খাবার পরিবেশন। নিজস্ব চিত্র
বস্তির অভুক্ত শিশুরা স্কুলে পড়াশোনার পাশাপাশি মিড-ডে মিল খেয়ে বাড়ি ফেরে। কিন্তু হতদরিদ্র পরিবারগুলির অনেক শিশুই হয়তো আজও খিদে পেটে ঘুমোতে যায়। খাদ্যের অপচয় বন্ধ করার অভিযানে নেমেছেন আসানসোলের ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের শিক্ষক চন্দ্রশেখর কুণ্ডু। সোমবার, বিশ্ব খাদ্য দিবস উপলক্ষে তিনি আসানসোলের লোয়ার চেলিডাঙা লাগোয়া একটি বস্তির ৫২ জন স্কুল পড়ুয়াকে রান্না করা রাতের খাবার খাওয়ানোর প্রকল্প শুরু করেছেন। কিন্তু শর্ত— রোজ স্কুলে যেতে হবে, মন দিয়ে পড়তে হবে।
সাইকেল নিয়ে কয়েকদিন আগেই একই অভিযানে নেমেছেন ঝাড়খণ্ডের চিরকুণ্ডার বাসিন্দা, আসানসোলের বিবি কলেজের বিসিএ দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র সূর্য দে। তাঁর স্লোগান ‘সেভ ফুড, সেভ লাইফ’।
রাষ্ট্রসঙ্ঘের ‘ফুড অ্যান্ড এগ্রিকালচার অর্গানাইজেশন’-এর প্রতিষ্ঠা দিবস উপলক্ষে ১৬ অক্টোবর ‘বিশ্ব খাদ্য দিবস’ পালন করা হয়। রাষ্ট্রসঙ্ঘের খাদ্য বাঁচাও কর্মসূচিকে গ্রাম ও শহরের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে সম্প্রতি ওই সংগঠনের পক্ষ থেকে চন্দ্রশেখরবাবুকে তাঁদের অংশীদার করা হয়েছে। সংগঠনের তরফেই অভুক্ত শিশুদের মুখে খাবার তুলে দিতে কিছু কর্মসুচি পালনের প্রস্তাব করা হয় তাঁর কাছে। ইতিমধ্যে চন্দ্রশেখরবাবু হোটেল, রেস্তোরাঁ বা অনুষ্ঠানবাড়িতে বেঁচে যাওয়া খাবার নিজের দায়িত্বে জোগাড় করে মাঝে মধ্যেই বিভিন্ন বস্তির শিশুদের খাওয়াচ্ছেন। কিন্তু নিয়মিত ভাবে রান্না করা রাতের খাবার স্কুল পড়ুয়াদের খাওয়ানোর উদ্যোগ এই প্রথম। তিনি বলেন, ‘‘এ বার নিয়মিত ভাবে বস্তির অভুক্ত শিশুদের খাওয়ানোর ব্যবস্থা করেছি। দ্রুত আরও কয়েকটি বস্তিতেও শুরু করব।’’
রবিবার রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ ওই বস্তিতে গিয়ে দেখা গেল, সাজ সাজ রব। সন্ধ্যা থেকে রান্নায় হাত লাগিয়েছেন বস্তিরই মহিলারা। মেনুতে রয়েছে, খিচুড়ি, ডিমের ঝোল, নবরত্ন, পাঁপড়, চাটনি। বস্তি লাগোয়া স্কুলে প্রথম শ্রেণিতে পড়ে রজনী রজক। সে থালা হাতে তাকিয়ে রয়েছে ডিম ঝোলের দিকে। কেমন লাগছে? তা জানাতে গিয়ে ঊষা বাদ্যকর বলেন, ‘‘ছেলেটা যে এ বার রাতেও পেট পুরে খাবে ভেবেই ভাল লাগছে।’’ কিন্তু খরচ তো অনেক? যোগাবে কে? সোমবার রাতের মেনু ঠিক করতে করতে চন্দ্রশেখরবাবু বলেন, ‘‘আমার শিক্ষকবন্ধু থেকে ছাত্র সকলেই দিনের খরচ বাঁচিয়ে সাহায্য করছেন। হয়েই যাবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy