Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
jamalpur

প্রায়ই উল্টে যায় ‘দোতলা’ গাড়ি

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “খাদানের রাস্তা চওড়া করা, ট্রাকে অতিরিক্ত বালি বোঝাই না করা ও মদ্যপান করে চালকেরা যাতে গাড়ি না চালান, সেটা দেখতে বলা হয়েছে।’’

(বাঁদিকে)উপরে, তখনও উল্টে ট্রাক।(ডানদিকে) নীচে, পুড়েছে খাদান। নিজস্ব চিত্র।

(বাঁদিকে)উপরে, তখনও উল্টে ট্রাক।(ডানদিকে) নীচে, পুড়েছে খাদান। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
জামালপুর শেষ আপডেট: ০৭ নভেম্বর ২০২০ ০২:০০
Share: Save:

মুণ্ডেশ্বরীর উৎপত্তিস্থল বেগোহানা থেকে হুগলির পুটশুড়ি-চাঁপাডাঙা পর্যন্ত চলে গিয়েছে রাস্তাটি। এক দিকে দামোদর। আর এক পাশে ৩৫-৪০ বছর ধরে গড়ে ওঠা বসতি। ওই রাস্তা দিয়েই গত তিন বছর ধরে ছুটছে মুণ্ডেশ্বরী খাদানের বালির গাড়ি। স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, গাড়ি গেলেই ঘরবাড়ি কাঁপে। মাত্রাতিরিক্ত বালি নিয়ে যেতে গিয়ে প্রায়ই টাল খায় ট্রাকগুলি। মাঝেমধ্যে ট্রাক আটকে ক্ষোভ-বিক্ষোভও হয়। কিন্তু জামালপুরের মুইদিপুরে তিন জনের মৃত্যু ভয় ধরিয়ে দিয়েছে তাঁদের।

গ্রামবাসীর একাংশ বৈধ খাদানটি বন্ধের দাবি করেছেন। আবার একাংশের দাবি, ওই খাদান, রাস্তায় কাজ করেই তাঁদের পেট চলে। মত্ত অবস্থায় ট্রাক চালানো ও গ্রামীণ রাস্তায় যাতায়াতে নিয়ন্ত্রণের দাবি করেছেন তাঁরা। স্থানীয় লোকজনের দাবি, আগেও কয়েকবার বালিবোঝাই ট্রাক রাস্তার পাশে উল্টে গিয়েছে। কোড়া গ্রামের এক জন বালির ট্রাকের ধাক্কায় মারা যান। কয়েকদিন আগে, ‘ওভারলোডিং’ বন্ধ করার দাবিতে টানা দু’দিন ধরে বালির ট্রাক আটকে রেখেছিলেন কোড়া গ্রামের বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, অতিরিক্ত বালি থাকায় গাড়িগুলি প্রায়ই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার ধারে পড়ে যায়।

উজিরপুরের আনন্দ বাইচের বাড়িতেও বালির ট্রাক ধাক্কা মেরে উল্টে গিয়েছিল। তাঁর ছেলে গোবিন্দ বাইচের কথায়, “আমাদের বাড়ি বালিতে ঢেকে গিয়েছিল। মুইদিপুরের মতো অবস্থা আমাদেরও হতে পারত। ভাগ্যিস বাড়িতে কেউ ছিল না।’’ তাঁরা জানান, মুইদিপুরের সরকারডাঙা, নসরৎপুর মাঠেও বালিবোঝাই গাড়ি উল্টে গিয়েছে একাধিক বার। এলাকাবাসীর দাবি, এক-একটি ট্রাকের যা উচ্চতা, তার চেয়েও কিছুটা বাড়িয়ে বালি ভর্তি করা হয়। দেখলে মনে হবে, ‘দোতলা’ ট্রাক। গ্রামের বাসিন্দা তপন পোড়েল, দীপক সাহা, গোপি বাউরি, চন্দন মান্নাদের কথায়, “এই রাস্তা দিয়ে আশপাশের গ্রামের প্রায় পাঁচশো পড়ুয়া অমরপুরের দু’টি স্কুলে পড়তে যায়। টিউশনে যায়। বালির ট্রাক নিয়ে আমরা চিন্তায় থাকি।’’ রাস্তার ধারে বাড়ি তন্দ্রা বাউরি, বঙ্কা বাউরিদের। তাঁদের দাবি, “রাতে বালির ট্রাক গেলে বাড়ি-ঘর কাঁপে। এত জোরে যায় বাচ্চাদের ঘুম ভেঙে যায়।’’

মুণ্ডেশ্বরীর ওই খাদানে মুইদিপুর, উজিরপুর, নসরৎপুর গ্রামের প্রচুর যুবক কাজ করেন। তাঁদের মূল কাজ, খাদান থেকে খেতজমির মাঝ বরাবার চরের রাস্তা ঠিক করা, যাতে বালিবোঝাই গাড়ি চলাচলে অসুবিধা না হয়। ওই সব পরিবারের কথায়, “ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। কিন্তু একটা দুর্ঘটনার জন্য খাদান বন্ধ হয়ে গেলে পেট চলবে কী ভাবে?’’ তাঁদের দাবি, খাদান বন্ধ না করে বালি বোঝাইয়ে নজর দেওয়া হোক। মত্ত অবস্থায় গাড়ি চালানো নিয়ে নজরদারি চলুক। এলাকার বাসিন্দা সুনন্দা বাউরির কথায়, ‘‘গরিবের কষ্ট কেউ বোঝে না। খাদান না থাকলে সংসারে টান। আবার বালির গাড়ি চললে প্রাণের ভয়।’’

মন্ত্রী স্বপন দেবনাথ বলেন, “খাদানের রাস্তা চওড়া করা, ট্রাকে অতিরিক্ত বালি বোঝাই না করা ও মদ্যপান করে চালকেরা যাতে গাড়ি না চালান, সেটা দেখতে বলা হয়েছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Jamalpur truck Overloaded
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy