Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

সমস্যা বুঝুক সরকার, ক্ষুব্ধ শিক্ষিকারা

শুধু ওই শিক্ষিকা নয় স্কুল শিক্ষিকাদের বদলির আবেদন প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অনেকেই।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কালনা শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০১৯ ০০:১১
Share: Save:

স্কুল যেতে আসতে প্রতিদিন পাঁচ ঘণ্টা যাতায়াত করতে হয়। ট্রেন, বাস, রিকশার যাত্রাপথে বেশির ভাগ দিনই শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ হয় না। আবার যে কোনও জায়গার শৌচাগারে ভয় থাকে সংক্রমণের। ফলে শরীর খারাপের আশঙ্কা থাকলেও তা পাত্তা না দিয়েই কাজ চালিয়ে যান কালনার এক প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। তাঁর কথায়, ‘‘প্রতিদিন পূর্বস্থলীর পাটুলি যাই। খুব প্রয়োজন ছাড়া ছুটি নিই না। কিন্তু বদলির আবেদন জানালে যদি শিক্ষামন্ত্রীর এমন মন্তব্য শুনতে হয়, তাহলে তো মুশকিল।’’

শুধু ওই শিক্ষিকা নয় স্কুল শিক্ষিকাদের বদলির আবেদন প্রসঙ্গে স্ত্রীরোগ নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় যে মন্তব্য করেছেন, তা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন অনেকেই। প্রত্যেকেরই দাবি, অনেককেই বহু দূরে স্কুলে যেতে হয়। শারীরিক বৈশিষ্ট্যের কারণে যত্রতত্র শৌচাগারে যেতে পারেন না শিক্ষিকারা। আবার স্কুলেও পরিচ্ছন্ন শৌচাগার পাওয়া যায় না সবসময়। ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব, তলপেটে, কোমরে নিয়মিত ব্যথার সমস্যায় ভোগেন তাঁরা। অনেকেই সেই কারণে বাড়ির কাছে বদলির আবেদন জানান। কিন্তু বদলির কারণে স্ত্রীরোগকে যদি অজুহাত ভাবেন খোদ শিক্ষামন্ত্রী, তাহলে মানসিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেই যায়। শিক্ষিকাদের দাবি, সমালোচনা না করে সরকার সমস্যাটা বুঝলে উপকার হত।

এই সমস্যায় শুধু শিক্ষিকারা নন, ভোগে অনেক ছাত্রীরা। জেলার বহু অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রেও এখনও শৌচাগার নেই। ফলে খুব প্রয়োজনে খোলা মাঠে শৌচকর্ম সারতে হয় সহায়িকাদের। শরীর খারাপের আশঙ্কা থাকে তাঁদেরও। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষিকার দাবি, স্টেশন, বাসস্ট্যান্ডে পরিচ্ছন্ন শৌচাগার নেই। অনেক জায়গায় শৌচাগার থাকলেও দরজা বা কোনও পাকা আচ্ছাদন নেই। ফলে তা ব্যবহার করতে পারেন না তাঁরা। স্কুলে এসেও ক্লাসের তাড়া থাকায় শৌচাগারে যাওয়ার সুযোগ মেলে না রোজ।

কালনার এক প্রবীণ স্ত্রী এবং প্রসূতি রোগ বিশেষজ্ঞ অমিয়কান্তি তা জানান, যাতায়াতের দীর্ঘপথে প্রস্রাব চেপে রাখলে মূত্রনালিতে সংক্রমণ দেখা দিতে পারে। যা থেকে তলপেটে, কোমরে তিব্র ব্যথা হয়। সেই সঙ্গে দেখা দেয় অনিয়মিত ঋতুস্রাব এবং কিডনির সমস্যা। অমিয়বাবুর দাবি, ‘‘টানা মাস ছয়েক ধরে দু থেকে তিন ঘণ্টার পথ যাতায়াত করতে হলে এমন সমস্যা দেখা দিতে পারে।’’ এ ছাড়া অনেক দূর যেতে হলে অনেকেই সময়ে পৌঁছতে পারা নিয়ে টেনশনে ভোগেন। তা থেকেও ঋতুস্রাব অনিয়মিত হতে পারে। আবার স্কুলের বাথরুমের দূষিত জল থেকেও ছড়াতে পারে সংক্রমণ।

মাস কয়েক আগে ভাতার গার্লস হইস্কুলে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন কয়েকজন শিক্ষিকা, ছাত্রী। তাঁদের দাবি, ভোটের সময় জওয়ানেরা ব্যবহার করে যাওয়ার পর থেকে জলের অভাবে, কর্মীর অভাবে শৌচাগার সাফাই হয়নি। সেখান থেকে সংক্রমণ ছড়ায়।

তৃণমূল প্রভাবিত পশ্চিমবঙ্গ মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির পূর্ব বর্ধমানের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘‘দূরে শিক্ষকতা করতে গেলে শিক্ষিকাদের শারীরিক সমস্যা হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। এর জন্য বাড়ির কাছাকাছি কর্মস্থল হলে ভাল। সে ক্ষেত্রে জেলায় কোন স্কুলের শিক্ষিকার বাড়ি কোথায়, কোন এলাকা থেকে কত দূরে যেতে হয়, সেই তথ্য জোগাড় করে তালিকা করা যেতে পারে। চেষ্টা করলে সমস্যার একশো শতাংশ না হলেও ৮০ শতাংশ সমাধান করা সম্ভব।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Partha Chatterjee School Teachers TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy