Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
বিধি-বাম/১
Garden Reach Building Collapse

আকাশ ছোঁয়া বহুতলে কি ওত পেতেছে বিপদ

কলকাতার গার্ডেনরিচে বহুতল ভেঙে ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। জেলার নানা নির্মাণ নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। যাঁরা বানাচ্ছেন, যাঁরা অনুমতি দিচ্ছেন দু’পক্ষেরই নিয়ম ‘ভাঙার’ প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।

বর্ধমানের বুড়িরবাগানে। ছবি: উদিত সিংহ

বর্ধমানের বুড়িরবাগানে। ছবি: উদিত সিংহ uditsinghaphoto@gmail.com

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২৪ ১০:০০
Share: Save:

আছে অনেক নিয়মই। কিন্তু আদৌ কী সে সব মেনে গড়া হয় বহুতল? বর্ধমান শহরের অনেক বাসিন্দার দাবি, নকশা অনুমোদনের পরেও বহুতলের উচ্চতা বাড়ানো হয়। একের পর এক ‘ফ্লোর’ নির্মাণ করা হয় আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে।

বাগান, খাসজমি, পুকুর বুজিয়ে বহুতল নির্মাণের অভিযোগ রয়েছে বিস্তর। শহরবাসীর অভিজ্ঞতা বলছে, অভিযোগ উঠলে কয়েক দিন নির্মাণকাজ বন্ধ থাকে। কয়েক মাস পরে কোনও ‘প্রভাবশালীর’ হাত ধরলেই কাজ শুরুর ছাড়পত্র পেয়ে যান নির্মাতারা। বর্ধমান শহরের তৃণমূলের এক প্রভাবশালী নেতা আক্ষেপ করে বলছিলেন, “চালকলের জমি চিহ্নিত শিল্পের জন্য। সেখানে আবাসন তৈরির অনুমোদন জেলা দিতে পারে না। আমরা আটকে রাখি। কিন্তু কলকাতা থেকে জায়গার চরিত্র বদল করা হচ্ছে। বহুতলের নকশার অনুমোদনও মিলছে। সম্প্রতি শহরের তিনটি চালকলের জমির চরিত্র পরিবর্তন করা হয়েছে।”

অভিযোগ, সরু গলির ভিতরেও মাথা তুলছে বহুতল। আইন অনুযায়ী ন্যূনতম যে ছাড় রাখা দরকার, তা থাকে না অধিকাংশ ক্ষেত্রেই। বাণিজ্যিক বহুতলগুলিতে পার্কিংয়ের ব্যবস্থা নেই। অনেক ক্ষেত্রে নকশা অনুমোদনের নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নির্মাণকাজ শুরু হয় না। হয় অনেক পরে। সে ক্ষেত্রে নতুন করে নকশার অনুমোদন নেওয়া হয় না। নির্মাণ সামগ্রীর মান ও বহুতলের কাঠামো ঠিক আছে কি না, সে দিকে পুরসভা নজর দেয় না। শুধু পুরসভা নয়, বর্ধমান শহর লাগোয়া ‘বর্ধমান উন্নয়ন সংস্থা’ (বিডিএ) এলাকার একাধিক পঞ্চায়েতেও বহুতল নির্মাণে নানা অভিযোগ ওঠে।

কলকাতার গার্ডেনরিচে ঘিঞ্জি এলাকায় বহুতল ভেঙে ন’জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশ কয়েক জন জখম হয়েছেন। বর্ধমান শহরের বাসিন্দাদের একাংশের আশঙ্কা, বড়বাজার, চাঁদনি, শ্যামবাজার, নীলপুর, ইছলাবাদ, শতাব্দীবাগের মতো বেশ কিছু ঘিঞ্জি জায়গায় অনেক বহুতল তৈরি হচ্ছে। শহরের এক প্রাক্তন পুর-প্রতিনিধি বলছিলেন, “গলির ভিতরে ঢুকতে হবে না, জিটি রোডের দুই ধারে, খোসবাগান, বোরহাটের মতো জায়গায় যে সব বহুতল তৈরি হচ্ছে বা হয়েছে, সেগুলির বেশির ভাগই গড়ে উঠেছে সরকারি নিয়ম না মেনে। অনেকের নির্মাণের উপযুক্ত ছাড়পত্রই নেই!” পুরসভা সূত্রে জানা যায়, কয়েক বছর আগে ‘অডিট রিপোর্টে’ বহুতলের অনুমোদন দেওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছিল।

সূত্রের খবর, অডিট সংস্থা তাদের রিপোর্টে জানিয়েছিল, ২০০৭-র আইন অনুযায়ী ১৪.৫ মিটারের বেশি উচ্চতার বাড়ি নির্মাণের অনুমোদন পুরসভা দিতে পারে না। সে ক্ষেত্রে অনুমোদন চেয়ে আবেদন জানাতে হয় রাজ্য সরকারের ‘মিউনিসিপ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টে’। তারা খতিয়ে দেখে অনুমতি দিলে পুরসভা নকশায় সিলমোহর দেয়। বর্ধমান শহরে তৈরি বহুতলগুলির নথি পরীক্ষা করে অডিটর-রা দেখেছিলেন, বেশির ভাগ বহুতলের তথ্যে ‘ফাঁক’ রয়েছে। রিপোর্টে ১০টি বহুতলের উদাহরণ দিয়ে বলা হয়েছে, ১৪.৫ মিটারের বেশি উচ্চতার বাড়ি নির্মাণ করা হলেও পুরসভার নথিতে ‘স্ট্রাকচারাল স্টেবিলিটি সার্টিফিকেট’ পাওয়া যায়নি। নিরীক্ষকদের পর্যবেক্ষণ, সরকারি নিয়ম ভাল করে দেখেনি বর্ধমান পুরসভা। বেনিয়ম হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। এক পুর-প্রতিনিধির দাবি, “খোসবাগান-সহ বেশ কয়েকটি এলাকায় অনেক বহুতলের নকশাই পাওয়া যাচ্ছে না! যাঁদের নামে জমির পরচা, তাঁদের নামে নকশা নেই বলে আরটিআই-এর জবাবে জানিয়েছে পুরসভা।”

পুরপ্রধান পরেশ সরকার বলেন, “যথেষ্ট নজর দিয়েই নির্মাণের পরিকাঠামো খতিয়ে দেখা হয়। গার্ডেনরিচের ঘটনার পরে আরও সতর্ক থাকব। কোথাও কোনও অভিযোগ উঠলে আমি নিজে পরিদর্শন করি।” বিডিএ-র চেয়ারম্যান কাকলি তা গুপ্তের প্রতিক্রিয়া, “যে কোনও বহুতলের অনুমোদন দেওয়ার পরে কী ধরনের সামগ্রী দিয়ে তা তৈরি হচ্ছে, তা দেখা হয়।”

অনিয়ম কোথায়: বাড়তি ফ্লোর নির্মাণ, ১৪.৫ মিটারের (৪৭.৬ ফুট) বেশি উঁচু বহুতল নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া, জমির চরিত্র বদল না করেই নকশার অনুমোদন দেওয়া, নির্মাণের ছাড়পত্র ও পার্কিং ব্যবস্থা না থাকা।

নিয়ম: আট ফুটের রাস্তায় ২৬.৩ মিটার, ১১.৬ ফুটের রাস্তায় ৩৬ ফুট এবং ২৩ ফুটের রাস্তায় ৪৭.৬ ফুট উঁচু বহুতলের অনুমোদন দেওয়া যায়। ৪৭.৬ ফুটের বেশি উচ্চতার বহুতলের ক্ষেত্রে শিবপুর এনআইটি বা যাদবপুরের স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারের কাছ থেকে নকশা তৈরি করাতে হয়। উচ্চতা অনুযায়ী বহুতলের চার পাশে জায়গা ছাড়তে হয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Bardhaman Building Collapse Garden Reach
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy