দামোদরের জলে ভেসেছে ঘর। বর্ধমানের মীরছোবায়। নিজস্ব চিত্র।
টানা বৃষ্টিতে ফুলেফেঁপেই ছিল ছোট নদী, সেচখাল। এ বার ডিভিসিতে জল ছাড়ার কারণে টইটুম্বুর হয়ে পড়ল দামোদরও। জলের চাপে বেশ কিছু জায়গায় বাঁধের মাটি ধসে ভাসিয়েছে গ্রাম। কোথাও আবার জল ‘ব্যাক ফ্লো’ করে জলমগ্ন করছে বিস্তীর্ণ এলাকা। জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা থেকে মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত জেলার ৮টি ব্লকের ৩৯টি পঞ্চায়েতে ৮৫টি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। জলের তলায় গিয়েছে চাষের জমিও।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, আউশগ্রাম ১ ও জামালপুর ব্লকে জলমগ্ন এলাকা বেশি। এ ছাড়াও রায়নার ২টি ব্লক, খণ্ডঘোষ, গলসির দু’টি ব্লক, বর্ধমান ১ ব্লক ক্ষতির মুখে পড়েছে। ভারী বৃষ্টির জল নামতে না পারায় সেচখাল ও কুনুরের জল উপচে আউশগ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকায় ও গুসকরা শহরে জল ঢুকে পড়েছে। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, জেলায় গত কয়েক দিনে ৪২৮টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, ২৩৭টি বাড়ি সম্পূর্ণ ক্ষতির মুখে পড়েছে। ২১টি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে, তার মধ্যে জামালপুরে হয়েছে ১২টি। মোট ৩৪৫৮ জন ত্রাণ শিবিরে আছেন, যার মধ্যে জামালপুরে আছেন ১৫৫৯ জন। এ ছাড়াও ২৯টি জায়গা থেকে রান্না করা খাবার বিলি করা হচ্ছে বলে দাবি জেলা প্রশাসনের।
এলাকা ঘুরে দেখে বিধায়ক (জামালপুর) অলোক মাঝি বলেন, “বাঁধের গর্ত দিয়ে জল ঢুকছে। কোথাও কোথাও পাড় উপচে দামোদর-মুণ্ডেশ্বরীর জল ঢুকেছে। কৃষি জমি বাঁচানোটাই চিন্তার।” জামালপুর পঞ্চায়েতের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মেহেমুদ খান বলেন, “মুণ্ডেশ্বরী নদী সংস্কার করার সময় ৬০-৭০ ফুটের একটা অংশে বাঁধ দেওয়া হয়নি। সেখান দিয়ে জল ঢুকেছে। গ্রামবাসী সারা রাত বালির বস্তা ফেলে বাঁধ তৈরি করেছেন। না হলে আরও বড় বিপদ ঘটে যেত।” এ দিকে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জামালপুরের কোঁড়া, অমরপুর, শিয়ালি-সহ বেশ কয়েকটি গ্রামের বাসিন্দারা সারা রাত জেগে বাঁধের উপর থেকে জল বাড়ার খবর গ্রামে পৌঁছে দিচ্ছিলেন। সকালে ওই গ্রামেরই একাংশ বাঁধের উপরে আশ্রয় নেন। তাঁদের ক্ষোভ, “বাড়ির ভিতরে জল। কোলের বাচ্চা নিয়ে বাঁধেই আশ্রয় নিয়েছি। কিন্তু জল, খাবার কিছুই মিলছে না। কেউ খোঁজও নেননি।” যদিও প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, আপাতত ওই এলাকায় ১০০টি ত্রিপল আর রান্না করা খাবার পাঠানো হয়েছে।
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার রাতে ২৭,৫০০০ কিউসেক পর্যন্ত হারে জল ছেড়েছিল ডিভিসি। তার পর ধীরে ধীরে সেই পরিমাণ কমানো হয়। সেচ দফতরের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার (বর্ধমান বিভাগ) প্রদীপ চক্রবর্তী বলেন, “ধীরে হলেও পূর্ব বর্ধমানে জল নামছে। ৬ ঘণ্টা কাটার পরে জল কতটা কমল বোঝা যাবে।” এ দিকে জেলা কৃষি দফতরের দাবি, ৪৩ হাজার হেক্টর কৃষিজমি জলের তলায়। ৩৫৭৫ হেক্টর আনাজ জমিতে জল দাঁড়িয়ে আছে। জেলাশাসক কে রাধিকা আইয়ার বলেন, “জল কমতে শুরু করেছে। আগে থেকেই সতর্কতা গ্রহণ করা হয়েছিল। আশা করছি, চিন্তার কিছু নেই। আমরা নজর রেখেছি।” আজ, বৃহস্পতিবার দুপুরে জামালপুরে জলমগ্ন এলাকা পরিদর্শনে যাওয়ার কথা রাজ্যের বিদ্যুৎমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসের। পরে জেলা প্রশাসনের বৈঠকে যোগ দেবেন তিনি। রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়াও আজ, জেলা প্রশাসন, সেচ দফতর ও অন্যান্য দফতরের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
রায়না ২ ব্লকেও দেবখালের পাড় ভেঙে কয়েকটি গ্রাম জলমগ্ন হয়েছে। রায়না ১ ব্লকের হিজলনা, নতুন এলাকাতেও জল ঢুকেছে। রায়নার মাছখাণ্ডা গ্রামে জন স্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের পানীয় জল প্রকল্প জলের তলায় চলে গিয়েছে। বিধায়ক (রায়না) শম্পা ধারা বলেন, “সেচখালের বা দেবখালের জল নামতে পাড়ছে না। ব্যাক-ফ্লো করছে। জলের চাপ থাকায় পাড় ভেঙে গিয়েছে।” ভাতার ও মন্তেশ্বরের খড়ি নদীর তীরবর্তী এলাকায় এবং ভাতারে কুনুর নদী সংলগ্ন মাহাতা পঞ্চায়েতের বহু এলাকায় চাষের জমি জলের তলায়। একই হাল মন্তেশ্বরের বাঁকা নদী সংলগ্ন গাঙ্গুরিয়া গাবরাপুরেও। জমিতেই গাছ পচে যাওয়ার আশঙ্কা করছেন চাষিরা। যদিও কৃষি দফতরের দাবি, দু-এক দিনের মধ্যে জল নামলে গাছ বাঁচানো যাবে, না হলে সমস্যা বাড়বে। তবে ফলনে ব্যাঘাত ঘটবে বলেই
আশঙ্কা তাঁদের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy