কাটোয়ার ঘাট। নিজস্ব চিত্র
এ যেন ছিল বেড়াল, হয়ে গেল বাঘ। তিন বছর আগে কাটোয়া পুরসভার অধীনে থাকা কাটোয়া-বল্লভপাড়া ফেরিঘাটের ইজারার জন্য নিলামে ডাক উঠেছিল ৭৭ লক্ষ টাকা। মেয়াদ শেষে মঙ্গলবার পুরসভায় ফের ডাকের ব্যবস্থা হয়। পুরনো ইজারাদার ফের ঘাট চালানোর দায়িত্ব পেলেন। তবে এ বার ডাক উঠল ৬ কোটি ১৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা।
এক ধাক্কায় ঘাটের ডাক এত টাকা ওঠা নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে শহরে। নিলামে অংশগ্রহণকারীরা এত টাকা হাঁকলেন কেন, এর জেরে যাত্রীদের ঘাড়ে বাড়তি ভাড়া চাপানো হবে কি না, ধন্দ দেখা দিয়েছে এলাকাবাসীর মধ্যে।
এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ পুরসভায় ফেরিঘাটের ডাক শুরু হয়। ছিলেন প্রশাসক রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়, প্রশাসকমণ্ডলীর সদস্য অমর রাম, কার্যনিবাহী আধিকারিক তাপস ভট্টাচার্য-সহ পুরসভার প্রতিনিধিরা। পুরসভা সূত্রে জানা যায়, এ দিন নিলাম শুরু হতেই পুরনো ইজারাদার অশোক সরকারের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে দর হাঁকতে থাকেন পাঁচুগোপাল রায় নামে এক ব্যক্তি। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ ডাক আড়াই কোটি টাকা পেরোয়। বেলা যত গড়ায়, ততই দর পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে। দুপুর ২টো নাগাদ ৪ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যায়। দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় প্রশাসকের প্রস্তাবে দু’লক্ষ করে দর বাড়ানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতেও সমাধান হচ্ছে না দেখে ৫ লক্ষ করে দর বাড়ানো হতে থাকে। পাঁচুগোপালবাবু ৬ কোটি ৯ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পর্যন্ত ওঠেন। আরও ৫ লক্ষ টাকা বেশি ডাক দিয়ে ইজারা পান অশোকবাবু।
পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে, এই ফেরিঘাট দিয়ে কাটোয়া ও নদিয়ার মধ্যে যাতায়াত করেন বহু মানুষ। সকাল ৬টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত ঘাট খোলা থাকে। জরুরি ভিত্তিতে রাতেও নৌকা চালানো হয়। ঘাট সূত্রে জানা যায়, দিনে গড়ে দুই জেলার প্রায় সাড়ে পাঁচ হাজার মানুষ ও শ’দেড়েক যানবাহন পারাপার হয় নৌকা ও ভেসেলের মাধ্যমে। ৩০ জন মাঝি এবং ১৪ জন কর্মী সারা বছর কাজ করেন।
কাটোয়ার কোশিগ্রাম ফুলবাগানের বাসিন্দা পাঁচুগোপালবাবু এ দিন নিলাম শেষে দাবি করেন, ‘‘বল্লভপাড়া ফেরিঘাট দিয়ে প্রতিদিন প্রায় ২০ হাজার লোক যাতায়াত করেন। বালির গাড়ি-সহ নানা ভারী যানবাহন পারাপার লেগে থাকে। গাড়ির মালিক ও যাত্রীদের কাছে নানা অজুহাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হয়। হাতে ব্যাগ থাকলেও ভাড়া নেওয়া হয়। আমার হিসেবে, সব মিলিয়ে প্রতিদিন প্রায় ১ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা আদায় হয়। তাই আমি ডাকে ৬ কোটি ৯ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠেছিলাম।’’
যদিও অশোকবাবুর দাবি, ‘‘আমরা প্রায় ২৫ বছর ধরে ঘাট চালাচ্ছি। সম্মানের প্রশ্নেই এত টাকায় ঘাটের দায়িত্ব নিয়েছি। তাতে বহু টাকা লোকসান হবে। কিন্তু ঘাট ছেড়ে দিলে কর্মীরা বেকার হয়ে যাবেন, তা ভাবতে হয়েছে। অন্য ব্যবসা থেকে লোকসান মেটাতে হবে। তবে যাত্রীদের উপরে অতিরিক্ত ভাড়া চাপানো হবে না। সরকারি নিয়মে অন্য ফেরিঘাটে যা ভাড়ার তালিকা, সেটাই মেনে চলা হবে।’’ এর আগে ঘাট চালিয়ে কত আয় হত, তা নির্দিষ্ট ভাবে জানাতে চাননি তিনি। তাঁর দাবি, সমস্ত খরচ মিটিয়ে কিছু লাভ থাকত। ফেরিঘাটের কর্মী সঞ্জীব সূত্রধর, তারক সাহাদেরও বক্তব্য, ‘‘করোনা পরিস্থিতিতে যাত্রী-সংখ্যা অর্ধেকের কম। এত টাকা দিয়ে ঘাট চালানোর দায়িত্ব নেওয়ায় মালিকপক্ষের ক্ষতি হবে বলে মনে হচ্ছে আমাদের।’’
পুরসভার প্রশাসক রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, ‘‘গত তিন বছরের জন্য ৭৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা ডাক উঠেছিল। প্রতিবারই দর বাড়ে। এ বারও বাড়বেই ভেবেছিলাম। কিন্তু একেবারে ৬ কোটি টাকার বেশি ডাক উঠেছে। আর্থিক ভাবে পুরসভার পক্ষে তা ভাল। ইজারাদারদের বলা হয়েছে, বেশি ভাড়া নিলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy