Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
TMC Inner clash

জাতীয় পতাকা তোলার অনুষ্ঠানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর বিবাদ, আসানসোলে উত্তেজনা

গ্রামে জাতীয় পতাকা তোলার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি করে আনা হয় পাশের ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলরকে। অথচ, অভিযোগ আমন্ত্রণই নাকি পাননি বর্তমান কাউন্সিলর! তা নিয়েই গোলমাল।

প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব।

প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রকাশ্যে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। — নিজস্ব চিত্র।

আনন্দবাজার অনলাইন সংবাদদাতা
আসানসোল শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০২৪ ১৬:৪৭
Share: Save:

প্রজাতন্ত্র দিবসের পতাকা উত্তোলন ও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে গোলমালে উত্তেজনা পশ্চিম বর্ধমানের আসানসোলের ফতেপুর গ্রামে। গন্ডগোলে বন্ধ করে দিতে হয় অনুষ্ঠান।

ফতেপুর গ্রামে ক্ষমতার ভরকেন্দ্র মূলত দু’টি। প্রথমত, ষোলোআনা কমিটি। এই কমিটিই গ্রামের যাবতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। কমিটি আগাগোড়া তৃণমূল ঘনিষ্ঠ। অন্য দিকে, সেন পরিবার, তাঁরাও তৃণমূল সমর্থক। সেন পরিবারের তরফ থেকে পতাকা উত্তোলনের অনুষ্ঠান করা হয়। তাতে যোগ দেন গ্রামবাসীদের একাংশ। এ বার পতাকা উত্তোলনের পাশাপাশি ছিল কম্বল বিতরণের অনুষ্ঠানও। তা নিয়েই গ্রামবাসীদের একটি অংশের সঙ্গে বিবাদ শুরু হয় উদ্যোক্তাদের। কারণ, অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে পাশের ওয়ার্ডের বাসিন্দা তথা বাম আমলের কাউন্সিলর রোহিত নুনিয়াকে। স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সমিত মাজিকে বাদ দিয়ে কেন পাশের ওয়ার্ডের প্রাক্তন কাউন্সিলরকে অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি করা হল, তা নিয়ে দু’তরফের মধ্যে চাপানউতোর শুরু হয়। গ্রামের ষোলোআনা কমিটির অভিযোগ, রোহিত জমি মাফিয়া। গ্রামের গরিবদের মধ্যে কম্বল বিলি করে গ্রামের জমি দখল করার পরিকল্পনা রয়েছে তাঁর। যদিও সেন পরিবার এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে। দু’পক্ষের গোলমালে পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠান মাঝপথেই বন্ধ করে দিতে হয়। দু’পক্ষে রীতিমতো হাতাহাতি শুরু হয়ে যায়। শেষ পর্যন্ত হস্তক্ষেপ করে পুলিশ। এর জেরে যে জায়গায় অনুষ্ঠান হওয়ার কথা ছিল, সেখান থেকে পতাকা স্তম্ভ তুলে নিয়ে যাওয়া হয় সেন পরিবারের বারান্দায়। সেখানে পতাকা উত্তোলন করেন রোহিত। অন্য দিকে, গ্রামের ষোলআনা কমিটিও আলাদা করে পতাকা উত্তোলন করে ক্লাবের সামনে।

ষোলআনা কমিটিকে না জানিয়ে যাঁরা রোহিতকে আমন্ত্রণ করেছিলেন, তাঁদের দাবি, বর্তমান কাউন্সিলর সেন পরিবার বা ওই এলাকার কোনও উন্নয়ন করেন না। তিনি একটি বিশেষ গোষ্ঠীকে সমর্থন করেন এবং কেবল তাদেরই উন্নয়ন করেন। সে জন্যই তাঁরা পাশের ওয়ার্ডের নেতাকে ডেকে এনেছিলেন।

স্থানীয় কাউন্সিলর সুমিত বলেন, ‘‘যে রোহিত নুনিয়াকে নিয়ে এত গন্ডগোল তিনি বড় তোলাবাজ এবং জমি মাফিয়া। জোর করে জমি, ঘরবাড়ি কেড়ে নেওয়াই তাঁর কাজ। তারই প্রতিবাদ করেছে ফতেপুর গ্রামের ষোলআনা কমিটি। রোহিত বাম আমলে সিপিআইয়ের কাউন্সিলর ছিলেন। ওঁর ছেলে তৃণমুল কাউন্সিলর। দলের উচ্চ নেতৃত্বকে এ বিষয়ে জানানো হয়েছে। দল সঠিক সময় সিদ্ধান্ত নেবে।’’

এ বিষয়ে আসানসোল দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি এসএস কুলদীপ বলেন, ‘‘গ্রামের ষোলআনা কমিটি সাধারণ বাসিন্দাদের নিয়ে শান্তিপূর্ণ ভাবে যদি কোনও অনুষ্ঠান করে, তাহলে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু কেউ যদি গন্ডগোল করার চেষ্টা করে, পুলিশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবে।’’ আসানসোল দক্ষিণ থানার ইন্সপেক্টর কৌশিক কুন্ডু বলেন, ‘‘জাতীয় পতাকা উত্তোলন করাতে পুলিশ কোন রকম বাধা সৃষ্টি করেনি।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেন, ‘‘তৃণমূলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও বিষয় নেই। ছোটখাটো বিষয় হলেও হতে পারে। আমি দেখে নিচ্ছি। স্থানীয় কাউন্সিলর খুব ভাল ছেলে। তাঁর সঙ্গে কথা বলে নেব।’’ বিজেপির জেলা সভাপতি বাপ্পা চট্টোপাধ্যায় বলেন, ‘‘বামফ্রন্টের সময় যাঁরা গুন্ডা, মাফিয়া ছিলেন, তাঁরাই আজ তৃণমূলের পরিচালক। মানুষ বুঝতে পারছেন, কী চলছে।’’

প্রসঙ্গত, ২০২২ সালের ডিসেম্বরে আসানসোলের রামকৃষ্ণডাঙায় বিজেপি কাউন্সিলর চৈতালি তিওয়ারির উদ্যোগে আয়োজিত একটি কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে এসেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেখানে হুড়োহুড়িতে পদপিষ্ট হয়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। আহত হন আরও অনেকে। যা নিয়ে তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য রাজনীতি। একই জেলায় এ বারের প্রজাতন্ত্র দিবসেও কম্বল বিতরণ অনুষ্ঠানে গোলমালের ঘটনা ঘটল।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC police
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy