সম্প্রতি সংস্থায় কর্মীদের প্রতিবাদ।
জেলা তো বটেই রাজ্যের দুই গর্ব, এই দু’টি কারখানা। রূপনারায়ণপুরের হিন্দুস্তান কেব্লস ও চিত্তরঞ্জনের রেল ইঞ্জিন কারখানা (সিএলডব্লিউ)। প্রথমটিতে তালা ঝুলেছে আগেই। দ্বিতীয়টি ‘কর্পোরেট’ হওয়ার পথে। এই পরিস্থিতিতে সিএলডব্লিউ-এর ভবিষ্যৎ নিয়ে সংশয়ে শ্রমিক ও এলাকাবাসী। একই রকম সংশয়ের মেঘ এলাকার আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রেও।
পশ্চিমবঙ্গ-ঝাড়খণ্ড সীমানার দুই শহর রূপনারায়ণপুর ও চিত্তরঞ্জনের আশপাশে আসানসোল, জামতাড়া ও মিহিজামের মতো বাণিজ্য এলাকা রয়েছে। কিন্তু দেশ স্বাধীন হওয়ার আগে সাঁওতাল পরগনার অন্তর্গত এই দুই শহরের আর্থিক অবস্থা তেমন ভাল ছিল না। পরে বিধানচন্দ্র রায়ের উদ্যোগে পঞ্চাশের দশকে এই দুই কারখানা তৈরি হয়। কমবেশি ২৫ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হয়। গড়ে ওঠে বাণিজ্যকেন্দ্র, স্কুল-কলেজ, আইটিআই, পলিটেকনিক কলেজ। এলাকায় সাংস্কৃতিক
চর্চাও বাড়ে।
১৯৫০-র ২৬ জানুয়ারি চিত্তরঞ্জন লোকোমোটিভ ওয়ার্কসের (সিএলডব্লিউ) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন চিত্তরঞ্জন দাশের স্ত্রী বাসন্তীদেবী। ১৯৫০-এর ১ নভেম্বর প্রথম বাষ্প-ইঞ্জিন তৈরি হয় এখানে। তার পরে থেকে এ যাবৎ বাষ্প, ডিজেল, বিদ্যুৎ চালিত প্রায় এগারো হাজারেরও বেশি ইঞ্জিন তৈরি হয়েছে এখানে। নানা সময়ে এই কারখানা পরিদর্শন করেছেন জওহরলাল নেহরু, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণন, সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রধানমন্ত্রী নিকোলাই বুলগানিন-সহ আরও অনেক
বিশিষ্ট ব্যক্তিই।
কিন্তু পাঁচ বছর আগে নেমে আসে প্রথম আঘাত। কেব্লস কারখানাকে প্রযুক্তিগত ভাবে উন্নত না করে কেন্দ্রীয় সরকার সেটিকে বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়, অভিযোগ শ্রমিক সংগঠনগুলি। ক্রমে তালাও ঝোলে সেই কারখানায়।
শ্রমিক সংগঠনগুলির মতে, এ বার ‘পালা’ হয়তো সিএলডব্লিউ-এর। গত ১৮জুন কারখানাকে ‘কর্পোরেট’ করার বিজ্ঞপ্তি জারি করে এ বিষয়ে সংস্থার জেনারেল ম্যানেজারের কাছে পরামর্শ চেয়েছে রেল বোর্ড। কারখানা সূত্রে জানা গিয়েছে, সংস্থায় বর্তমানে কত শ্রমিক-কর্মী রয়েছেন, এর ভবিষ্যৎ কী, তা সমীক্ষার জন্য রেলের একটি সংস্থাকে নিযুক্ত করা হয়েছে। একশো দিনের মধ্যে সেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করার সময়সীমা ধার্য হয়েছে।
এই সব পদক্ষেপেই আতঙ্কে শ্রমিকেরা, এলাকাবাসী। তাঁদের মতে, এ সবই আসলে কারখানাকে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া, না হলে কারখানার গেটে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার ‘চক্রান্ত’। কিন্তু কেন এ সব, কারখানার ইতিহাস আর বর্তমানকে সাক্ষী রেখে সে প্রশ্নও করছেন শ্রমিকেরা। তাঁদের দাবি, শুরুর দিন থেকে এ পর্যন্ত এই কারখানা কোনও দিন লোকসান করেনি। উৎপাদন খরচও তেমনও নয়। এমনকি, কারখানার লভ্যাংশ থেকে ডানকুনিতে আরও একটি শাখাও খোলা হয়েছে।
শ্রমিকদের আরও দাবি, সিএলডব্লিউ-তে কর্মী অসন্তোষ, বিক্ষোভের জেরে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে, এমন ঘটনা ঘটেনি। তবে কারখানার প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কর্মীর বড় অংশই জানান দিচ্ছেন, কারখানা বাঁচাতে তাঁরা লড়াই করবেন। সেই লড়াই হবে ইতিহাসকে সাক্ষী রেখে বর্তমানের জন্যই!
তবে কারখানা না বাঁচলে এলাকার অর্থনীতি, সংস্কৃতি, শিক্ষার হাল কী হবে, এই প্রশ্নই এখন শিল্প শহরের বাতাসে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy