বারাবনির ৪ নম্বর খরাবর এলাকায় পুড়ল মোটরবাইক। ছবি: পাপন চৌধুরী।
দৃশ্য এক: জামগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়। স্কুলে মিড-ডে মিলের চাল, আলু, ছোলা বিতরণ হচ্ছে। আচমকা পরপর বোমা ফাটার আওয়াজ। গুলি চলার শব্দ। ঘটনায় হতচকিত অভিভাবক, পড়ুয়ারা। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক (টিচার ইনচার্জ) ফটিকবরণ কর্মকার বলেন, ‘‘খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় পড়ে গিয়েছিল সবাই। সবাইকে স্কুলের ভিতরে নিরাপদ জায়গায়নিয়ে আসা হয়।’’
দৃশ্য দুই: স্থানীয় মন্দিরে পুজো দিতে এসেছিলেন পেশায় ইসিএল কর্মী দিলীপ বাউড়ি। আচমকা তিনি দেখেন, মন্দিরের বাইরে দাঁড় করানো মোটরবাইকটা দাউ-দাউ করে জ্বলছে। তাঁর কথায়, ‘‘আমার কী দোষ! বাইকটা গেল।’’ তখন দিলীপবাবুর হাত ধরে অঝোরে কেঁদে চলেছেন মেয়ে, স্নাতক স্তরের ছাত্রী রুম্পা। মন্দিরের পুরোহিত প্রকাশচন্দ্র মুখোপাধ্যায় জানান, প্রায় ২৫ বছরের পুরনো এই মন্দিরে পুজো দিতে আসা ভক্তের দল বোমাবাজির শব্দ শুনেই ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। — দু’টি দৃশ্যই শনিবার বারাবনির খরাবর ৪ নম্বর এলাকার। এখানেই তৃণমূল-বিজেপি সংঘর্ষে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে দফায়-দফায় বোমাবাজি ও গুলি চলে বলে অভিযোগ। এই তাণ্ডবের মধ্যে পড়ে ত্রস্ত জনজীবন।
ঘটনাস্থলের অদূরেই প্রায় এক দশকের পুরনো চা, তেলেভাজার দোকান উজ্জ্বল ভাণ্ডারির। তিনি জানান, ঘটনার সময়ে কয়েক ঘণ্টা দোকানেই আটকে ছিলেন ক্রেতারা। ঝাঁপ ফেলে দেওয়া হয় দোকানের। তাঁর কথায়, ‘‘দোকানের পিছনেই বাড়ি। সপরিবার থাকি। এমন চলতে থাকলে ব্যবসা তো লাটে উঠবেই, জীবনও বিপন্ন হবে যে কোনও দিন।’’ ঘটনাস্থল থেকে মেরেকেটে ৩০০ মিটার দূরের পাড়ার বাসিন্দা মণিকা সাধু বলেন, ‘‘জোরে কিছু একটা ফাটার আওয়াজ পেয়ে বাড়ির বাইরে বেরিয়েছিলাম। দেখি, বোমা পড়ছে রাস্তায়। এমন দৃশ্য কখনও দেখিনি।’’
কে বা কারা ঘটনা ঘটিয়েছে, কেন ঘটিয়েছে, এ সব নিয়ে আগ্রহ নেই সাধারণ মানুষের। তাঁদের প্রায় প্রত্যেকেরই আর্জি, ‘‘এলাকায় রাজনৈতিক হিংসা, অশান্তি বন্ধ হওয়া দরকার।’’ তবে এলাকাবাসী যা-ই চান না কেন, রাজনৈতিক চাপানউতোর শনিবার রাত পর্যন্ত কিন্তু কমেনি মোটেই। এ দিন বিধাননগরের বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন বিজেপি কর্মী, দোমহানির বাসিন্দা কালীচরণ দাসকে দেখতে যান দলের কেন্দ্রীয় নেতা কৈলায় বিজয়বর্গীয়। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘আমরা রাষ্ট্রপতি শাসন চেয়েছি।’’ পাশাপাশি, যেখানে ঘটনা, সেখানে আজ, রবিবার ফের মিছিল করার কথা জানিয়েছে ভারতীয় জনতা যুব মোর্চা।
আসানসোলের বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়ের অভিযোগ, ‘‘২০১৯-এর লোকসভা ভোটের পরে, বিজেপির শক্তি এলাকায় আরও বেড়েছে। তাই তৃণমূল প্রতিহিংসার রাজনীতি করছে।’’ তৃণমূলের জেলা সভাপতি জিতেন্দ্র তিওয়ারির দাবি, ‘‘এত দিন এলাকায় কোনও অশান্তিই ছিল না। এখন নিজেদের মধ্যে গোষ্ঠী কোন্দল করে বিজেপি এলাকা অশান্ত করছে।’’ কোন্দলের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
এ দিকে, এলাকার ওয়াকিবহাল মহলের একাংশের মতে, ৮ ডিসেম্বর মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেলা সফরের আগে এমন ঘটনা নিঃসন্দেহে পুলিশের জন্য ‘বিড়ম্বনা’র কারণ হতে পারে। যদি, এ প্রসঙ্গে কোনও মন্তব্য না করতে চেয়ে আসানসোল-দুর্গাপুরের পুলিশ কমিশনার সুকেশকুমার জৈন বলেন, ‘‘ঘটনার তদন্ত চলছে।’’ পাশাপাশি, দুর্গাপুরে চিকিৎসাধীন গুলিবিদ্ধ বিজেপি কর্মীর শারীরিক অবস্থা প্রসঙ্গে বিধাননগরের ওই বেসরকারি হাসপাতালের ডেপুটি সুপার দেবব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘উনি আপাতত স্থিতিশীল। আইসিইউ-তে ভর্তি আছেন। গুলি শরীরের ভিতরেই আছে। বিশেষ পদ্ধতিতে ভিতরে জমে থাকা রক্ত বার করা হচ্ছে। রক্ত পুরো বার করার পরে, চিকিৎসার পরবর্তী ধাপে যাওয়া সম্ভব হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy