Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
coal

বৈধ খনিতে কয়লা চুরির অভিযোগ

বিশেষ সূত্রে দাবি, কয়লা-সিন্ডিকেট সে ভাবে চলছে না এলাকায়। কিন্তু ‘স্থানীয় কয়েকজন দাদা’র নির্দেশে এই কারবার চলছে।

জড়ো করা হচ্ছে ‘অবৈধ’ কয়লা।

জড়ো করা হচ্ছে ‘অবৈধ’ কয়লা।

সুশান্ত বণিক
কুলটি শেষ আপডেট: ০২ জুন ২০২১ ০৫:৩৩
Share: Save:

প্রথমে খনি থেকে কয়লা তুলে লাগোয়া জঙ্গলে জড়ো করা হচ্ছে। পরে, ‘সুযোগ’ বুঝে সেই কয়লা বস্তা বন্দি করে সাইকেল, স্কুটার, মোটরবাইক ও পিক-আপ ভ্যানে করে চলছে পাচার। রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা উত্তোলক সংস্থা বিসিসিএল-এর দামাগড়িয়া বৈধ খনি থেকে এ ভাবেই কয়লা চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন খোদ খনি কর্তৃপক্ষ। পুলিশে অভিযোগও দায়ের হয়েছে। বিশেষ সূত্রে দাবি, কয়লা-সিন্ডিকেট সে ভাবে চলছে না এলাকায়। কিন্তু ‘স্থানীয় কয়েকজন দাদা’র নির্দেশে এই কারবার চলছে।

কুলটির লালাবাজার লাগোয়া বড়িরা গ্রাম। গ্রামের অদূরেই এই খোলামুখ খনিটি রয়েছে। খনি কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, তাঁদের এই বৈধ খনি থেকে অবৈধ ভাবে কয়লা কাটছে শতাধিক দুষ্কৃতী। দামাগড়িয়া খনির ডেপুটি পার্সোনেল ম্যানেজার সুমন্ত রায় বলেন, ‘‘কয়লা চুরি বন্ধ করতে গেলে চোরদের হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের রক্ষীদের। উড়ে আসছে ইট-পাটকেল, এমনকি, হাত-বোমাও। এখানে সিআইএসএফ মোতায়েন করা হবে। পুলিশেও লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।’’ কুলটির বিজেপি বিধায়ক অজয় পোদ্দারও বলেন, ‘‘রাষ্ট্রায়ত্ত খনিতে কয়লা চুরি বন্ধের দাবিতে কেন্দ্রীয় কয়লামন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীকে চিঠি লিখব।’’

কী ভাবে চলছে ‘চুরি’? বড়িরা গ্রামের মুচিপাড়া থেকে ১৫ মিটার দক্ষিণ। সেখানে গেলেই দেখা মিলবে দামাগড়িয়া খনিতে গাঁইতি, ঝুড়ি হাতে চলছে কয়লা কাটা, সবটাই ‘অবৈধ’ ভাবে। এমনকি, খনিতে ডালা-সহ ট্রাক্টর, সাইকেল, মোটরবাইক, স্কুটার সবই নামানো হয়েছে। বস্তাবন্দি কয়লা সে সবে চাপিয়ে খনি থেকে উপরে তোলা হচ্ছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২২ মে বরিরার স্থানীয় মুচিপাড়ায় ধস নামার পরে থেকেই পুনর্বাসন এবং ক্ষতিপূরণের টাকা দাবি করে বিক্ষোভ-অবস্থান চলছে। খনি কর্তৃপক্ষের নজরও সে দিকে। এই পরিস্থিতির ‘সুযোগেই’ বন্ধ খনিতে ‘বেড়েছে’ কয়লা-চুরি।

কিন্তু সিবিআই নজরে রয়েছেন লালা ওরফে অনুপ মাজি-সহ কয়লা কারবারের ‘মাথা’রা। সে প্রসঙ্গ উঠতেই ‘অবৈধ’ কারবারে যুক্ত কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বললেন, ‘‘এখন কয়লা কারবারের ‘মাথা’রা নেই। কিন্তু স্থানীয় দাদারা আছেন। আমাদের রুটি-রুজির জন্যই এই কারবার দরকার। তাই দাদাদের কথায় কয়লা কাটছি। লাগোয়া জঙ্গলে জড়ো করে রাখা হয় প্রথমে। সেখান থেকে পাচার করা হয় মূলত
রাতের দিকে।’’

সূত্রের খবর, এক টন বৈধ কয়লার দর ছ’হাজার টাকার আশপাশে। এক টন ‘অবৈধ’ কয়লার দর, চার হাজার টাকা। দর কম হওয়ায় মূলত স্থানীয় রিফ্যাক্টরি, ইটভাটা, দোকানে ‘চোরাই’ কয়লা বিক্রি হচ্ছে। ওই চার হাজার টাকার অর্ধেকেরও বেশি যায় ‘স্থানীয় দাদা’দের পকেটে। ৭০০ থেকে হাজার টাকা পান যাঁরা কয়লা কাটছেন। আর বাকিটা পথ-ঘাটে নির্বিঘ্নে যাতায়াতের জন্য ‘দিতে হয়’ হয় বলে অভিযোগ। অথচ, আসানসোল পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় একশো দিনের প্রকল্পের কাজ চলে। কিন্তু, অবৈধ কারবারে যুক্ত একজনের প্রতিক্রিয়া, ‘‘সরকারি কাজে মজুরি অনেক কম। সেখানে আমরা দিনে সাতশো-হাজার টাকা পাই এ কারবারে।’’

তবে আসানসোল-দুর্গাপুর পুলিশ কমিশনারেটের এসিপি (কুলটি) ওমর আলি মোল্লা বলেন, ‘‘কয়লা চুরির ঘটনা নজরে এলেই দ্রুত পদক্ষেপ করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’’ কমিশনারেট জানিয়েছে, সোমবার রাতেই লালবাজার লাগোয়া এলাকা থেকে কয়লার বস্তা বোঝাই তিনটি স্কুটার ধরা হয়েছে। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে প্রায় আট টন অবৈধ কয়লা। বাজেয়াপ্ত করা কয়লা দামাগড়িয়া খনি থেকেই চুরি করা হয়েছিল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

coal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy