Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Death

ট্যাঙ্কের গর্ত কাটতে গিয়ে মৃত তিন

শুক্রবার সকালে ওই ঘটনায় মৃত তিন জনেই মন্তেশ্বরের দেনুড় পঞ্চায়েতের ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা।

পরিজনদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার, মন্তেশ্বরের ধেনুয়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

পরিজনদের হারিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার, মন্তেশ্বরের ধেনুয়া গ্রামে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ১৪ মার্চ ২০২০ ০২:১২
Share: Save:

পুরনো সেপটিক ট্যাঙ্ক ভরে গিয়েছে। সকাল থেকেই পাশে আরও একটি ট্যাঙ্কের জন্য গর্ত খুঁড়ছিলেন দু’জন। ফুট দশেকের গর্ত খোঁড়া হতেই আচমকা আশপাশ থেকে নোংরা জল, গ্যাসে ভরে যায় গর্তটি। নীচে হাঁসফাঁস করতে থাকা শ্রমিক জাকির শেখকে (৪২) বাঁচাতে গর্তে নামেন বাড়িক মালিক ফকির শেখ (৪১)। ছটফট করতে শুরু করেন দু’জনেই। তাঁদের বাঁচাতে নেমে পড়েন পাশে কর্মরত আর এক শ্রমিক লিয়াকত আলি শেখও (৩৬)। কিছুক্ষণের মধ্যেই শ্বাসরুদ্ধ হয়ে তিন জনেই মারা যান ওই গর্তে।

শুক্রবার সকালে ওই ঘটনায় মৃত তিন জনেই মন্তেশ্বরের দেনুড় পঞ্চায়েতের ধেনুয়া গ্রামের বাসিন্দা। পরে গ্রামের যুবকেরা গর্তের মধ্যে মই দিয়ে নেমে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটি-একটি করে দেহ টেনে উপরে তোলেন। ঘটনাস্থলে যান পুলিশ, প্রশাসনের কর্তারা। প্রত্যেকেরই দাবি, গ্রামাঞ্চলে এখনও পর্যাপ্ত সতর্কতা না নিয়ে সেপটিক ট্যাঙ্ক বা কুয়ো কাটা হয়। বিপদের সম্ভাবনা থাকে সব ক্ষেত্রেই।

কালনা মহকুমা হাসপাতালের সুপার কৃষ্ণচন্দ্র বরাই, মন্তেশ্বরের ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক সত্যপ্রকাশ পাত্ররা জানান, পরিত্যক্ত কুয়ো, সেপটিক ট্যাঙ্ক থেকে মিথেন, হাইড্রোজেন সালফাইডের মতো গ্যাস উৎপন্ন হয়। একটা সেপটিক ট্যাঙ্কের খুব কাছে আর একটা ট্যাঙ্ক হলে সেখানেও বিষাক্ত গ্যাস পৌঁছে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেকটা গভীর গর্তের মধ্যে অক্সিজেন সরবরাহও অনেক সময় কম হয়। এ দিনই তেমনই কিছু ঘটে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রণব রায়ও বলেন, ‘‘খোঁজ নিয়ে দেখছি। তবে ময়না-তদন্তের পরে পুরোটা বোঝা যাবে।’’

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামের মুসলিমপাড়ার ফকির শেখের বাড়িতে আরও দু’টি সেপটিক ট্যাঙ্ক রয়েছে। ন্যূনতম সাত-আট ফুট ব্যবধানে গর্ত খোঁড়া উচিত হলেও এ দিন ফুট দু’য়েক দূরেই নতুন গর্তটি খোঁড়া হচ্ছিল। জাকির মাটি কাটছিলেন। তাঁকে সাহায্য করছিলেন ফকির। বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ আচমকা পাশের ভরা ট্যাঙ্ক থেকে নোংরা জল বেরিয়ে এসে নতুন গর্তটি ভরে দেয়। জাকিরকে ছটফট করতে দেখে নেমে পড়েন ফকির। তবে দু’জনের কারও গায়েই দড়ি বাঁধা ছিল না। পরিস্থিতি দেখে চিৎকার শুরু করেন ফকির শেখের স্ত্রী নার্গিস বেগম ও বোন লালু বিবি। চিৎকার শুনে পাশের বাড়িতে কর্মরত খেতমজুর লিয়াকত ছুটে আসেন। তিনিও মই বা দড়ি না নামিয়ে কোনও সাবধানতা ছাড়াই গর্তে নেমে পড়েন। কিছুক্ষণের মধ্যেই নিথর হয়ে যায় তিনটি দেহ। পরে কালনার এসডিপিও শান্তনু চৌধুরী, মন্তেশ্বরের বিডিও বিপ্লবকুমার দত্ত গিয়ে দেহগুলি কালনা মহকুমা হাসপাতালে ময়না-তদন্তে পাঠান।

দেনুড় পঞ্চায়েতের প্রধান মকদুম হোসেন শেখ জানান, তিনটি পরিবারেরই মূল উপার্জনকারী ছিলেন মৃত তিন জন। তাঁদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দেন তিনি। কালনার মহকুমাশাসক সুমনসৌরভ মোহান্তি বলেন, ‘‘ওই পরিবারগুলিকে ত্রাণ দেওয়া হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের তরফে ক্ষতিপূরণ যাতে পাওয়া যায় তারও চেষ্টা করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Death Accident Septic Tank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy