক্ষ, “তৃণমূলের কোনও নীতি-নৈতিকতা নেই। সে জন্য দলের কর্মীদের সঙ্গেও প্রতারণা করতে বাধে না!” তৃণমূলের এসটি শাখার সভাপতি তথা দলের রাজ্যের অন্যতম মুখপাত্র দেবু টুডু বলেন, “বিভিন্ন জায়গা থেকে অভিযোগ শুনছি। স্থানীয় নেতৃত্বকে খোঁজ নিয়ে দেখতে বলা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy