অভিযোগ, বারাবনি-সহ নানা এলাকায় দেখা যায় এই ছবি। নিজস্ব চিত্র।
সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমানের চিনাকুড়ি থেকে ঝাড়খণ্ডের পাঞ্চেতের একটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে যাচ্ছিল কয়েকটি ডাম্পার। ডিসেরগড়ে সেগুলিকে আটক করেন জেলা প্রশাসনের কর্তারা। তাঁরা দেখেন, সেগুলিতে অতিরিক্ত পরিমাণে কয়লা বোঝাই করা হয়েছে। তাঁদের পর্যবেক্ষণ: জেলার রাস্তায় নির্দিষ্ট পরিমাণের থেকে বেশি কয়লা, বালি বোঝাই করে ডাম্পার বা ট্রাকগুলি রাজ্য এবং ভিন্-রাজ্যের নানা প্রান্তে যাতায়াত করছে। এই ‘অনিয়ম’ বন্ধে বিশেষ টাস্ক ফোর্স তৈরি করে ধরপাকড় করার কথা জানিয়েছে প্রশাসন।
অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ তুকারাম সোভোলে বলেন, “জেলাশাসকের (পশ্চিম বর্ধমান) নির্দেশে চার জন অতিরিক্ত জেলাশাসকের নেতৃত্বে চারটি টাস্ক ফোর্স তৈরি করা হয়েছে। নির্দিষ্ট দিনক্ষণ তৈরি করে আসানসোল ও দুর্গাপুর মহকুমা জুড়ে ধারাবাহিক অভিযান চালানো হচ্ছে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চলবে এই অভিযান। ইতিমধ্যেই কয়েক লক্ষ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে।”
কেন এমন পরিকল্পনা? ঘটনাচক্রে, জেলার বিভিন্ন প্রান্তে পর্যবেক্ষণ চালিয়ে দেখা গিয়েছে, রাজ্য সড়ক, জাতীয় সড়ক-সহ বিভিন্ন রাস্তা, সার্ভিস রোড বেহাল হওয়া ও দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ অতিরিক্ত মাল বোঝাই ট্রাক, ডাম্পারের চলাচল। চলতি বছরের জানুয়ারিতেই ৬০ নম্বর জাতীয় সড়কের প্রিয়ার কাছে দুর্ঘটনায় মৃত্যু হয় দু’জনের। এর পরেই বাসিন্দারা অভিযোগ করেছিলেন রাতভর ওই রাস্তাটি, আসানসোলের নিয়ামতপুর-চিত্তরঞ্জন রোড, আসানসোলের বিবেকানন্দ সরণি, জামুরিয়া ও রানিগঞ্জের বেশ কয়েকটি রাস্তা, ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক-সহ অন্য রাস্তায় অতিরিক্ত মাল বোঝাই ট্রাক, ডাম্পার চলাচল করে। পাশাপাশি, ২ নম্বর জাতীয় সড়ক লাগোয়া সালানপুরের সবনপুরের বাসিন্দাদের একাংশও একই অভিযোগ জানান। সেই সঙ্গে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বুদবুদে সাতটি এবং কাঁকসায় তিনটি অতিরিক্ত পরিমাণে বালি বোঝাই ট্রাক আটক করার কথা জানিয়েছিল পুলিশ।
ওই পর্যবেক্ষক দলটি দ্রুত সার্ভিস রোডগুলির সংস্কার করার পরামর্শ দেয়। জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে পদক্ষেপ করার আগে, জেলা প্রশাসনকে অতিরিক্ত মাল বোঝাই ডাম্পার ও ট্রাক চলাচল বন্ধের আর্জি জানান। ২ নম্বর জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষের আসানসোল-বারওয়াড্ডার প্রজেক্ট ডিরেক্টর মলয় দত্ত বলেন, “জেলা প্রশাসনের কাছে আমরা ওভারলোডেড যানবাহন চলাচল বন্ধের দাবি জানিয়েছিলাম।” সেই সঙ্গে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এ ধরনের ট্রাক, ডাম্পারগুলিতে কয়লা, বালি বা শিল্প-বর্জ্য পরিবহণের সময়ে ঢাকা দেওয়া থাকে না। ফলে, রাস্তা লাগোয়া এলাকায় দূষণ ছড়াচ্ছে।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, মাল বহনের ক্ষেত্রে এই ‘অতিরিক্ত’ পরিমাণটি কত, তা নিয়েও। জেলা পরিবহণ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ছ’চাকার ট্রাক, ডাম্পারে সর্বাধিক ১৫ টন, দশ চাকার ট্রাক, ডাম্পারে সর্বাধিক ২০ টন মাল বহন করা যায়। ওই ট্রাক, ডাম্পারগুলির ‘ডালা’গুলিও ওই পরিমাণ মাল বহনেরই উপযোগী। তা হলে কী ভাবে অতিরিক্ত পরিমাণ মাল বোঝাই করা হচ্ছে? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পরিবহণ-কর্তা জানিয়েছেন, সংশ্লিষ্ট ট্রাক, ডাম্পারগুলি যখন দফতর থেকে ছাড়পত্র নিতে আসে, তখন সেগুলির ডালা ঠিকই রয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু বিশেষ সূত্রে জানা গেল, ছাড়পত্র পাওয়ার পরে, অতিরিক্ত পরিমাণে মাল বোঝাইয়ের উপযুক্ত ডালা বানিয়ে নেওয়া হয়। পরিবহণ-কর্তাদের পর্যবেক্ষণ, ১৫ ও ২০ টনের ট্রাক, ডাম্পারগুলিতে অনেক ক্ষেত্রেই যথাক্রমে ২০ টন, ২৫ টন মাল বহন করা হচ্ছে। এর ফলে, সরকার রাজস্বও হারাচ্ছে।
এই পরিস্থিতিতে অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) অভিজিৎ বলেন, “ট্রাক, ডাম্পারগুলিতে এই অনিয়ম বন্ধে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy