তখন চলছে ট্যাঙ্করটি সরানোর কাজ। —নিজস্ব চিত্র।
জাতীয় সড়কে উল্টে যাওয়া ট্যাঙ্কারের তলায় চাপা পড়ে মৃত্যু হল তিন জনের। আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আরও দু’জন। রবিবার সকালে দুর্ঘটনাটি ঘটে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া মোড়ে। পুলিশ জানায়, এ দিন সন্ধ্যা পর্যন্ত মৃতদের নাম-পরিচয় জানা যায়নি। এই ঘটনার জেরে ঘণ্টা তিনেক জাতীয় সড়কে যান চলাচল ব্যাহত হয়। দুর্ঘটনাগ্রস্ত ট্যাঙ্কারের চালক ও খালাসির খোঁজে তল্লাশি শুরু করেছে পুলিশ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন দুর্ঘটনাটি ঘটে সকাল পৌনে ৮টা নাগাদ। দুর্গাপুর স্টেশন রোড থেকে ট্যাঙ্কারটি যাচ্ছিল বর্ধমানের দিকে। মুচিপাড়া মোড়ে জাতীয় সড়কে উঠেই ট্যাঙ্কারটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। সেই সময়ে রাস্তার ধারে মাছ-সব্জি বিক্রি করতে বসেছিলেন কয়েক জন। বাজার করতে এসেছিলেন অনেকে। কেউ কেউ দাঁড়িয়েছিলেন বাস ধরার জন্য। ট্যাঙ্কারটি উল্টে গেলে একেবারে চাপা পড়ে যান তিন জন। দু’জন কোনও মতে বেঁচে যান। তবে তাঁদেরও চোট লেগেছে। মুচিপাড়ার বাসিন্দা স্বপ্না ঘোষ ভর্তি হয়েছেন বিধাননগরের একটি বেসরকারি হসাপাতালে। চণ্ডীচরণ দে নামে আহত আর এক জন বাঁকুড়ার ওন্দা এলাকার বাসিন্দা। তাঁকে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে।
দুর্ঘটনার সঙ্গে-সঙ্গে ছুটে আসেন আশপাশের মানুষজন। তাঁরাই প্রাথমিক ভাবে ট্যাঙ্কারের তলায় আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন। খবর পেয়ে পুলিশ পৌঁছয়। ক্রেন এনে ট্যাঙ্কার তোলার চেষ্টা হয়। কিন্তু তা করা যায়নি। পরে উন্নত মানের ক্রেন এনে প্রায় আড়াই ঘণ্টা পরে ট্যাঙ্কারটি সরানো সম্ভব হয়। ২ নম্বর জাতীয় সড়কে এখন সম্প্রসারণের কাজ চলছে। সে জন্য মুচিপাড়া মোড়ে চার লেনের জাতীয় সড়ক এখন কার্যত দুই লেনের হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই দুর্ঘটনার পরে জাতীয় সড়কে যান চলাচল প্রথমে একেবারে বন্ধ হয়ে যায়। পরে ট্রাফিক পুলিশ দু’একটি করে গাড়ি চলাচলের ব্যবস্থা করে। তবে ক্রেন এনে ট্যাঙ্কারটি তোলার চেষ্টা শুরু হলে যান চলাচল আবার স্তব্ধ হয়ে যায়। ছোট গাড়ি, মোটরবাইক শহরের ভিতরের রাস্তা দিয়ে কোনও রকমে চলে গেলেও বাস, ট্রাক আটকে পড়ে। সকাল পৌনে ১১টা নাগাদ ট্যাঙ্কারটি সরানোর পরে ধীরে-ধীরে যান চলাচল শুরু হয়। আরও আধ ঘণ্টা পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়।
দুর্ঘটনার জেরে যানজট ২ নম্বর জাতীয় সড়কে।
রবিবার সকালে দুর্গাপুরের মুচিপাড়া মোড়ে বিকাশ মশানের তোলা ছবি।
পুলিশ জানায়, মৃতদেহ তিনটি ময়না-তদন্তের জন্য দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। সন্ধ্যা পর্যন্ত কেউ দেহগুলি নিতে আসেননি। মৃতদের নাম-পরিচয়ও জানা যায়নি। খবর পেয়ে বীরভূমের কয়েক জন এসেছিলেন। কিন্তু দেহ এতটাই থেঁতলে গিয়েছে যে শনাক্ত করতে পারেননি তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আগে মুচিপাড়া মোড়ে জাতীয় সড়ক এবং সার্ভিস রোডের মাঝে রেলিং ছিল। অনেকখানি ফাঁকা জায়গা ছিল। সেখানেই মাছ-সব্জির পসরা সাজিয়ে বসতেন অনেক ব্যবসায়ী। জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের কাজ শুরু হওয়ার পরে সে সব ভেঙে সমান করে দেওয়া হয়েছে। এখন কার্যত রাস্তাতেই বসে বিক্রিবাটা সারেন কিছু খুচরো ব্যবসায়ী। স্থানীয় বাসিন্দা দুর্গাপদ দাস, উত্তম দাসেরা জানান, বাইরে থেকে মাছ ও সব্জি এনে মাঝে-মাঝে অনেকে বিক্রি করতে বসেন। কিন্তু তাঁরা স্থায়ী ভাবে বসেন না। ফলে, স্থায়ী ব্যবসায়ীরাও তাঁদের সে ভাবে চেনেন না। তাই মৃতদের পরিচয় জানতে অসুবিধা হচ্ছে।
যে এলাকায় দুর্ঘটনাটি ঘটে সেটি কাঁকসা থানা এলাকার মধ্যে পড়ে। কিন্তু কাছেই দুর্গাপুরের নিউটাউনশিপ থানা এবং কোকওভেন থানা। সেখান থেকেই প্রথমে পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। পরে এসে পৌঁছয় কাঁকসার পুলিশ। উদ্ধারকাজের তদারকি করেন আসানসোল-দুর্গাপুর কমিশনারেটের এডিসিপি (পূর্ব) অমিতাভ মাইতি। তিনি জানান, জাতীয় সড়ক সম্প্রসারণের জন্য মুচিপাড়া মোড়ের লেন সঙ্কুচিত করতে হয়েছে। তাতে রাস্তা সংকীর্ণ হয়েছে। স্টেশন রোড থেকে জাতীয় সড়কে উঠে কোনও ভাবে ট্যাঙ্কারটি নিয়ন্ত্রণ হারায়। চালক ও খালাসি পালিয়ে গিয়েছেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy