Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Temple

এক রাতে পাঁচ মন্দিরে চুরি

মন্তেশ্বরের বেশ পুরনো গ্রাম গলাতুন। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে মন্দির।

গলাতুনে মন্দিরে চুরি, ভাঙা প্রণামী বাক্স। ছবি: সুদিন মণ্ডল

গলাতুনে মন্দিরে চুরি, ভাঙা প্রণামী বাক্স। ছবি: সুদিন মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মন্তেশ্বর শেষ আপডেট: ০১ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:৫৪
Share: Save:

ফের এক রাতে পাঁচ মন্দিরে চুরির অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমানের মন্তেশ্বরে।

শীত পড়তেই ফাঁকা রাস্তাঘাটের সুযোগ নিয়ে একের পরে এক দুষ্কর্ম ঘটছে মন্তেশ্বরের নানা গ্রামে। গত দু’মাসে মন্দির, দোকান, বাড়ি, ডাকঘর-সহ প্রায় ২১টি চুরির ঘটনা ঘটেছে, জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। রবিবার রাতেও দেনুড় অঞ্চলের গলাতুন গ্রামে তিনটি পাড়ার পাঁচটি মন্দিরে তালা ভেঙে চুরি হয়। বিগ্রহ, অলঙ্কার, বাসনপত্র, প্রণামীর টাকা সবই দুষ্কৃতীরা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ। বেড়েছে আতঙ্ক। প্রশ্ন উঠেছে পুলিশের ভূমিকা নিয়েও।

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (গ্রামীণ) ধ্রুব দাস বলেন, ‘‘তদন্ত শুরু হয়েছে। আশা করছি, দুষ্কৃতীদের দ্রুত গ্রেফতার করা হবে।’’ দেনুড় গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান মকদুম হোসেন শেখ জানান, আতঙ্ক দূর করতে গ্রামবাসীদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিটি পাড়ায় টহলদারি বিষয়ে আলোচনা করা হবে।

মন্তেশ্বরের বেশ পুরনো গ্রাম গলাতুন। গ্রামের বেশির ভাগ বাড়ির সঙ্গেই রয়েছে মন্দির। গ্রামবাসীর দাবি, সোমবার সকালে তারা দেখেন দুর্গা মন্দির ও সংলগ্ন রঘুনাথ মন্দির, মঙ্গলচণ্ডী মন্দির, মদনগোপাল মন্দির ও শিব মন্দিরের তালা ভাঙা। রায়পাড়ার বাসিন্দা প্রণব রায়, বাপ্পাদিত্য রায়দের অভিযোগ, দুর্গা মন্দিরের প্রণামী বাক্সে প্রায় আট হাজার টাকা, রঘুনাথ মন্দিরের সিংহাসনের রুপোর ছাতা, সোনার বেলপাতা, তুলসি পাতা, ও রুপোর পৈতে খোয়া গিয়েছে। ওই পাড়ার শিব মন্দিরের সোনার বেলপাতা ও রুপোর সাপ চুরি গিয়েছে বলেও অভিযোগ।

চক্রবর্তীপাড়ার মঙ্গলচণ্ডী মন্দিরের সেবায়েত গোবিন্দ চক্রবর্তীর অভিযোগ, দেবীর প্রায় পাঁচশো গ্রাম ওজনের রুপোর সিংহাসন, সোনার পৈতে, সোনার চোখ ও পিতল-কাঁসার বাসনপত্র চুরি গিয়েছে। দানবাক্সের তালাও ভাঙা, দাবি তাঁর। আবার গোস্বামীপাড়ার মদনগোপাল মন্দির থেকে বিগ্রহের মুকুট, টিকলি, চামর, গয়না চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় শ্যামসুন্দর গোস্বামী। মন্দির থেকে সূর্যদেবের স্ফটিকের বিগ্রহ চুরি গিয়েছে বলেও জানিয়েছেন তিনি। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, ঠান্ডা পড়ায় সন্ধ্যা থেকেই বেশির ভাগ বাড়ির দরজা-জানালা বন্ধ। রাস্তাঘাটেও লোক কম। এমন পরিস্থিতি চললে আরও শীতে কী হবে, ভেবে চিন্তায় তাঁরা।

শীতে দুষ্কর্মের প্রবণতা অবশ্য এই এলাকায় নতুন নয়। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে দুষ্কৃতীরা এলাকার দশটি মন্দিরের তালা ভেঙে চুরি করে। ২০১৫ সালে শীতকাল জুড়ে বাইশটি মন্দিরে চুরি হয়। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও মাঝেরগ্রাম এলাকায় এক রাতে পাঁচটি মন্দির থেকে চুরি যায় নানা জিনিস। ২০১৯ সালেও সিংহালি গ্রামের শিব মন্দির থেকে বেশ কিছু সামগ্রী চুরি যায়। এ বারও দুর্গাপুজোর আগে ধেনুয়া ও গলাতুন গ্রামে চুরির ঘটনা ঘটতেই সজাগ হয়েছিল পুলিশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, এলাকায় নজরদারি চালাতে মোবাইল ভ্যান ও মোবাইল বাইকবাহিনী তৈরি করা হয়। ওই বাহিনী গ্রামে গ্রামে ঘোরা শুরু করে। অচেনা কাউকে দেখলে জিজ্ঞাসাবাদ করাও হচ্ছে। কিন্তু তার পরেও এক রাতে কয়েক ঘণ্টা ধরে দুষ্কর্ম চললেও নজরদারি বাহিনী টের পেল না কেন, উঠেছে সেই প্রশ্ন।

যদিও মন্তেশ্বর থানার দাবি, এলাকায় অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তিদের আনাগোনা রয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ দেখে বিস্তারিত খোঁজ করা হচ্ছে। জেলা পুলিশের এক কর্তাও জানান, প্রয়োজনে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে। তবে বেশ কয়েকটা বিষয় পুলিশ কর্তাদের ভাবাচ্ছে। ২০১৫ সালে পুলিশ তদন্তে নেমে জেনেছিল, মন্দির চুরির সঙ্গে যোগ রয়েছে একাংশ ফেরিওয়ালার। দিনে জিনিস বিক্রি করে এলাকার সমীক্ষা করে রাতে চুরি, এমনটাই চলছিল দাবি তদন্তকারীদের। কয়েকবছর আগে কেতুগ্রামে রাস্তা সারানোর সঙ্গে জড়িত কয়েকজনের মন্দির চুরিতে যোগ পায় পুলিশ। এ বারের চুরিতে কারা জড়িত কি না, দেখছেন তদন্তকারীরা।

অন্য বিষয়গুলি:

Temple theft East Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy