প্রতীকী ছবি।
দলছুট হয়ে আসা দু’-চারটে হাতি আগেও দেখেছেন পূর্ব বর্ধমান জেলার মানুষ। তা বলে প্রায় ৫০টি হাতিকে এক সঙ্গে আগে এ জেলায় দেখা যায়নি। বুধবার রাতে বাঁকুড়া জেলার পাত্রসায়র থেকে দামোদর টপকে গলসি হয়ে আউশগ্রামে আসা দলমার হাতি দলের আসার কারণ নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে। তবে কি দলমার হাতি দল নতুন ‘করিডর’ করে ফেলল— ভাবাচ্ছে বন আধিকারিকদেরও।
এমনিতেই এ দিন অনেক জমির ধান নষ্ট করেছে হাতিগুলি। ফেরার পথে হাতিগুলি কয়েকটি দলে ভাগ হয়ে গেলে কী যে হবে, তা-ও ভাবাচ্ছে বন দফতরের কর্তাদের। রাজ্যের বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, “পূর্ব বর্ধমান, বাঁকুড়া, বীরভূম জেলার বন দফতরের আধিকারিক ও কর্মীরা সেখানে রয়েছেন। কলকাতা থেকেও ২০ জনের একটি দল পাঠানো হয়েছে। তাঁরাই হাতিগুলির গতিবিধির উপরে নজর রাখছেন।’’
গত কয়েক বছরে দামোদর পেরিয়ে পূর্ব বর্ধমান জেলায় বিচ্ছিন্ন ভাবে দু’-একটি হাতি এসেছে। গত বছর তারা আসেনি। বন দফতর সূত্রে খবর, বুধবার রাত রাত ১২টা ২০ মিনিট নাগাদ হাতিগুলি পাত্রসায়র লাগোয়া পূর্ব বর্ধমানে ঢোকে। ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ দলটি দামোদরের শিল্যাঘাট পার হয়ে গলসিতে ঢোকে হাতির দল। তার পরে রামগোপালপুর, শিরোরাই, পুতনা, পুরষা হয়ে সকাল ৭টা নাগাদ দুর্গাপুর এক্সপ্রেসওয়ে পেরোয়। তার পরে পারাজ রেললাইন হয়ে উচ্চগ্রাম, সর, ভোতার মাঠ পেরিয়ে বিকেল নাগাদ নোয়াদার ঢালে পৌঁছয়। গাতিদের গতিবিধির উপরে নজর রাখতে ক্যামেরা লাগানো ‘ড্রোন’ ওড়ায় বন দফতর। কিন্তু হাতিদের পিছু নেওয়া মানুষের ঢল থাকায় বন কর্মীরা বিশেষ কিছু করতে পারেননি। রাতে হাতিগুলিকে সরানোর চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন বন দফতরের কর্তারা।
বন দফতর সূত্রে খবর, দলমার এই দলটিতে প্রায় ১২০টি হাতি ছিল। ঝাড়খণ্ডে আদি নিবাস হলেও বছরের বেশির ভাগ সময় ঝাড়গ্রাম, মেদিনীপুর ও বাঁকুড়া জেলার জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করে। মাসখানেক আগে, প্রায় ৮০টি হাতি ঝাড়গ্রাম থেকে বাঁকুড়ার বিষ্ণুপুর হয়ে বড়জোড়ার ‘করিডর’ ধরে রওনা দেয়। পথের মধ্যে লালগড়, গড়বেতা ও বিষ্ণুপুরে বেশ কিছু দিন তারা ছিল। সেখান থেকে প্রথমে পাত্রসায়রে ঢুকে কিছু দিন কাটিয়ে সোনামুখীর জঙ্গলে যায়। সেখান থেকে ফিরে আসে পাত্রসায়রে।
বাঁকুড়া থেকে হাতিগুলিকে ফেরত পাঠানো গেল না কেন? বর্ধমানে ঢোকার আগে হাতিগুলিকে কেন আটকাতে পারলেন না বন দফতরের কর্মীরা? জেলা বন দফতর সূত্রে জানা যায়, বাঁকুড়া সীমান্তে দু’টি ‘ওয়াচ টাওয়ার’ রয়েছে। সেখানে রাতভর কর্মীরা ছিলেন। একটা-দু’টো হাতি থাকলে হুলাপার্টি দিয়ে আটকানো সম্ভব। কিন্তু প্রায় ৫০টির মতো হাতিকে আটকানো সম্ভব নয়।
বন দফতরের মুখ্য বনপাল (দক্ষিণ-পূর্ব চক্র) কল্যাণ দাস বলেন, “দামোদরে সারা রাত আটকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। খুব সন্তর্পণে হাতিরা যাতে তাদের নিজস্ব পথ খুঁজে পায়, এখন আমাদের সেটা দেখতে হবে।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, পাত্রসায়রের মরাচৈতার জঙ্গলে দু’টি হাতির জন্ম হয়। তার পর থেকে তাদের সব সময় ঘিরে থাকছে ২২টি হাতি। ওই দলে রয়েছে আরও পাঁচটি হস্তি শাবক। সব মিলিয়ে শাবকদের সুরক্ষা নিয়ে খুবই সতর্ক হাতিরা।
তাই সম্ভবত শাবকেরা এ দিকে চলে আসায়, ওদের সঙ্গে দলটিও চলে আসতে পারে। আবার পাত্রসায়রের এত দিন থাকায় সেখান থেকে দামোদরের এ পাড়ে ভাল ধান পাওয়ার লোভেও ওরা আসতে পারে।
এ দিন আউশগ্রামে রাজ্যের প্রধান মুখ্য বনপাল (বন্যপ্রাণ) দেবল রায় বলেন, “বাচ্চাগুলি হাঁটতে-চলতে পারছে দেখার পরে,ই হাতিরা এগোতে থাকে। সম্ভবত খাবারের খোঁজেই হাতিগুলি এখানে চলে
এসেছে।’’ বনমন্ত্রী জানান, এক সঙ্গে ৪০-৫০টি হাতি পূর্ব বর্ধমান জেলায় ঢুকছে, সেটা আগে সম্ভবত বোঝা যায়নি। কেন এমন হল, তা খতিয়ে দেখা হবে।
হাতিরা তাদের খাবারে পরিপূর্ণ ধান চাষে সমৃদ্ধ পূর্ব বর্ধমান জেলায় তাদের নতুন ‘করিড়র’ করতে চাইছে কি না, তা-ও ভাবাচ্ছে বন কর্তাদের। বনমন্ত্রী বলেন, ‘‘পূব বর্ধমানের দিকে এতগুলি হাতি কেন এল, ওরা এ দিকে করিডর করতে চাইছে কি না, তা-ও বোঝার চেষ্টা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy