শালপাতায় কারুকাজ। কাঁকসার কুলডিহা এলাকায়। নিজস্ব চিত্র।
প্রায় বছর দুই আগে, দুর্গাপুরের প্রশাসনিক সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেছিলেন, কাঁকসা ব্লক এলাকায় শালপাতার ‘ক্লাস্টার’ গড়ে তোলার কথা। কিন্তু মাঝে এক বার জায়গা দেখা হলেও, কাজের কাজ কিছু হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। শালপাতার কাজের সঙ্গে যুক্তদের দাবি, এই শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে গেলে, সরকারি উদ্যোগ খুবই জরুরি। যদিও কাঁকসা ব্লক প্রশাসনের দাবি, এ বিষয়ে কাজ অনেকটাই এগিয়েছে। দ্রুত ‘ক্লাস্টার’ তৈরি হবে।
কাঁকসা ব্লক জঙ্গলমহল এলাকা বলেই পরিচিত। ব্লকের বেশির ভাগ আদিবাসী গ্রামেই প্রায় প্রতিটি পরিবার শালপাতার কাজের সঙ্গে যুক্ত। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্লকে আদিবাসী গ্রামের সংখ্যা প্রায় ৭৫। ব্লকের ত্রিলোকচন্দ্রপুর, মলানদিঘি, গোপালপুর, বনকাটির মতো পঞ্চায়েত এলাকায়, সব থেকে বেশি এই শালপাতার কাজে যুক্ত রয়েছেন মানুষজন। মূলত পরিবারের মহিলারা পাতা তৈরির কাজ করে থাকেন। তবে আদিবাসীরা ছাড়াও, গরিব পরিবারের বহু মানুষ এই কাজে যুক্ত হয়েছেন।
এই কাজে যুক্তদের সঙ্গে কথা বলে জানা গিয়েছে, জঙ্গল থেকে শালপাতা তুলে এনে সেগুলিকে কাঠি দিয়ে সেলাই করে রোদে দু’দিন শুকোতে দেওয়া হয়। পরে, মহাজনেরা এসে গ্রাম থেকে সেগুলি কিনে নিয়ে যান। পাতা বিক্রেতারা জানিয়েছেন, এক হাজার পাতা বিক্রি করতে পারলে মাত্র ২৫০ টাকা মেলে। তার পরে সেই পাতা মহাজনেরা কিনে নিয়ে যন্ত্রের মাধ্যমে আরও ভাল সেলাই করে বাজারে বিক্রি করেন। পরিকাঠামোয় উন্নতি না হওয়ার কারণে, তাঁরা নিজেরা ভাল করে পাতা সেলাই করতে পারেন না বলে অভিযোগ। তা ছাড়া, বাজারজাত করার সমস্যা থাকায়, মহাজনের কাছে বিক্রি করাটাই সুবিধাজনক বলে মনে হয় তাঁদের।
কাঁকসার কুলডিহার বাসিন্দা সঙ্গীতা টুডু জানান, তাঁদের পরিবারের তিন জন মহিলা এই কাজ করেন। তিনি বলেন, “তিন জনে এক হাজার পাতা তৈরি করে বিক্রি করলে যে টাকা পাওয়া যায়, তা মোটেই তাঁদের পরিশ্রমের সঙ্গে মেলে না।” একই বক্তব্য ত্রিলোকচন্দ্রপুরের বড়বাঁধের মঙ্গলা হাঁসদাও। তিনি বলেন, “আমাদের মূল সমস্যা, সরাসরি বাজারে বিক্রি করতে না পারা। সে জন্য যন্ত্রপাতির প্রয়োজন। পাশাপাশি, প্রশিক্ষণেরও প্রয়োজন রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পরে, ভেবেছিলাম, ক্লাস্টার তৈরি হলে নিজেরা পাতা সেলাই শিখে বাজারজাত করতে পারব।” তাঁদের অভিযোগ, “কিন্তু প্রায় দু’বছর পরেও সেই কাজে উন্নতি তেমন হয়নি।”
কাঁকসা ব্লক প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘ক্লাস্টার’-এর মাধ্যমে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত মহিলাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। যন্ত্র পরিচালনার জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণও দেওয়া হবে। পাশাপাশি, এই পাতা বাজারজাত করার বিষয়টিও প্রশাসনের তরফে দেখা হবে। ব্লক প্রশাসনের কর্তাদের দাবি, একটি জায়গা নির্দিষ্ট করা হলেও, নানা জটিলতায় সেখানে ‘ক্লাস্টার’ গড়ে তোলা যায়নি। বিডিও (কাঁকসা) সুদীপ্ত ভট্টাচার্য বলেন, “রাজ্যের অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের সাহায্যে গোপালপুর পঞ্চায়েত এলাকায় একটি ক্লাস্টার তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy