নদী-‘দখল’: গাড়ুইয়ের নদীবক্ষ জুড়েই তৈরি হয়েছে অজস্র নির্মাণ। আসানসোলে। ছবি: পাপন চৌধুরী
আর কিছু দিন পরেই বর্ষা। কিন্তু প্রতিশ্রুতির দেড় বছর পরেও আসানসোল পুরনিগম গাড়ুই নদী সংস্কারের কাজ শেষ করতে পারেনি। শেষ তো দূরঅস্ত্, নদীর দু’পাশে প্রস্তাবিত পাঁচিল তোলার কাজও অধরা। এই পরিস্থিতিতে ২০২১-এর বর্ষার দুর্ভোগের স্মৃতিকে মনে রেখে আশঙ্কার মেঘ দেখছেন আসানসোলের রেলপাড়ের বাসিন্দারা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও।
২০২১-এর সেপ্টেম্বরে প্রবল বর্ষণে আসানসোলের রেলপাড়-সহ লাগোয়া এলাকায় ৫০০টি পরিবার রাতারাতি গৃহহীন হয়ে পড়ে। ভেসে যান এক যুবক। মাটির বাড়ি ভেঙে মৃত্যু হয়েছিল আরও দু’জনের। এমনিতে সামান্য বৃষ্টিতেই রেলপাড়ের বাড়িতে জল ঢুকে যায়। বিশেষজ্ঞরা পর্যবেক্ষণের পরে এর কারণ হিসেবে তিনটি বিষয় সামনে এনেছিলেন— প্রথমত, নদী সংস্কার না হওয়ায় নাব্যতা কমে গিয়েছে। দ্বিতীয়ত, নদীর গতিপথ আটকে অবৈধ নির্মাণ তোলা হয়েছে এবং তৃতীয়ত, নদীবক্ষে যথেচ্ছ পরিমাণে আবর্জনাফেলা হচ্ছে।
২০২১ সালে আসানসোল পুরনিগমের পরিচালনার দায়িত্ব ছিল প্রশাসকমণ্ডলীর হাতে। প্রশাসকমণ্ডলীর চেয়ারম্যান ছিলেন বর্তমানে পুরনিগমের অধ্যক্ষ অমরনাথ চট্টোপাধ্যায়। সে সময় বিশেষজ্ঞেরা জানিয়েছিলেন, গাড়ুই নদী থেকে রেলপাড়ের বাসিন্দাদের রক্ষা করতে হলে, নদীর পলি তুলে নাব্যতা বাড়াতে হবে। অবৈধ নির্মাণ ও আবর্জনা ফেলা বন্ধ করতে জনবহুল এলাকায় নদীর দু’পাশে পাঁচিল দিতে হবে। ২০২২-এর ফেব্রুয়ারিতে নতুন পুরবোর্ড তৈরির পরে, মেয়র বিধান উপাধ্যায় গাড়ুই ও নুনিয়া নদীতে জমে থাকা পলি তোলা এবং রেলপাড়ে বসতি এলাকায় নদীর দু’পাশে পাঁচিল তোলার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। ঘটনা হল, রেলপাড়ের কসাইমহল্লা, জাহাঙ্গিরী মহল্লা, রামকৃষ্ণডাঙাল, ওকে রোড-সহ ১৫টি এলাকায় নদীর দু’পাড়ে পাঁচিল দেওয়ার কথা বলেছিল পুরনিগম। কিন্তু তা হয়নি।
বিরোধীদের অভিযোগ, পলি তোলার কাজও অত্যন্ত ধীরে হচ্ছে। পাঁচিল তোলার কাজ শুরুই হয়নি। সম্প্রতি দলের পুরনিগম ঘেরাও-অবস্থান কর্মসূচি থেকেও বিষয়টি নিয়ে সরব হয় কংগ্রেস। দলের জেলা সভাপতি দেবেশ চক্রবর্তীবলেন, “পুরনিগমের কাজ করার কোনও সদিচ্ছা নেই। তাই রেলপাড়ের বাসিন্দাদের জীবন-জীবিকা নিয়ে ছেলেখেলা চলছে।” পুরনিগমের বিরোধী দলনেত্রী তথা বিজেপির পুরপ্রতিনিধি চৈতালি তিওয়ারির অভিযোগ, “২০২১-এর পুনরাবৃত্তি হলে ফের রেলপাড়ের বিস্তীর্ণ এলাকা ভেসে যাবে। গাড়ুই সংস্কারে পুরনিগমের চূড়ান্ত গাফিলতিদেখা গিয়েছে।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও জানাচ্ছেন, বহু এলাকায় পলি তোলার কাজ হয়নি। নিয়মিত আবর্জনাও ফেলা হচ্ছে নদীতে, জানাচ্ছেন স্থানীয় বাসিন্দা শেখতণবীর জানালেন। এই পরিস্থিতিতে পলি তোলার কাজ কবে শেষ হবে এবং পাঁচিল দেওয়া কবে শুরু হবে, তা নিয়ে এলাকাবাসীর একাংশ প্রশ্ন তুলছেন।
বিষয়টি নিয়ে বেধেছে রাজনৈতিক তরজাও। যদিও, মেয়র বিধানের বক্তব্য, “কাজ চলছে। শেষ হতে কিছুটা সময় লাগবে। তৃণমূলের পুরবোর্ড ক্ষমতায় আসার আগে বিষয়টি নিয়ে কেউ ভাবেনি।”মেয়রের বক্তব্য ভিত্তিহীন, দাবি সিপিএমের। পাশাপাশি, সিপিএম নেতা পার্থ মুখোপাধ্যায়ের কটাক্ষ, “কোনও পরিকল্পনা ছাড়া পুরনিগম কাজ করে। এ জন্যই রেলপাড়ের মতো শহরবাসীর নানা এলাকাতেই বাসিন্দাদের দুর্ভোগের শেষ নেই।” তৃণমূল অভিযোগউড়িয়ে দিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy