আশ্রয় আসানসোল হাসপাতাল। নিজস্ব চিত্র
দিনভর চরকিপাক খাচ্ছেন মধ্যবয়সী পাপ্পা। কোনও প্রশ্নেরই ঠিক মতো উত্তর দিতে পারেন না দক্ষিণ ভারতীয় এই মহিলা। তবে খাওয়ার সময় হলে যেখানেই থাকুন না কেন, ঠিক চলে আসেন।
সারাক্ষণই নিজের মনে কথা বলে চলেছেন সন্তু সাউ। কোথায় বাড়ি, অনেক ভেবেও বলতে পারেন না। তাই তাঁর আর বাড়ি ফেরা হয়নি। তাঁর মতোই অনর্গল বকে চলেছেন শিব চাঁদ। প্রশ্ন করলে উত্তরও দিচ্ছেন। কিন্তু পরিবারের কথা জিজ্ঞাসা করলেই চুপ। বাড়ি কোথায়, কে কে রয়েছেন সেখানে— এ সব প্রশ্নে মুখে কুলুপ।
এই রকম অন্তত জনা পনেরো মানুষের স্থায়ী ঠিকানা আসানসোল জেলা হাসপাতাল। বিভিন্ন সময়ে অসুস্থ এই মানুষদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পৌঁছে দিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যেরা বা পুলিশ। কিন্তু পরে আর কেউ ফিরিয়ে নিয়ে যাননি। হাসপাতালের পুরুষ বা মহিলা বিভাগেই রয়ে গিয়েছেন তাঁরা। হাসপাতালই হয়ে উঠেছে ঘরবাড়ি। কিন্তু সুস্থ মানুষজনকে এ ভাবে হাসপাতালে রাখা, রোগীর ভিড়ে তাঁদের বাড়তি চাপ বহন করতে গিয়ে মাঝে-মধ্যে সমস্যায় পড়েন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তবে হাসপাতালের সুপার নিখিলচন্দ্র দাস বলেন, ‘‘মানবিক কারণেই ওঁদের এখান থেকে বের করে দেওয়া যায় না।’’
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, প্রতিদিন দুপুর ও রাতে হাসপাতালের খাবারই দেওয়া হয় তাঁদের। আবার কখনও অন্য রোগীদের আত্মীয়রাও খাবার দেন। সুপার জানান, কেউ অসুস্থ হয়ে পড়লে রাউন্ডে আসা চিকিৎসকেরাই দেখে তাঁদের ওষুধ দিয়ে দেন। এ ছাড়া আর নিয়মিত দেখভালের কোনও প্রয়োজন হয় না।
হাসপাতালের পুরুষ বিভাগে ঢোকার দরজার বাঁ দিকে মেঝেতে বা বিছানায় শুয়ে-বসে থাকেন কয়েকজন। সন্তু সাউ পা ভেঙে বছরখানেক আগে ভর্তি হয়েছিলেন। হাসাপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, পরিচিত কয়েকজন রেখে গেলেও পরে আর কেউ খোঁজ নেয়নি। বাড়ির ঠিকানা বা পরিবারের কারও কথা জানাতে পারেনি সন্তুবাবুও। তাই হাসপাতালেই রয়ে গিয়েছেন। প্রায় চার বছর ধরে রয়েছেন শিব চাঁদও। বার্ধক্যজনিত অসুখে বাড়ির লোকেরা ভর্তি করে গিয়েছিলেন। তার পরে আর নিতে আসেননি। বারাবনির শ্যামল পাল মাস চারেক আগে ভাঙা পা নিয়ে ভর্তি হন। পরিবারের আর কেউ যোগাযোগ রাখেননি। তিনিও আর বাড়ি ফিরতে চান না বলে জানান। প্রায় দেড় বছর আগে রেলপুলিশ আসানসোল স্টেশন থেকে অচেতন এক মহিলাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পৌঁছে দেয়। তাঁকে সুস্থ করার পরে চিকিৎসকেরা বোঝেন, তিনি দক্ষিণ ভারতীয়। কিন্তু স্মৃতি লোপ পেয়েছে। বহু চেষ্টা করেও বাড়ির ঠিকানা জানা যায়নি। নিজের নাম জানিয়েছেন, পাপ্পা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, এই হাসপাতাল চত্বরেই মাল্টি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল তৈরির কাজ প্রায় শেষের মুখে। আধুনিকীকরণ হবে পুরনো ভবনটিরও। তখন এই আশ্রয় নেওয়া মানুষজনকে কোথায় ঠাঁই হবে, সে নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তাঁদের ভবিষ্যৎ কী হবে সে নিয়ে তাঁরা চিন্তায়, জানান সুপার নিখিলচন্দ্রবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy