Advertisement
০৬ জানুয়ারি ২০২৫
Kanchenjunga Express Accident

‘পরপর ঝাঁকুনি, ছিটকে যাচ্ছিলাম আপার বার্থ থেকে’ 

বর্ধমানের লোকো কলোনির বাসিন্দা অমর ডাক বিভাগের কর্মী। বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরে কর্মরত তিনি। তবে বেশি পরিচিত খেলার মাঠের মানুষ হিসাবে।

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থল থেকে অমর। 

কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনাস্থল থেকে অমর।  নিজস্ব চিত্র।

সুপ্রকাশ চৌধুরী
শেষ আপডেট: ১৮ জুন ২০২৪ ০৮:৫৬
Share: Save:

ঘড়িতে তখন ৯টা বাজতে ১০ মিনিট হবে। ট্রেনের এস ৭ কামরায় স্লিপার ক্লাসে আপার বার্থে শুয়েছিলেন অমরচন্দ্র দাস। হঠাৎ তীব্র ঝাঁকুনি। পর পর আরও কয়েকবার ঝাঁকুনি। মাথাটা বেশ জোরে ট্রেনের ছাদে ধাক্কা খায়। নীচে পড়তে পড়তে কোনও রকমে রড ধরে সামলে নেন তিনি। ট্রেন থামতেই চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্না। কামরার সবাই আন্দাজ করেন, কিছু একটা মারাত্মক ঘটনা ঘটেছে। নীচে নেমে ট্রেনের পিছন দিকে তাকাতেই শিউড়ে ওঠেন। মালগাড়ি আর কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে তিনি যে বেঁচে গিয়েছেন,বিশ্বাস করতেই পারছিলেন না অমর।

বর্ধমানের লোকো কলোনির বাসিন্দা অমর ডাক বিভাগের কর্মী। বর্ধমান মুখ্য ডাকঘরে কর্মরত তিনি। তবে বেশি পরিচিত খেলার মাঠের মানুষ হিসাবে। ফুটবলে রেফারির ভূমিকায় দেখা যায় তাঁকে। ক্রিকেট মাঠেও তাঁর নিত্য যাতায়াত। বর্ধমানের ক্রীড়া জগতে অমর বেশ পরিচিত। সপ্তাহখানেক আগে উত্তরবঙ্গের কয়েক জন বন্ধুর সঙ্গে মেঘালয় গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ট্রেকিং করে গুয়াহাটি হয়ে কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসে বাড়ি ফিরছিলেন। রবিবার সন্ধ্যায় ট্রেনে ওঠেন। সোমবার বর্ধমান ষ্টেশনে নামার কথা ছিল তাঁর। ট্রেনের সামনের দিকে এস ৭ কামরায় ছিলেন তিনি। অমর বলেন, ‘‘নিউ জলপাইগুড়ি পর্যন্ত ট্রেনে কোনও সমস্যা হয়নি। সব ঠিকই ছিল। কিন্তু সকাল ৯টার কিছু আগেই বিপত্তি বাধে। ঝাঁকুনির পর ঝাঁকুনি, তারপর ট্রেনে থেমে যাওয়া দেখেই খারাপ কিছু আন্দাজ করেছিলাম।’’

ট্রেনে থাকা অনেকের মনেই ফিরে আসছিল ওড়িশার বাহানাগায় করমণ্ডল এক্সপ্রেস দুর্ঘটনার স্মৃতি। অমর জানান, তাঁরা নেমে দেখেন, কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেসের পিছনের দিকের দুটো কামরা ভেঙেচুরে মালগাড়িটির উপরে উঠে গিয়েছে। লোকজন দৌড়াদৌড়ি করছে। কান্না আর হাহাকার চারিদিকে। আরও এগিয়ে দেখেন, একটা জেনারেল কামরা আর একটা পার্সেল কামরাতেই হয়েছে দুর্ঘটনা। অমর বলেন, ‘‘কামরাগুলির হাল দেখে হাড় হিম হয়ে আসছিল। ভাবছিলাম, কোন কপার জোরে বাকিরা রক্ষা পেল!’’

দুর্ঘটনার খানিক ক্ষণের মধ্যেই রেলের উদ্ধারকারী দল এসে কাজ শুরু করে। আহতদের জন্য আম্বুল্যান্স এবং রিলিফ ট্রেন দেওয়া হয়। যদিও আঘাত তেমন না হওয়ায় সেই ট্রেনে যেতে পারেননি তাঁরা। অনেকক্ষণ দুর্ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে থাকার পরে সহযাত্রীদের সঙ্গে গাড়ি ভাড়া করে দুপুরের দিকে শিলিগুড়ি রওনা দেন তাঁরা। ওখান থেকে ফেরার ট্রেনের ব্যবস্থা করা হবে, জানানো হয় রেলের তরফে।

খবর পেয়ে নাওয়া-খাওয়া ভুলেছেন অমরের পরিজনেরা। তাঁর দাদা সমরচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘ভাইয়ের অল্প আঘাত লেগেছে। আপার বার্থ থেকে নীচে পড়ে গিয়েছে শুনেছি। সকালে নেটওয়ার্ক সমস্যায় অল্পই কথা হয়েছে। ছেলেটা বাড়ি না ফেরা পর্যন্ত চিন্তা যাচ্ছে না।’’ এখনও টিভিতে খবরে ট্রেনের ছবি দেখলেই গায়ে কাঁটা দিচ্ছে তাঁদের।

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy