ইউক্রেন থেকে ফিরলেন তিন পড়ুয়া। তাঁদের সংবর্ধনাও জানানো হয়। বুধবার অন্ডালে। ছবি: বিকাশ মশান
‘‘বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হওয়ার আশা কার্যত ছেড়েই দিয়েছিলাম আমরা’’— বুধবার পশ্চিম বর্ধমানের অন্ডাল বিমানবন্দরে নেমে, প্রথমে এ কথাই বললেন জিন্নত আলম, নেহা খানরা।
ডিএসপি টাউনশিপের নেহা ও বেনাচিতির জিন্নত জানান, রবিবার বিকেলে তাঁরা দিল্লি এসে গিয়েছিলেন। ছিলেন বঙ্গভবনে। বুধবার বিকেলে তাঁরা পৌঁছন অন্ডালে। সেখান থেকে প্রশাসনের তরফে, তাঁদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়। এ দিন বিপাশা সাউ নামে আরও এক ছাত্রী, দুর্গাপুরের সুকান্তপল্লির বাড়িতে ফেরেন ওই একই উড়ানে।
নেহা ও জিন্নত ইউক্রেনের রাজধানী কিভ থেকে প্রায় ছ’শো কিলোমিটার দূরের ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক শহরের ‘ইভানো ফ্রাঙ্কিভস্ক ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি’র এমবিবিএসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। নেহা জানান, শনিবার ভারত সরকার রোমানিয়া, হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড, স্লোভাক রিপাবলিক সীমান্তে সরকারি আধিকারিকদের পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়ার খবর পাওয়ার পরেই, তাঁরা তৎপর হয়ে ওঠেন। বাস ভাড়া করে ১৫৪ জন রোমানিয়া সীমান্তের দিকে যাত্রা করেন। তিনি বলেন, “ঠিক মতো খাবার জোটেনি। টানা দু’দিন ধরে ঘুম নেই চোখে। সেই ক্লান্ত শরীর নিয়েই সীমান্তের আগে, শেষ প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যে হেঁটে পেরোতে হয়। ভারতীয় দূতাবাসের কর্মীরা ভিসার ব্যবস্থা করে দেন। আমাদের রাখা হয় হোটেলে। রবিবার সকালে রোমানিয়া থেকে বিমানে দিল্লির উদ্দেশে রওনা দিই।” জিন্নত বলেন, “তার পর যেন, ধড়ে প্রাণ এল!”
বুধবার বিকেলে অন্ডাল বিমানবন্দরে তাঁদের আনতে গিয়েছিলেন পরিবারের সদস্যেরা। প্রশাসনের আধিকারিকদের পাশাপাশি, ছিলেন পাণ্ডবেশ্বরের তৃণমূল বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, দুর্গাপুর পশ্চিমের বিজেপি বিধায়ক লক্ষ্মণ ঘোড়ুই।
নেহা বিমানবন্দরের বাইরে আসতেই তাঁকে জড়িয়ে ধরেন বোন নিশা। বাবা-মা-সহ পরিবারের বাকিদের কাছে পেয়ে আপ্লুত জিন্নত বলেন, “সত্যি কথা বলতে, বাবা-মায়ের সঙ্গে দেখা হবে, সে আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম আমরা। কেমন লাগছে, তা বলে প্রকাশ করতে পারছি না। সীমান্তে প্রবল ঠান্ডা। ব্যাপক ‘অব্যবস্থা’, গন্ডগোল। নিরাপত্তারক্ষীদের হাতে ‘হেনস্থাও’ হতে হয়েছে কাউকে কাউকে। আমার আবেদন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বাকিদের ফিরিয়ে আনা হোক।” নেহা বলেন, “আমরা তিন দিন দিল্লিতে ছিলাম। দিল্লি থেকে রোমানিয়া, পোল্যান্ড সীমান্তে থাকা বন্ধু, সহপাঠীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে গিয়েছি, যাতে তাঁদের দেশে ফিরতে সুবিধা হয়।” মায়াবাজার সুকান্তপল্লির বাসিন্দা বিপাশা ‘টার্নোপিল ন্যাশনাল মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে’র প্রথম বর্ষের ছাত্রী। তিনি বলেন, “সীমান্ত পেরোনোর পরে, আর কোনও সমস্যা হয়নি। বেশ ভাল ব্যবস্থা ছিল সরকারি তরফে।” বিমানবন্দর থেকে সরকারি গাড়িতে করে তিন জনকেই বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হয়। নেহার মা নৌশাভা পারভিন বলেন, “মেয়েকে দু’হাতের মধ্যে পেয়ে নিশ্চিন্ত হলাম।”
এ দিকে, খারকিভে হস্টেলের বেসমেন্টে আটকে থাকা, দুর্গাপুরের রাতুরিয়ার যমজ বোন রুমকি ও ঝুমকি গঙ্গোপাধ্যায় শেষ পর্যন্ত প্রশাসনের সহযোগিতায়, সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন। মা সুনন্দা বলেন, “সকালে কথা হয়েছে। খুব কষ্টের মধ্যে আছে ওরা!” ফোনে পরিবারের সঙ্গে সব সময় যোগাযোগ হচ্ছে না দুই বোনের। তবে কর্মসূত্রে পোল্যান্ডে থাকা পরিচিত দীননাথ মল্লিকের মাধ্যমে বাড়ির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন তাঁরা। দীননাথ জানান, ফোনে ওঁরা জানিয়েছেন, বৃষ্টির মধ্যে হস্টেল থেকে হেঁটে যেতে হয়েছে, দূরের কোনও স্টেশনে। ওঁদের হাঙ্গেরি নিয়ে যাওয়া হবে। স্টেশনে ব্যাপক ভিড়। পর পর দু’টি ট্রেনে ওঁরা উঠতে পারেননি।
ফোনে রুমকি-ঝুমকি বলেন, “প্রথমে ইউক্রেনের নাগরিকেরা ট্রেনে চড়ছেন। তার পরে, জায়গা থাকলে অন্য দেশের মহিলারা প্রথমে উঠছেন। পরে, জায়গা থাকলে পুরুষদের উঠতে দেওয়া হচ্ছে ট্রেনে।” এর পরে আর তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি বলে জানান দীননাথ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy