Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Smuggling

গোদায় রেশনের চাল পাচারের নালিশে অশান্তি

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে ‘অন্য বস্তায়’ ভরে রাতের অন্ধকারে টোটোয় করে চাল পাচার করছিলেন স্থানীয় রেশন ডিলার।

টোটো আটকে রেখে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র

টোটো আটকে রেখে বিক্ষোভ। বৃহস্পতিবার সকালে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
বর্ধমান শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০২০ ০০:৪৪
Share: Save:

রেশনের চাল ‘পাচারের’ অভিযোগ নিয়ে তেতে উঠল বর্ধমান শহরের গোদা এলাকা। তাতে লাগল শাসক দলের ‘গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের’ রঙও। বৃহস্পতিবার সকালে ঘটনার খবর পেয়ে এক টোটো চালককে আটক করে পুলিশ। এলাকার রেশন ডিলার আহম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে গণবণ্টনের চাল ‘পাচার’ করার অভিযোগে পুলিশ মামলা রুজু করেছে।

বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, বেশ কিছু দিন ধরে ‘অন্য বস্তায়’ ভরে রাতের অন্ধকারে টোটোয় করে চাল পাচার করছিলেন স্থানীয় রেশন ডিলার। সে জন্য এলাকায় তৃণমূলের কর্মী বলে পরিচিত কয়েকজন ভোর থেকে ‘পাহারা’ দিতে শুরু করেন। শেখ আসিফ আলি নামে এক যুবকের অভিযোগ, ‘‘ভোর ৩টে থেকে আমরা কয়েকজন পাহারা দিচ্ছিলাম। সাড়ে ৬টা নাগাদ একটি টোটোয় বেশ কয়েক বস্তা চাল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। তার আগেই মোটরবাইরে রেশন ডিলার বেরিয়ে যান। সন্দেহ হতেই টোটো চালককে আটক করি। তাঁর কাছে জানতে পারি, ডিলারের গুদাম থেকে চাল পাচার করা হচ্ছিল।’’

এই খবর জানাজানি হওয়ার পরেই এলাকার বাসিন্দারা রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। উপভোক্তাদের একাংশের অভিযোগ, কার্ড থাকলেও বেশ কয়েক বছর ধরে রেশনের খাদ্যসামগ্রী মিলত না। ডিলারের কাছে বারবার গেলেও তিনি আমল দিতেন না। তাঁদের অভিযোগ, সেই সব সামগ্রী গুদাম থেকে নতুনগঞ্জ, তেঁতুলতলা পাইকারি বাজারে তিনি বিক্রি করতেন।

পুলিশের দাবি, আটক টোটো চালক জেরায় তাদের জানিয়েছেন, ‘লকডাউন’-এর সময়ে পাঁচ-ছ’বার রেশন দোকান থেকে চাল বাজারে নিয়ে গিয়েছেন তিনি। রেশনের জিনিস বলে তাঁর ‘চোরাই’ দ্রব্য মনে হয়নি। যদিও এ সব অভিযোগ মানতে নারাজ রেশন ডিলার। তাঁর কথায়, ‘‘এ সবের সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক নেই। ওই চাল আমার দোকান থেকে বা গুদাম থেকে বেরোয়নি। চালের বস্তাও খাদ্য দফতরের নয়।’’ তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে কয়েকজন উপভোক্তাও দাবি করেন, অনেকেই বিনামূল্যে পাওয়া চাল-আটা স্থানীয় একটি মুদির দোকানে বিক্রি করে দেন। ১৪ টাকা প্রতি কেজি দরে চাল কিনে ওই দোকানদার পাইকারি বাজারে ১৮-২০ টাকায় বিক্রি করেন। ওই মুদির দোকানদারই পাইকারি বাজারে এই চাল নিয়ে যাচ্ছিলেন বলে তাঁদের দাবি। ওই দোকানদারকে এ দিন ঘটনার পরে এলাকায় দেখা যায়নি।

ঘটনার পরে জেলা তৃণমূলের সহ-সম্পাদক কাঞ্চন কাজির নেতৃত্বে এলাকায় মিছিল হয়। সেই মিছিল থেকে বর্ধমানের বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান খোন্দেকার মহম্মদ সাহিদুল্লাহকে চাল পাচারকারীর ‘মদতদাতা’ বলে অভিযোগ তোলা হয়। কাঞ্চন কাজির অভিযোগ, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ওই রেশন ডিলারের বিরুদ্ধে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু ক্ষমতায় থাকা মানুষজন সাধারণ মানুষের কথা শোনেননি। কারও কারও মদতে রেশন ডিলার চাল পাচারের সুযোগ পেয়েছেন।’’

বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান যদিও এই অভিযোগকে ‘গালগল্প’ বলে দাবি করেছেন। তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘এ সব নিয়ে অসভ্যতা করা হচ্ছে। প্রথমে জানতাম না। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, বিনামূল্যে পাওয়া রেশন দোকানের চাল কিছু উপভোক্তা মুদির দোকানে বিক্রি করেন। সে চাল বাজারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল। রেশনের দোকানে ও গুদামে সিসি ক্যামেরা রয়েছে। পরীক্ষা করলেই তো হয়!”

পুলিশ মামলা রুজু করার পাশাপাশি তারাও ঘটনার তদন্ত করছে বলে মহকুমা খাদ্য দফতর (বর্ধমান সদর) সূত্রে জানা গিয়েছে।

অন্য বিষয়গুলি:

Smuggling Fraud Ration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy