Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
IDol Maker of bardhaman

মণ্ডপ-প্রতিমা তৈরি করেই শিক্ষকতার স্বপ্নে রং শম্পার

পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরে বিএড কলেজের কাছে বাড়ি শম্পার। সেখানেই তিনি বিএড করছেন। এই কলেজে পড়তে গিয়েই শিক্ষক, বর্ধমানের বাসিন্দা রঙ্গজীব রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর।

কাজে ব্যস্ত শম্পা। ছবি: উদিত সিংহ

কাজে ব্যস্ত শম্পা। ছবি: উদিত সিংহ uditnarayanabp.bwn@gmail.com

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১১
Share: Save:

ছোট থেকে ছবি আঁকতে ভালবাসতেন। মাঝে-মধ্যে মায়ের সঙ্গে আলপনাও দিতেন। তবে প্রতিমা গড়বেন বা মণ্ডপে সাজসজ্জা করবেন, ছোটবেলায় তেমন স্বপ্ন দেখেননি। এখন শুধু পারদর্শী হয়ে ওঠা নয়, নিজের পড়ার খরচ চালানো থেকে পরিবারের প্রয়োজনে পাশে দাঁড়ানো, এই কাজের মাধ্যমেই করছেন শম্পা দাস।

পূর্বস্থলীর বিদ্যানগরে বিএড কলেজের কাছে বাড়ি শম্পার। সেখানেই তিনি বিএড করছেন। এই কলেজে পড়তে গিয়েই শিক্ষক, বর্ধমানের বাসিন্দা রঙ্গজীব রায়ের সঙ্গে পরিচয় হয় তাঁর। জুড়ে যান তাঁর সংস্থার সঙ্গে। গত তিন বছর ধরে সেখানে কাজ করছেন। এ বার পশ্চিম বর্ধমানের রানিগঞ্জ এবং হুগলির চুঁচুড়ায় তাঁর হাতেই তৈরি হচ্ছে প্রতিমা ও মণ্ডপ। রঙ্গজীবের কথায়, ‘‘বি এড করতে প্রায় লক্ষাধিক টাকা খরচ। শম্পা এই কাজ করে পড়ার খরচ চালায়।” শম্পার ইচ্ছে, শিক্ষকতার সঙ্গে মণ্ডপ-শিল্পী হিসেবেও নিজেকে মেলে ধরার।

তাঁর বাবা সুজিত দাস নবদ্বীপ পুরসভার ঠিকাশ্রমিক, মা রাণু বাড়িতেই থাকেন। একমাত্র বোন রাখী বিজ্ঞান নিয়ে এ বছর স্নাতক হয়েছেন। টিনের চাল আর দরমার বেড়ার নীচেই শম্পা বড় হয়েছেন। কয়েক বছর আগে পাকা ছাদ হলেও, এখনও প্লাস্টার হয়নি। দরজা-জানলাও ভাল ভাবে বসেনি। শম্পার কথায়, “দুর্গাপুজোর আগে চার-পাঁচ মাস বাড়ির বাইরেই থাকতে হয়। গোড়ায় সপ্তাহে তিন দিন করে বাইরে থাকি। শেষ দু’মাস টানা বাইরে থাকতে হয়। নানা জন নানা কথা বলেন। কিন্তু যখন হাতে প্রতিমা পূর্ণ রূপ পায় বা মণ্ডপ তৈরি হয়, তখন সে সব ভুলে যাই। ভালবাসা থেকেই এই কাজের দিকে ছুটে এসেছি।’’

চুঁচুড়ার ক্লাবে গ্রিক স্থাপত্যের প্রাসাদের ভিতরে মূর্তি তৈরি করার ফাঁকে শম্পা বলেন, “প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে প্রায় অজানা শিল্পের দিকে ছুটে গিয়েছি। লড়াইটা খুব একটা সহজ ছিল না। তবে বাবা-মা পাশে থেকেছেন। স্যর (রঙ্গজীব) ভরসা জুগিয়েছেন। আমার মতো অনেকই মেয়েই এখন প্রতিমা বা মণ্ডপের কাজ করতে এগিয়ে আসছেন।” শম্পার বাবা বলেন, “আমাদের আর্থিক অবস্থা
খুব একটা ভাল নয়। রাতবিরেতে মেয়ে বাড়ি ফিরলে বা অনেক দিন বাড়িতে না থাকলে নানা জন নানা কথা বলেন। কিন্তু আমার লক্ষ্য, মেয়েকে স্বনির্ভর করে তোলা। তাই ওর ইচ্ছেকে সম্মান জানিয়েছি।”

শম্পা জানান, কলকাতার টালিগঞ্জ, বর্ধমান, দুর্গাপুর, রানিগঞ্জ, ভদ্রেশ্বর, চন্দননগরেও নানা সময়ে মণ্ডপ থেকে প্রতিমা তৈরি করেছেন। প্রত্যেক পুজো উদ্যোক্তার কাছে শম্পার অনুরোধ, “মেয়েরা বাড়ির বাইরে পা রেখে স্বনির্ভর হয়ে
ওঠার চেষ্টা করছে। বেশির ভাগ মেয়েই নিম্ন বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে আসেন। তাঁরা যাতে সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন, সেটা সবাইকে দেখতে হবে। তবেই আরও অনেক মেয়ে এই শিল্পে যোগ দিতে উৎসাহী হবেন।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2023 Bardhaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy