ধৃত মানোয়ার। নিজস্ব চিত্র।
রেলসেতুর নীচে ঘুমোনোর সময়ে গাড়ির ধাক্কায় মৃত্যু হয়েছিল তিন ভবঘুরের। সেই ঘটনার তদন্তে গোড়ায় পুলিশের কাছে কার্যত কোনও ‘সূত্র’ ছিল না। মৃতদের পরিচয়ও ছিল অজ্ঞাত। ১৮ দিনের চেষ্টায় সেই গাড়ির চালকের খোঁজ পেলেন তদন্তকারীরা। পুলিশ জানায়, সোমবার রাতে বর্ধমান শহরের বাজেপ্রতাপপুরের দুবরাজদিঘি থেকে গ্রেফতার করা হয় মানোয়ার শেখ নামে ওই চালককে। মঙ্গলবার ধৃতকে আদালতে তোলা হলে ৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত জেল হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়।
পুলিশ সুপার (পূর্ব বর্ধমান) ভাস্কর মুখোপাধ্যায় বলেন, “ডিএসপি (সদর) শৌভিক পাত্রের নেতৃত্বে কার্যত সূত্রহীন একটি ঘটনার কিনারা করা গিয়েছে। ১৮টি সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখা হয়েছে। তার পরে, স্থানীয় একটি পানশালার বিলের সূত্র ধরে গাড়ির চালককে ধরা হয়েছে। গাড়িতে থাকা কয়েকজন যাত্রীর খোঁজ চলছে।’’ সোমবার রাতেই তল্লাশি চালিয়ে ছাই রঙের গাড়িটি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
৬ নভেম্বর রাতে বর্ধমান স্টেশনের কাছে রেলসেতুর নীচে শুয়ে থাকা তিন জনকে ধাক্কা মেরে পালিয়ে যায় একটি গাড়ি। ঘটনাস্থলেই দু’জনের মৃত্যু হয়। পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আরও এক জন মারা যান। তিন জনেরই পরিচয় মেলেনি। তাঁরা বড় থামের পাশে চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। পুলিশ জানায়, প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানা যায়, সব দোকানপাট বন্ধের পর তাঁরা রাতে সেতুর নীচে শুয়েছিলেন। হঠাৎ জোরে আওয়াজ হয়। চোখ খুলে তাঁরা দেখেন, একটি গাড়ি জোরে নবাবহাটের দিকে চলে যাচ্ছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে দেখে, দু’জন মারা গিয়েছেন। আর এক জনের অবস্থা খারাপ। তাঁকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত বুধবার সেখানে তাঁর মৃত্যু হয়।
তদন্তকারীরা জানান, একটি যাত্রিবাহী গাড়ি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে, এই তথ্য ছাড়া, আর কোনও সূত্র ছিল না। ওই এলাকার বেশ কিছু সিসিটিভি ফুটেজ জোগাড় করা হয়। বর্ধমান শহরের ফুটেজ দেখে কিছু মেলেনি। চৌধুরী বাজারের ফুটেজে একটি ছাই রঙের গাড়ি দেখা গেলেও অন্ধকারে নম্বর বোঝা যায়নি। ওই এলাকার ফুটেজ খতিয়ে দেখে জেলখানা মোড়ের কাছে একটি পানশালার কাছে গাড়িটি দেখতে পায় পুলিশ। পানশালা কর্তৃপক্ষ ও কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সেখান থেকেই গাড়িটি বেরিয়েছিল। তদন্তকারীরা দুর্ঘটনার সময় অনুযায়ী পানশালার বিলে থাকা ফোন নম্বর ধরে খোঁজ শুরু করেন। সেই নম্বর ধরেই মানোয়ারের সন্ধান মেলে বলে জানান তদন্তকারীরা। পুলিশের দাবি, খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মানোয়ার দুর্ঘটনার পর থেকে এলাকার বাইরে রয়েছে। সোমবার রাতে সে বাড়িতে পা রাখতেই ধরা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার দিন বিকেলে মানোয়ারের বাড়িতে কয়েকজন আত্মীয় এসেছিলেন। তাঁদের নিয়ে গাড়িতে করে পানশালায় যায় সে। তদন্তকারীদের দাবি, ঘটনার কথা তাঁদের কাছে মেনে নিয়েছে মানোয়ার। সেতুর নীচে কেউ চাদরমুড়ি দিয়ে শুয়ে আছে, গাড়ি চালানোর সময়ে তা বুঝতে পারেনি বলে পুলিশের কাছে দাবি করেছে সে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy