খণ্ডঘোষে বিক্ষোভ বাসিন্দাদের। নিজস্ব চিত্র।
বিনামূল্যে খাদ্যসামগ্রী বিলির তৃতীয় দিনেও নানা অভিযোগ উঠেছে পূর্ব বর্ধমান জেলা জুড়ে। কোথাও খাদ্যসামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে, কোথাও টান আটার জোগানে। মেমারির কেন্না গ্রামে আবার তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর সংঘর্ষও বাধে। গলসি ২ ও মেমারি ১ ব্লকের রেশন ডিলারকে শো-কজ় করা হয়েছে বলে খাদ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।
মেমারি
বৃহস্পতিবার খাদ্যসামগ্রী কম দেওয়ার অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান মেমারির কেন্না গ্রামের একাংশ বাসিন্দা। গ্রামের রেশন ডিলার ‘কেন্না সমবায় সমিতি’-কে শো-কজ় করে খাদ্য দফতর। এই ঘটনার জেরে তৃণমূলের দুই গোষ্ঠীর ‘সংঘর্ষ’ বাধে। পুলিশ জানায়, শেখ রফিক নামে এক জন তাঁদের কাছে অভিযোগ করেছেন, রেশন নিতে গিয়ে তাঁর দোকানে চড়াও হন স্থানীয় বাসিন্দা ইমরান সরকার ও তাঁর দলবল। বিকেলেও তাঁকে রাস্তায় ফেলে মারা হয় বলে অভিযোগ। ওই গ্রামেরই বাসিন্দা সাদ্দাক হোসেনের আবার অভিযোগ, রেশনে চাল ও গম ঠিক মাপে দেওয়া হচ্ছিল না বলে গোলমাল হয়। মেমারি থানার পুলিশ মীমাংসা করে। সেই আক্রোশ থেকে বৃহস্পতিবার রাতে কেন্না গ্রামের কিছু ব্যক্তি শাবল, লাঠি, বাঁশ, উইকেট, ব্যাট, টাঙি নিয়ে আজহারউদ্দিন সরকারের বাড়িতে চড়াও হয়। ইট ও পাথর ছোড়া, ভিতরে ঢুকে মারধর, ভাঙচুর চালানো হয় বলেও অভিযোগ। রাতে দ্বন্দ্ব সামলাতে পুলিশ যায় গ্রামে। শুক্রবার দু’পক্ষের দু’জনকে গ্রেফতারও করা হয়। মেমারির প্রাক্তন বিধায়ক তথা জেলা পরিষদের ডেপুটি মেন্টর আবুল হাসেম মণ্ডলের দাবি, “পারিবারিক গণ্ডগোল হচ্ছিল। পরে গ্রামবাসী যোগ দেন।’’ তৃণমূলের মেমারি ১ ব্লক সভাপতি মধুসূদন ভট্টাচার্যের আবার দাবি, “যাঁরা নিয়ম-নীতি না মেনে দল করছে, তাঁরাই এ সব কাণ্ড ঘটাচ্ছে।’’
মেমারির একটি রেশন দোকানেও সব উপভোক্তাকে খাদ্যসামগ্রী না দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পরেও ফিরিয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মেমারি ১-এর বিডিও বিপুল মণ্ডলেরও যদিও দাবি, “সব রেশন দোকান থেকে খাদ্যসামগ্রী দেওয়া হচ্ছে। যে ফাঁক রয়েছে রবিবারের মধ্যে পূরণ হয়ে যাবে।’’
আউশগ্রাম-খণ্ডঘোষ
আউশগ্রামের দু’টি ব্লক ও গুসকরা পুরসভা এলাকার ৮৮টি রেশন দোকানের মধ্যে মাত্র দু’টি দোকানে খাদ্যসামগ্রী বিলি করা হয়। ক্ষোভ জানান এলাকার লোকজন। ডিলারদের তরফে রামমোহন কোনারের দাবি, “এখনও পর্যন্ত বরাদ্দ সামগ্রী পুরোটা পাওয়া যায়নি। তাই বিনামূল্যে রেশন দেওয়ার কাজ চালু করা যায়নি।” কিছু কিছু রেশন দোকানে ডিলারদের তরফে নোটিস ঝুলিয়ে এ কথা জানিয়েও দেওয়া হয়েছে। আউশগ্রাম ১-এর বিডিও চিত্তজিৎ বসু জানান, রবিবারের মধ্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে হচ্ছে। খণ্ডঘোষ সদরে কম জিনিস দেওয়া হচ্ছে দাবি করে ক্ষোভ দেখান গ্রাহকেরা। সিপিএমের তরফে ব্লক প্রশাসনের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। খণ্ডঘোষের বাসিন্দা জয়দেব মণ্ডলের দাবি, “আমার অন্ত্যোদয় কার্ড রয়েছে। সেই হিসাবে ১৫ কিলোগ্রাম চাল, ১৯ কিলোগ্রাম আটা পাওয়ার কথা। অথচ তিন কেজি চাল, দু’কেজি আটা পেয়েছি।’’ মহকুমা খাদ্য নিয়ামক (বর্ধমান সদর) স্বপন বিশ্বাস বলেন, “এমন অভিযোগ কানে আসেনি। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা মিললে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ বর্ধমানের বেগুট গ্রামেও খাদ্যদ্রব্য কম দেওয়ার দাবিতে বিক্ষোভ হয়।
কালনা
কালনার ২৭৭টি রেশন দোকানে নির্দিষ্ট দূরত্বে মেনে পণ্য বিলি হয়। গোলমাল এড়াতে সিভিক ভলান্টিয়ার মোতায়েন করা হয় কিছু জায়গায়। তবে দুপুরের পরে, আটা ফুরিয়ে যাওয়ার অভিযোগ করেন অনেকেই। কালনা ১ ব্লকের বেগপুর পঞ্চায়েতের এক রেশন ডিলার হবি শেখ বলেন,‘‘আটা যতদিন না আসছে ততদিন রাজ্য খাদ্য সুরক্ষা যোজনার (আরকেওয়াই)-২ কার্ড থাকা উপভোক্তাদের পরিষেবা দেওয়া হবে।’’ রেশন ডিলার অ্যাসোসিয়েশনের কালনার সম্পাদক সুশীল ঘোষও বলেন, ‘‘আটা এলেই বিলি করা হবে। তবে সমস্ত দোকানই খোলা থাকবে।’’ মহকুমা খাদ্য নিয়ামক অভিজিৎ বেজ জানান, মিলগুলি আটার জোগান বাড়ানোর চেষ্টা করছে।
কাটোয়া
বিশৃঙ্খলা এড়াতে পুলিশের সাহায্য চেয়েছেন কাটোয়ার ডিলারেরা। তাঁদের দাবি, খাদ্যসামগ্রী কতখানি বণ্টন করা হবে তা নিয়ে বিভ্রান্তি রয়েছে গ্রাহকদের। গোলমালও হচ্ছে। শুক্রবারও কেতুগ্রামের পাণ্ডুগ্রামে এক রেশন ডিলারকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখান উপভোক্তারা। মহকুমা খাদ্য নিয়ামক দেবলীনা ঘোষ বলেন, ‘‘কোথাও গণ্ডগোল হলে পুলিশের সহযোগিতা পেতে আমরা মহকুমা জুড়ে রেশন দোকানের নাম ধরে একটি তালিকা তৈরি করেছি। পুলিশ প্রশাসনের কাছে তা দেওয়া হয়েছে।’’
গলসি
সকাল থেকেই রেশন ডিলারের দোকান ঘিরে বিক্ষোভ শুরু হয় গলসি ২ ব্লকের খেতুড়া গ্রামে। গ্রামবাসীর অভিযোগ, আটা কম দিচ্ছেন ডিলার শেখ হাজিবুর রহমান। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যান গ্রামের তৃণমূল কর্মী শেখ আসগর আলি (মন্টু)। অভিযোগ, একাংশ বিক্ষোভকারী তাঁর উপর চড়াও হয়ে মারধর করেন। গলসি ২ পঞ্চায়েত সমিতির কর্মাধ্যক্ষ শেখ আমানউল্লাহ বলেন, ‘‘যাঁদের কম দেওয়া হয়েছিল তাঁদের পাওনা মিটিয়ে দেওয়া হয়চ্ছে। গণবণ্টন ব্যবস্থায় দলের কেউ নাক গলালে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” তবে অভিযোগ মানতে চাননি ওই ডিলার। গলসি ২-এর বিডিও শঙ্খ বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “যাঁরা খাদ্যসামগ্রী কম পেয়েছিলেন তাঁদের পুরো হিসাব বুঝিয়ে দিতে বলা হয়েছে। ওই ডিলারের উপরে নজর
রাখা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy