হাজির জানে আলম। নিজস্ব চিত্র।
গায়ে লাল ডোরাকাটা গেঞ্জি, মুখে মাস্ক, হাতে দস্তানা। কালো মোটরবাইকটা থামাতে থামাতেই হাঁক পাড়লেন, ‘‘দিদি, এসে গিয়েছি। আপনি ফোন করেছিলেন।’’ এক মহিলা বাইরে আসতেই তাঁর হাতে তুলে দিলেন দু’টি প্যাকেট। জিনিসগুলি নিয়ে ভাতারের বড়বেলুনের সুভদ্রা হাজরা বলেন, ‘‘পাঁচ বছর আগে স্বামী মারা গিয়েছেন। লোকের বাড়িতে কাজ করি। আমি আর শাশুড়ি করোনা আক্রান্ত। ১১ বছরের ছেলেটা কয়েকদিন ধরে মাংস খাওয়ার বায়না করছিল। ফল, মাংস সব নিখরচায় পৌঁছে দিলেন শিক্ষক শেখ জানে আলম।’’
পাশের নাসিগ্রামের এক শিক্ষাবন্ধুও সস্ত্রীক করোনা আক্রান্ত। ওষুধ পৌঁছে দেওয়ারও কেউ নেই। মুশকিল আসান বড়বেলুন বড়কালী প্রাথমিক স্কুলের ওই শিক্ষক। ঝড়বৃষ্টির দিনেও ডাক পেলেই সাহায্য নিয়ে দরজায় হাজির তিনি।
বছর চৌত্রিশের ওই শিক্ষকের বাড়ি ভাতারের রাধানগর গ্রামে। স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, কোভিড-আক্রান্তদের পাশে দাঁড়াতে প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৮টা নাগাদ বেরিয়ে পড়েন তিনি। কারও খাবার, কারও ওষুধ নিয়ে পৌঁছে যান বড়বেলুন, নাসিগ্রাম, ভাতারের নানা বাড়িতে। আট-দশটা বাড়ি যাতায়াতের পথে অসহায় মানুষদের চালও বিলি করেন। বাড়ি ফিরেও ছুটি নেই। আবার কার, কী প্রয়োজন সই তালিকা তৈরি করতে শুরু করেন। ফোন করে জানিয়ে দেন, পরের দিন কখন জিনিস পৌঁছে দেবেন। প্যাকেটে জিনিস গুছিয়ে রেখে তবেই তাঁর বিশ্রাম।
এ ছাড়াও, সুভদ্রাদেবীর মতো অনেকেই ফোন করে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেওয়ার অনুরোধ করেন। সব গুছিয়ে বাড়িতে পৌঁছে দেন ওই শিক্ষক। সঙ্গে নিজে থেকে ফলও কিনে দেন প্রত্যেককে।
বড়বেলুন গ্রামের এক টোটো চালক জয়ন্ত পাল বলেন, ‘‘অসুস্থ শরীর সঙ্গে প্রশাসনের কড়াকাড়ি চলায় টোটো বের করতে পারিনি। মাস্টারমশাই দশ কেজি চাল বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন ফলে বেঁচে গিয়েছি।’’ ওই পাড়ারই আরও চার-পাঁচটি পরিবারের কাছেও তিনি চাল পৌঁছে দিয়েছেন বলে জানা গিয়েছে।
তবে সংক্রমণের ভয় মাথায় নিয়ে এ কাজ বাড়ির সকলে মেনে নিতে পারেননি। কেউ তাঁর স্বাস্থ্য নিয়ে ভয় পেয়েছেন, কেউ চিন্তায় পড়েছেন বাড়ির অন্যদের নিয়ে। কিন্তু দমানো যায়নি তাঁকে, জানান তাঁর স্ত্রী ফজিলা খাতুন বেগম। ওই শিক্ষক বলেন, ‘‘এখন সবাই শুধু বারবার বলে, যা করবে সাবধানে করবে।’’
বড়বেলুন বড়কালী প্রাথমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীরণ মণ্ডল বলেন, ‘‘আমার সহকর্মী শিক্ষক বিনা পয়সায় করোনা-আক্রান্তদের নানা ভাবে সাহায্য করছেন। আমরা শিক্ষক হয়ে যদি এই সময়ে সহ-নাগরিকদের পাশে না দাঁড়াই তো কে দাঁড়াবে।’’ আর শেখ জানে আলম বলেন, ‘‘আমার কর্তব্যটুকু করছি। এখন স্কুল বন্ধ। যাতায়াতের খরচ বেঁচে যাচ্ছে। সে টাকাটা মানুষের জন্য খরচ করতে পারলেও অনেক। আর করোনা-আক্রান্তদের ‘পাশে আছি’ বললেই তাঁরা মনে সাহস পান। সাহস জোগাতে পয়সা খরচ করতে হয় না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy