চেষ্টা: প্রাণ বাঁচানোর। নিজস্ব চিত্র।
ছবিটা অন্য দিনের থেকে এত টুকুও আলাদা ছিল না। অন্তত মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ন’টা পর্যন্ত।
সালানপুর থানা চত্বরে তখন প্রতিদিনের ব্যস্ততা। কর্তব্যরত পুলিশকর্মীরা নিজেদের মধ্যে কথাবার্তা সারছেন। ডিউটি অফিসার নিজের টেবিলে। বাইরে থেকে কয়েক জন এসেছেন নানা অভিযোগ নিয়ে। ঠিক তখনই কান ফাটিয়ে গুলির শব্দ! থানার ভিতর থেকে তো বটেই, সে শব্দ এসেছে খোদ ইনস্পেক্টর-ইন-চার্জ (আইসি) সিদ্ধার্থ ঘোষালের চেম্বার থেকেই! দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড়ের মধ্যেই মারা যান সিদ্ধার্থবাবু।
এই ঘটনা আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটে আলোড়ন ফেলে দিয়েছে। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশের অনুমান, নিজের সার্ভিস রিভলভারের গুলি চালিয়ে তিনি আত্মঘাতী হয়েছেন ৫৯ বছর বয়সী সিদ্ধার্থবাবু। পুলিশ সুত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সওয়া ন’টা নাগাদ সিদ্ধার্থবাবু নিজের আবাসন থেকে থানায় আসেন। থানায় দাঁড়িয়ে থাকা পুলিশকর্মীদের সঙ্গে খানিকক্ষণ কথা বলে নিজের চেম্বারে ঢুকে যান। মিনিট কুড়ি পরেই পুলিশকর্মীরা আইসির চেম্বার থেকে গুলির আওয়াজ পেয়ে চমকে ওঠেন। ছুটে গিয়ে তাঁরা ভিতরের দৃশ্য দেখে চমকে ওঠেন। নিজের চেয়ারে এলিয়ে পড়েছেন সিদ্ধার্থবাবু। মেঝে রক্তে ভেসে যাচ্ছে।
পুলিশ জানিয়েছে, সঙ্গে সঙ্গেই থানার গাড়িতে চাপিয়ে তাঁকে আসানসোলের একটি নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। ততক্ষণে খবর পেয়ে নার্সিংহোমে চলে এসেছেন পুলিশ কমিশনার লক্ষ্মীনারায়ণ মিনা-সহ কমিশনারেটের পদস্থ পুলিশকর্তারা। আসানসোলের ওই নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিৎসার পরে তাঁকে দুর্গাপুরের একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরের তোড়জোড় শুরু হয়। সেখানে নিয়ে যাওয়ার জন্য দুর্গাপুর থেকে একটি আধুনিক অ্যাম্বুল্যান্সও আনানো হয়। কিন্তু, ওই পুলিশ অফিসারকে অ্যাম্বুল্যান্সে চাপিয়ে রওনা দেওয়ার আগেই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। অ্যাম্বুল্যান্সের মধ্যেই চিকিৎসকেরা তাঁকে সুস্থ করে তোলার আপ্রাণ চেষ্টা করেন। কিন্তু, শেষ রক্ষা করা যায়নি। চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
পনেরো মাস হল সিদ্ধার্থবাবু সালানপুর থানায় যোগ দিয়েছিলেন। আইসি হিসাবে এটাই ছিল তাঁর প্রথম পোস্টিং। এর আগে তিনি ছিলেন বারাসতে, উত্তর ২৪ পরগনা জেলা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগে। পুলিশ কমিশনার পরে বলেন, ‘‘সালানপুরের আইসি গুলিবিদ্ধ অবস্থায় মারা গিয়েছেন। তাঁর সার্ভিস রিভলভারটি উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা ঘটনার তদন্ত করছি।’’
মৃত ওই অফিসারের বাড়ি বোলপুর শহরের প্রফেসর কলোনিতে। সেখানে তাঁর স্ত্রী দুই মেয়ে ও মা থাকেন। স্ত্রী অম্বিকা ঘোষাল বোলপুর গার্লস হাইস্কুলের প্রাথমিক বিভাগের শিক্ষিকা। এ দিন এলাকায় গিয়ে দেখা গেল, ওই বাড়ি ঘিরে পড়শিদের জটলা। তাঁদের এক জন সুজিত মুখোপাধ্যায় বলছিলেন, ‘‘মানসিক কোনও অবসাদ সিদ্ধার্থবাবুর ছিল বলে আমাদের অন্তত জানা নেই। বরং খুবই মিশুকে ছিলেন। কেন এমন হল, জানি না।’’ জামাইবাবু স্বপনেন্দু রায় বলেন, ‘‘সম্প্রতি আমিও সিদ্ধার্থর ওখানে আট দিন ছিলাম। কোনও অস্বাভাবিকত্ব লক্ষ করিনি। ছেলেবেলা থেকেই ও ক্যারম খেলতে ভালবাসত। আমি যে ক’দিন ছিলাম, দু’জনে চুটিয়ে ক্যারম খেলেছি। কী ভাবে কী হয়ে গেল, বুঝছি না।’’
সিদ্ধার্থবাবুর মামা নারায়ণ বন্দ্যোপাধ্যায় জানালেন, স্বামীর কাছে ক’দিন থেকে সোমবার সকালেই বোলপুর ফিরেছেন অম্বিকাদেবী। মৃত্যুর খবর পেয়ে এ দিন বিকেলে শাশুড়ি ও দুই মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে আসানসোলের নার্সিংহোমে পৌঁছান অম্বিকাদেবী। স্বামীর মৃতদেহের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। তাঁকে সান্ত্বনা দিতে এগিয়ে আসেন অন্য পুলিশ অফিসারেরা।
প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, মানসিক অবসাদের কারণেই ওই অফিসার আত্মঘাতী হয়েছেন। কিন্তু কী কারণে মানসিক অবসাদ, তা স্পষ্ট হয়নি। মৃত্যুর কারণ নিয়ে তিনি কিছু অনুমান করতে পারছেন কিনা, জানতে চাওয়া হলে অম্বিকাদেবীও কোনও কথা বলতে পারেননি। তবে সিদ্ধার্থবাবুর ঘনিষ্ঠ কিছু পুলিশ অফিসার জানিয়েছেন, ইদানীং কিছু বিষয় নিয়ে কর্মস্থলে তিনি কিছুটা চাপে ছিলেন। সম্ভবত সেই কারণেই তাঁর মানসিক অবসাদ বেড়েছিল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy