Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

অভিভাবকদের চাপেই পড়ানো, দাবি শিক্ষকদের

শিক্ষা দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করেই গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকদের একাংশ, অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন তা বন্ধ করা যাচ্ছে না, কী বলছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, কী ভাবছেন শিক্ষা-কর্তারা— খোঁজ নিল আনন্দবাজার। শিক্ষা দফতরের নির্দেশ উপেক্ষা করেই গৃহশিক্ষকতা চালিয়ে যাচ্ছেন স্কুল শিক্ষকদের একাংশ, অভিযোগ দীর্ঘদিনের। কেন তা বন্ধ করা যাচ্ছে না, কী বলছে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ, কী ভাবছেন শিক্ষা-কর্তারা— খোঁজ নিল আনন্দবাজার।

অর্পিতা মজুমদার
দুর্গাপুর শেষ আপডেট: ১০ অগস্ট ২০১৯ ০০:১৭
Share: Save:

নির্দেশিকা জারি হয়েছিল বহু দিন আগে। কিন্তু তা কার্যকর করার ব্যাপারে তেমন নজরদারি ছিল না বলে অভিযোগ। ফলে, স্কুল শিক্ষকদের গৃহশিক্ষকতা করা বন্ধ হয়নি। সম্প্রতি ফের সেই নির্দেশিকা জারি করা হয়েছে। স্কুল শিক্ষকদের টিউশন করা চলবে না, এই দাবিতে সরব হয়েছেন সাধারণ গৃহশিক্ষকেরাও। তবে তাতে ফল কতটা হবে, সে নিয়ে সংশয় রয়েছে নানা পক্ষেই।

স্কুল শিক্ষকেরা টিউশন বন্ধ করছেন না কেন? নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক স্কুল শিক্ষক দাবি করেন, পড়ুয়ারা একটি বিষয় পড়ার জন্য স্কুলে ৭০-৯০টি ক্লাস পায়। বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি প্র্যাকটিক্যাল ক্লাস রয়েছে। ভাষার ক্ষেত্রে পাঠ্যবই ও ব্যাকরণ রয়েছে। ভূগোল বা অঙ্কের ক্ষেত্রেও সিলেবাস শেষ হতে সময় পেরিয়ে যায়। তাই পাঠ্যবইয়ের বাইরে অন্য সহায়ক বই বা প্রতিযোগিতার জন্য নিজেকে তৈরি করার জন্য যে সব বই পড়া দরকার, তা পড়ুয়াদের হয়ে ওঠে না। সে কারণেই অভিভাবক ও পড়ুয়ারা স্কুলের শিক্ষকদের কাছে টিউশন নেওয়ার জন্য আবেদন করেন।

স্কুল শিক্ষকদের অনেকেরই দাবি, মূলত অভিভাবকদের চাপেই তাঁরা টিউশন করেন। অভিভাবকদের অনেকের দাবি, বহু স্কুলে সব বিষয়ের শিক্ষক নেই। তাই স্কুলে ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা ঠিকঠাক হয় না। সে কারণেই অন্য স্কুলের সেই বিষয়ের শিক্ষকের কাছে টিউশন নিতে পাঠান তাঁরা। স্কুলের শিক্ষকেরা সিলেবাস শেষ করা ও প্রশ্নপত্রের বিষয়ে পড়ুয়াদের বেশি সাহায্য করতে পারেন বলে তাঁদের ধারনা।

দুর্গাপুরে খোঁজ নিয়ে দেখা গিয়েছে, ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের যে সব পড়ুয়ারা বোর্ডের পরীক্ষা বা জয়েন্ট এন্ট্রান্স, মেডিক্যাল এন্ট্রান্স, এআইইইই-সহ নানা সর্বভারতীয় পরীক্ষায় সফল হচ্ছেন, তাঁদের অনেকেই কিন্তু মধ্যশিক্ষা পর্ষদ পরিচালিত স্কুলগুলির শিক্ষকদের কাছে নানা বিষয়ে টিউশন নেন। প্রাক্তনীদের সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে নতুন অভিভাবকেরা ছেলেমেয়েদের এই সব শিক্ষকের কাছে টিউশন নিতে পাঠান বলে ধারনা প্রাক্তন শিক্ষকদের অনেকের। ফলে, স্কুল শিক্ষকদের টিউশনের রমরমা কমা তো দূর, দিন-দিন বেড়ে চলেছে।

সম্প্রতি পশ্চিম বর্ধমান জেলা স্কুল পরিদর্শক অজয় পাল প্রতিটি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের প্রধান শিক্ষক-শিক্ষিকাদের নির্দেশিকা পাঠিয়েছেন, সহ-শিক্ষকেরা যেন টিউশন না করার ব্যাপারে মুচলেকা দেন। প্রধান শিক্ষকদের নিশ্চিত করতে হবে, তাঁর স্কুলের কোনও সহ-শিক্ষক টিউশনের সঙ্গে যুক্ত নন। প্রত্যেক স্কুলকে এ ব্যাপারে রিপোর্ট পাঠানোরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক জানান, শিক্ষা দফতরের নির্দেশিকা ফের এক বার মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে স্কুলগুলিকে।

সাধারণ গৃহশিক্ষকদের অনেকের অভিযোগ, পরীক্ষায় বেশি নম্বর পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে স্কুল শিক্ষকদের একাংশ রমরমিয়ে গৃহশিক্ষকতার কারবার চালিয়ে যাচ্ছেন। যদিও স্কুল শিক্ষকেরা তা মানতে নারাজ। অণ্ডালের গৃহশিক্ষক সন্তোষ পাল, সঞ্জয় দে-রা অভিযোগ করেন, ‘‘নানা কারণে অভিভাবকেরা চান, ছেলেমেয়েরা স্কুলের শিক্ষকদের কাছেই টিউশন নিক। এর ফলে আমাদের মতো যাঁরা শুধু গৃহশিক্ষকতার উপরে নির্ভরশীল, তাঁরা বিপাকে পড়ছি। সরকারি উদ্যোগে যদি পরিস্থিতি পাল্টায় তবে সুবিধা হবে।’’ কিন্তু শুধু নির্দেশ জারি করেই কি স্কুল শিক্ষকদের টিউশন করা বন্ধ করা যাবে, সে প্রশ্ন থাকছেই।

অন্য বিষয়গুলি:

Teacher School Tuition
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy